পাম দ্বীপ সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর দুবাইয়ে অবস্থিত ৩টি কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাহ,পাম দেইরা ও পাম জেবেল আলির সমষ্টি। ২০০১ সালে এই দ্বীপের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে শুধুমাত্র পাম জুমেইরাহর কাজ সম্পন্ন হয়। এই দ্বীপটি পাম গাছের আকৃতি ধারণ করে।

কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর,পাম জেবেল আলিও একই আকৃতি ধারণ করবে। পাম জুমেইরাহর মতো প্রতিটি দ্বীপেই বিশাল সংখ্যক বাসস্থান,অবসরকেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্র থাকবে এবং দুবাই শহরের সাথে সমুদ্রসৈকত যুক্ত করবে।

পাম জুমেইরাহ  সম্পাদনা

 
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পাম জুমেইরাহ দ্বীপ

পাম জুমেইরাহ পাম গাছের আকৃতির দ্বীপ যা ১৬টি পাতা বিশিষ্ট। দ্বীপটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই দ্বীপটি দুবাই উপকূলরেখায় ৭৮ কিলোমিটার সংযুক্ত করে।

কাজ শুরুর ৫ বছর পর, বাসিন্দারা ২০০৬ সালের শেষ থেকে, পাম জুমেইরাহতে যেতে শুরু করে।

২০০৯ সালে পাম জুমেইরাহ মনোরেল চালু করা হয় যা, দুবাই ট্রামের স্টেশন ৯ এর সাথে সংযুক্ত।

পাম জুমেইরাহতে আটলান্টিস, দি পাম হোটেল রিসোর্ট অবস্থিত।[১]

পাম জেবেল আলি সম্পাদনা

 
পাম জেবেল আলি

২০০০ সালের অক্টোবরে পাম জেবেল আলির কাজ শুরু হয়, যা ২০০৮ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বর্তমানে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। পাম জেবেল আলি, পাম জুমেইরাহর চেয়ে বড় হওয়ার কথা থাকলেও, তা কখনো সম্পূর্ণ হয়নি।[২]

পরিবেশগত সতর্কতা সম্পাদনা

দুবাই পাম দ্বীপ বিভিন্ন দিক থেকে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, এলাকার জীববৈচিত্র্য পরিবর্তিত হওয়া, সৈকত ভূমি ভাঙন, সামুদ্রিক ঢেউয়ের পরিবর্তন প্রভৃতি। দ্বীপগুলোর ফলে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ের পরিমাণও পরিবর্তিত হয়েছে। এছাড়াও, পারস্য উপসাগর-এর ঢেউ নতুুন বাধাগুলোয় (পাম দ্বীপ) বাধাগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপের চারদিকে ঘুরতে থাকে।[৩]

দুবাই'র মেগাপ্রজেক্টটি এখন পরিবেশবিদদের আলোচনার মুখ‍্য বিষয় হয়ে উঠেছে। গ্রিনপিস সংস্থা ধারণক্ষমতার অভাবের জন্য পাম দ্বীপের সমালোচনা করেছে এবং mongabay.com নামক রেইন ফরেস্ট বিষয়ক ওয়েবসাইট দুবাইয়ের কৃত্রিম দ্বীপের কঠোর সমালোচনা করেছে ও কঠোরভাবে আক্রমণ করেছে।[৪]

গঠনগত গুরুত্ব সম্পাদনা

পাম জুমেইরাহ সম্পূর্ণভাবে বালু ও পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে (কোনো কংক্রিট ও স্টিল ব‍্যবহার করা হয়নি)। এই কাজ করা হয়েছিল, দুবাইয়ের শাসকের আদেশে যিনি সর্বপ্রথম এই পাম দ্বীপের ধারণা ও নকশা প্রণয়ন করেছিলেন।[৫]

দ্বীপ তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ সম্পাদনা

  • ৫.৫ মিলিয়ন (৫৫ লক্ষ) ঘনমিটার পাথর যা দুবাইয়ের ১৬টি স্থান থেকে আনা হয়
  • ৯৪‌ মিলিয়ন (৯ কোটি ৪০ লক্ষ) ঘনমিটার বালু যা দুবাইয়ের সমুদ্রতীরের ৬ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমার মধ্য থেকে আনা হয়েছে।[৬]
  • ২১০‌ মিলিয়ন (২১ কোটি) ঘনমিটার পাথর,বালু,চুনাপাথর।

প্রধান সীমাবদ্ধতা সম্পাদনা

দ্বীপটি তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধ‍্যবাধকতা ছিল যে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে আনুমানিক সময় (৪ বছর)‌ ছিল খুবই লম্বা। দ্বীপের উপরে নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পূর্ণ করতে তাই ২টি শিফটে ৪০,০০০ শ্রমিক নিয়োগ করা হয় (প্রতিটি শিফট ছিল ১২ ঘণ্টার)।

প্রকল্পটির ঝুঁকি ও হুমকি সম্পাদনা

  • ২ মিটার উঁচু ঢেউ
  • বছরে ১টি ঝড়ের আশঙ্কা
  • বর্ধনশীল সামুদ্রিক উচ্চতার কারণে দুর্বল মাটির আশঙ্কা[৭]
  • পানি দূষণ

লুক্কায়িত সমস্যা সম্পাদনা

  • ভূমিক্ষয় বা ভাঙন (যা সাধারণত বাতাস ও পানির স্রোতে হয়)‌ বর্তমানে একটি বড় সমস্যা,যা দ্বীপটির বালুকে ধুয়ে নিয়ে যেতে পারে।
  • সামুদ্রিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া-দ্বীপটি তৈরির ফলে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতির মাছ যারা দুবাইয়ের সমুদ্রসৈকতের তীরে বসবাস করত, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গবেষকরা বলছেন, নতুন জন্মানো মাছগুলো দ্বীপটির নির্মাণকাজের সময় বালু উত্তোলন, কম্পনের ফলে বাঁচতে না পেরে মারা যায়।
  • দুবাইয়ের সমুদ্রতীরে দ্বীপটির পামের মতো আকৃতির জন্য, দুবাইয়ের সমুদ্রতীরের আকৃতি নষ্ট হয়ে যাবে।[৮]

