পালায়ম জুমা মসজিদ

ভারতের মসজিদ

মসজিদ-ই জাহান-নুমা (বিশ্বচিন্তা মসজিদ) সাধারণত পালায়ম পল্লী হিসেবে পরিচিত হলো ভারতের কেরল রাজ্যের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের প্রধান মসজিদ। এটি একটি জামে মসজিদ (যেখানে মুসলিমদের জুমার নামাজ পড়ানো হয়)।

জুমা মসজিদ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিসুন্নি, হানাফি
জেলাতিরুবনন্তপুরম
যাজকীয় বা
সাংগঠনিক অবস্থা
মসজিদ
অবস্থান
অবস্থানপালায়ম, তিরুবনন্তপুরম, ভারত
এলাকাকেরল
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীইসলামি
বিনির্দেশ
ধারণক্ষমতা২০০০
দৈর্ঘ্যমিটার
প্রস্থমিটার
মিনারের উচ্চতামিটার
মোচাকার চূড়ার উচ্চতা০০০ মিটার

তিরুবনন্তপুরমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হলো পালায়ম জামে মসজিদ। পালায়মে মসজিদটির সন্নিকটে একটি মন্দির ও খ্রিষ্টানদের একটি গির্জা অবস্থিত। যা কেরালা অধিবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠা করেছে। [১]

চন্দ্রশেখরান নাইর স্টেডিয়াম হতে পালায়ম জুমা মসজিদ এবং সেন্ট জোসেফ গির্জা।

ইতিহাস সম্পাদনা

তিরুবনন্তপুরমের পালায়ম মসজিদের ইতিহাস শুরু হয় ১৮১৩ সালে, যখন ব্রিটিশ ভারতীয় দ্বিতীয় রেজিমেন্ট সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তীতে সেখানে ইদের নামাজ পড়ার উপযোগী উন্মুক্ত জায়গাসহ একটি ছোট মসজিদ (পাতালাপ্পাল্লি) নির্মাণ করা হয়। ১৮২৪ সালে এখানে ষষ্ঠ রেজিমেন্টকে মোতায়েন করা হলে, তারা জমিটি কিনে নেয় এবং লাব্বা পরিবার হতে একজন কাজী নিয়োগ দেন। নিয়োগটি লাব্বা পরিবারের শেখ মনসুর লাব্বাতে শেষ হয় এবং তিনি মসজিদের মুয়াযযিনকে মসজিদের সকল কাগজ বুঝিয়ে দেন। ১৮৪৮ সালে যখন ষষ্ঠদশ রেজিমেন্ট সেখানে মোতায়েন হয়, তাদের জমাদার আর হাবিলদাররা মসজিদের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্পন্ন করেন। তারা মসজিদের একটি তোরণ নির্মাণ করেন এবং মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য রেজিমেন্ট যখন এখানে আসে, তাদের অফিসাররাও মসজিদটির আরও পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উন্নয়ন সাধন করেন। তাই মসজিদটির বয়স ২০০ বছরের কাছাকাছি।

পরবর্তীতে ১৯৬০ এর দশকে ত্রিভানদ্রুমের অনেক জনদরদি ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা কাজি ও মৌলভি শেখ আবুল হাসান আলি আল-নুরির নেতৃত্বে বর্তমান পালায়ম জুমা মসজিদটির নানামুখি সংস্কার ও নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেন। ১৯৬৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি জাকির হুসেইন পালায়ম জুমা মসজিদ উদ্বোধন করেন। মুক্তিযোদ্ধা, বহুভাষাবিদ পন্ডিত শেখ আবুল হাসান আল-নুরি (১৯২১-২০১১) ছিলেন পালায়ম জুমা মসজিদের প্রথম ইমাম এবং তিনি এখানে ইমাম হিসেবে প্রায় দুই দশকের (১৯৫৯-১৯৭৯) কর্মজীবনে পালায়ম জুমা মসজিদকে একটি ছোট মসজিদ (পাতালাপ্পাল্লি) থেকে বর্তমান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন।

প্রথম ইমাম সম্পাদনা

শেখ আবুল হাসান আল নুরি ছিলেন পালায়ম জুমা মসজিদের প্রথম ইমাম। তিনি ১৯২১ সালে তামিলনাড়ুর থেনকাসিতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি শেখ মনসুর লাব্বার স্থলাভিষিক্ত হন যিনি ৪৬ বছর ধরে হানাফি ইমাম হিসেবে মসজিদটিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিদ্যালয় শেষ করেন রাজাপালায়ম হতে এবং স্নাতক অর্জন করেন তেনজাভুর হতে। স্নাতকোত্তর লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে তিনি বার্মায় পাড়ি জমান এবং সেখানকার রেঙ্গুন শহরে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি নয়টি ভাষাতে দক্ষ ছিলেন। ভাষাগুলো হলো আরবি, উর্দু, ফার্সি, মালয় এবং বর্মী। ১৯৪২ সালে তিনি উত্তর প্রদেশ ও দিল্লীতে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৫২ সালে তিনি থেনকাসিতে একটি মসজিদের ইমাম নিযুক্ত হন। ১৯৫৯ এর পর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে তিনি পালায়ম জুমা মসজিদের ইমাম ও কাজি ছিলেন। তিনি বেশ কিছু বই লিখেন। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা, সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষক। তিনি সংস্কারবাদি মানসিকতাকে ধারণ করতেন, নারী শিক্ষার পক্ষে কাজ করতেন, যৌতুক প্রথার বিরোধী ছিলেন এবং সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে উৎসাহ দিতেন। ১৯৭০ সালে তার অধীনে 'দারুল আমান' নামক একটি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Palayam Juma Masjid"। tvmonnet.com। ৮ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০০৯