পালম কল্যাণসুন্দরম

ভারতীয় সমাজকর্মী

পালম কল্যাণসুন্দরম (তামিল: பாலம் கல்யாணசுந்தரம்) (জন্ম- আগস্ট, ১৯৫৩) একজন তামিল সমাজকর্মী, যিনি তার কর্মজীবনের সমস্ত বেতন ও পেনশন দরিদ্র মানুষদের উন্নতির জন্য দান করার জন্য বিখ্যাত।[১][২]

পালম কল্যাণসুন্দরম

প্রথম জীবন সম্পাদনা

পালম কল্যাণসুন্দরম ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলবেলী জেলায় অবস্থিত মেলকরুবেলঙ্গুলম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র এক বছর বয়সেই তিনি তার পিতাকে হারান। বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ সম্পূর্ণ করার পর তিনি তামিল ভাষা নিয়ে স্নাতক স্তরে শিক্ষালাভ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তিরুনেলবেলী শহরের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অন্য কোন তামিল শিক্ষার্থী না থাকায় তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ অন্য বিষয় সম্বন্ধে স্নাতক হওয়ার উপদেশ দেন। কিন্তু তামিল সম্বন্ধে স্নাতক হওয়ার ইচ্ছেয় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পালম এই উপদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। পালমের নিষ্ঠা লক্ষ্য করে এমটিটি হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কারুমুত্তু থ্যগারাজা চেট্টিয়ার তাকে নিজের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে তার পঠনপাঠনের খরচের ভার নেন।[৩][৪] এরপর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।[১] এছাড়া সাহিত্য ও ইতিহাসেও তিনি স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন।[১]

সমাজসেবা সম্পাদনা

মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহ্‌রুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য নিজের সোনার হার দান করে দেন। এরপর তিনি পরবর্তী ৩৫ বছর তুতিকোরিন শহরে কুমারকরূপ আর্টস কলেজে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি তার সমস্ত বেতন, তার পূর্বপুরুষের সম্পত্তি ও অবসরের পর সমস্ত অনাথ শিশু ও দরিদ্র মানুষদের জন্য দান করে দেন।[৩] অবসর গ্রহোণের পর তিনি পালম নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে দরিদ্রদের শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়ে থেকে এবং কর্মহীন, বয়স্ক, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। তামিল নাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশউড়িষ্যার সাইক্লোন বিধ্বস্ত এলাকায় এবং গুজরাতমহারাষ্ট্রের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় এই সংগঠন ত্রাণকার্য্য চালিয়েছে।[১][৩]

সম্মাননা সম্পাদনা

ভারত সরকার পালম কল্যাণসুন্দরকে ভারতের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগারিকের সম্মান দিয়েছে। তাকে বিশ্বের প্রথম দশ জন গ্রন্থাগারিকের মধ্যেও গণ্য করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘ তাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তি রূপে চিহ্নিত করেছে।[৫] কেম্ব্রিজের ইটারন্যাশনাল বায়োগ্রাফিকাল সেন্টার তাকে বিশ্বের অন্যতম উন্নতমনস্ক ব্যক্তি এবং ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দের সেরা মানুষ বলে গণ্য করেছে। এই সম্মানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রাপ্ত ৩০ কোটি টাকার সমস্ত তিনি দরিদ্র মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেন।[১][২][৫][৬] ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে রোটারি ক্লাব তাকে সারা জীবনের সেবার জন্য পুরস্কার প্রদান করেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Parameswaran, Prathiba (২২ আগস্ট ২০০৪)। "Practising what he preaches"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  2. "Kalyanasundaram – Man of the Millenium"I see India। এপ্রিল ২৫, ২০১৩। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  3. Nair, Sashi (২৩ এপ্রিল ২০০৩)। "Simple living, high thinking"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  4. Das, Juri Moni (নভেম্বর ১৪, ২০১৪)। "Unbelievable story of Palam Kalyanasundaram, the librarian who redefined the Charity theory"Acchi Khabre। ৩ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  5. Menon, Valsala (ডিসেম্বর ৩, ২০১৩)। "73-year-old Tamil Nadu librarian donated Rs 30 crore to the uneducated poor"DNA India। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  6. Pareek, Shreya (২০ আগস্ট ২০১৪)। "The 73-Year Old Librarian Who Has Been Donating Every Rupee He Earned To The Poor For 30 Years!"The better India। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