দ্বীপ তৈরির পরবর্তী বাধা সম্পাদনা

দ্বীপ তৈরির পর বিভিন্ন উপকরণ,সেবা ও পাইপলাইন প্রবেশ করানো ছিল খুবই কঠিন ও পরিশ্রমসাধ‍্য কাজ।[৯]

ঝুঁকি প্রশমন সম্পাদনা

সমুদ্র স্রোত থেকে দ্বীপটিকে বাঁচাতে, দ্বীপটির চারদিকে ব্রেকওয়াটার (পানি থেকে রক্ষার বাঁধ) তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো ছিল ৩ মিটার উঁচু ও দৈর্ঘ্যে ১৬০ কিলোমিটার। এছাড়াও, দ্বীপটির আকৃতি বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থার সাহায্যে সর্বদা পরিমাপ করা হচ্ছিল (স্যাটেলাইটটি ছিল সমুদ্রসীমা থেকে ৬৭৬ কিলোমিটার উপরে)। দ্বীপের উপরে "রেইনবোয়িং" নামক প্রক্রিয়ার সাহায্যে বালু ছড়ানো হয়েছিল।[১০] এখানে, বালু ছড়ানো হয়েছিল সমুদ্রে অবস্থিত জাহাজের সাহায্য নিয়ে। দ্বীপটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যেন বাঁধ ও দ্বীপের মাঝে কোনো বদ্ধ পানি না থাকে। এই কাজ করার জন্য সামান্য গঠনগত কাজও করতে হয়েছিল বাঁধটিতে, যার ফলে দ্বীপের কোনো ক্ষতি না করেই সমুদ্রের পানি চলাচল করতে পারে। দ্বীপ থেকে বালুর ক্ষয় এড়াতে, নিয়মিত দ্বীপটির তীরে ও দুবাই তীরে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়। প্রকৃতির নিজের সহায়তায়ই,উপকূলের ভারসাম্য ফিরে এসেছিল। এই পরিবর্তন নতুন প্রজাতির মাছ ও নতুন ধরনের প্রবাল প্রাচীরকে আকর্ষণ করতে শুরু করে। প্রতি ৬ সপ্তাহে, সামুদ্রিক ডুবুরিরা পানির নিচে সামুদ্রিক জীবনের অবস্থা পরীক্ষা করতে যান।

গঠনগত প্রভাব ও প্রতিবিম্ব সম্পাদনা

পাম দ্বীপ তৈরির জন্য দুবাইয়ের সমুদ্রতীরে বড় ধরনের পরিবেশগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়: এলাকার জলজ পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমন  সমুদ্রতীরে ভূমিক্ষয়ও হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের ধরনও বিশালভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, পাথুরে দেয়ালগুলো তৈরির জন্য। ঢেউ তীরে আঘাত না করে, বরং অস্বাভাবিকভাবে নতুন বাধাগুলোর চারপাশে ঘুরতে থাকে যা উপকূলের মাটি দুর্বল করে ফেলছে।[১১]

সবচেয়ে বেশি পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছিল নির্মাণকাজে ব‍্যবহৃত পলির কারণে। এর ফলে, সমুদ্রের নিচে অবস্থিত উদ্ভিদগুলো কম সূর্যালোক পেতে শুরু করে।[১২] এধরনের নেতিবাচক প্রভাব, অনেক পরিবেশবাদী সংগঠনকে (যেমন- গ্রিনপিস,mongabay.com) ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা কঠোরভাবে এই দ্বীপ তৈরির সমালোচনা করে।

বিশ্ব বন‍্যপ্রাণী ফান্ড ২০০৬ সালে ঘোষণা করে যে,"সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষের চাপ পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানে সবচেয়ে বেশি" (সামারাই ২০০৭)। এই সংস্থা আরো উল্লেখ করেছে যে প্রকল্পটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই পরিবেশে দৃশ্যমান বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে যা ভবিষ্যতে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।[১৩]

ছবির সংগ্রহ সম্পাদনা

ভৌগোলিক অবস্থান সম্পাদনা

নিম্নে দ্বীপটির বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করা হলো:

তথ‍্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ""YouTube - The Palm Island, Dubai UAE - Megastructure Development"" 
  2. ""The Palm Jebel Ali (Palm Islands, Dubai) - Property Development""। ২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. ""Environmental Impacts of Palm Islands""। ১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. ""Dubai's artificial islands have high environmental cost"" 
  5. ""Dubai Palm Island | HQ Travel Guide"" 
  6. ""Construction of the Islands - The Impact of the Palm Islands, United Arab Emirates""। ৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. ""HowStuffWorks "Palm Island Construction""" 
  8. ""The World is sinking: Dubai islands 'falling into the sea' - Telegraph"" 
  9. ""Palm Island Dubai – Palm Tree Island Megastructure Construction""। ২৮ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. ""Palm Islands, Dubai — 8th Wonder Of The World | Prime Arena""। Archived from the original on ২২ জুলাই ২০১৩। 
  11. ""Will the Gulf's manmade islands sink into the sea? - Your Middle East""। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. Bayyinah, Salahuddin। ""The Marine Environmental Impacts of Artificial Island Construction Dubai, UAE"" (পিডিএফ) 
  13. ""Environmental Impacts - The Impact of the Palm Islands, United Arab Emirates""। ১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।