পাবনা-শ্রেণীর রিভারাইন প্যাট্রোল ভেসেল

পাবনা-শ্রেণীর রিভারাইন প্যাট্রোল ভেসেল হলো বাংলাদেশে নির্মিত দ্রুতগতির টহল নৌযানের শ্রেণী যা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। উক্ত নৌযানসমূহ চায়না শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন এর প্রযুক্তিগত সহায়তায় ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড কর্তৃক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি নৌযান সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান রোধ, জলদস্যুতা দমন, সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান, সুনীল অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও জাহাজগুলি দুর্যোগ কালীন সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২]

শ্রেণি'র সারাংশ
নাম: পাবনা-শ্রেণীর রিভারাইন প্যাট্রোল ভেসেল
নির্মাতা: ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড
ব্যবহারকারী:  বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড
নির্মাণ: ৫টি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার: রিভারাইন প্যাট্রোল ভেসেল (আরপিভি)
ওজন: ২৩৫ টন
দৈর্ঘ্য: ৪৩.৪০ মিটার (১৪২.৪ ফু)
প্রস্থ: ৬.৪০ মিটার (২১.০ ফু)
ড্রাফট: ১.৯০ মিটার (৬.২ ফু)
গভীরতা: ৪.১০ মিটার (১৩.৫ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × ৩,০১০ অশ্বশক্তি (২,২৪০ কিওয়াট) (১,৮০০ আরপিএম) বিশিষ্ট ডুয়েটজ টিবিডি ৬২০ভি ১৬ ডিজেল ইঞ্জিন (জার্মানি);
  • ২ × সিসিএফ১২০জে-কেসি ১২০ কিলোওয়াট (১,৫০০ আরপিএম) ক্ষমতাসম্পন্ন কামিন্স জেনারেটর (গণচীন);
  • ২ × জেডএফ ৭৬০০ ট্রান্সমিশন (জার্মানি);
  • ২ × ফিক্সড পিটচ প্রোপেলার;
  • ২ × শ্যাফট
গতিবেগ: ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ)
সীমা: ১,৫০০ নটিক্যাল মাইল (২,৮০০ কিমি; ১,৭০০ মা)
সহনশীলতা: ৭ দিন
নৌকা ও অবতরণ
নৈপুণ্য বহন করে:
১টি
লোকবল: ৩০ জন
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • ১ × ফুরুনো ডিআরএস৪ডব্লিউ র‍্যাডার (জাপান);
  • ১ × ফুরুনো এফএআর-৩৩২০ চার্ট র‍্যাডার (জাপান);
  • ১ × হাল মাউনন্টেড মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × হাল মাউনন্টেড সিঙ্গেল-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × ডিজিপিএস রিসিভার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × সাউন্ড ভেলোসিটি প্রোফাইলার (যুক্তরাজ্য);
  • ১ × জেআরসি জেএমএ-৩৩০০ মাল্টিরোল ডিসপ্লে সহ নেভিগেশন র‍্যাডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × ডাইকো টি-১৩০এসএল; স্টেইনার নেভিগেটর প্রো ৭×৫০ চৌম্বকীয় কম্পাস (জাপান);
  • ১ × ফুরুনো জিপি-১৭০ জিপিএস রিসিভার;
  • ১ × ইকো সাউন্ডার (কোডেন সিভিএস-১২৬);
  • ১ × রাডার অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর;
  • ১ × আইকম আইসি-এম৫০৬ ভিএইচএফ সেট;
  • ১ × আইকম আইসি-এম২৫ পোর্টেবল ভিএইচএফ;
  • ৫ × ভিএইচএফ ওয়াকিটকি সেট (আইকম/মটোরোলা)
রণসজ্জা:
  • ১ × টুইন ব্যারেল জেডউ-২৩ ২৩ মিমি বিমান-বিধ্বংসী নেভাল গান;
  • ২ × টাইপ ৫৬ ১২.৭ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান
টীকা: ১ × এফার ২২০এম ডেক ক্রেন (ইতালি)

ইতিহাস সম্পাদনা

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় উৎস থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড নৌযান নির্মানের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ এপ্রিল, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ২টি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এর মধ্যেকার জাহাজ নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সম্পাদিত চুক্তির অংশ হিসেবে বিসিজিএস সোনাদিয়া এবং বিসিজিএস কুতুবদিয়া জাহাজ দুটি নির্মিত হয়। জাহাজটি নির্মাণকালে চায়না ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি (সিসিএস) এর নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানে কিল লেয়িং এর মাধ্যমে নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি মহোদয়ের উপস্থিতিতে জাহাজটির লঞ্চিং অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ১ আগস্ট, ২০১৮ সালে ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড কর্তৃক নির্মাণকৃত ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজটি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। অবশেষে ১৫ নভেম্বর, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের (বিসিজি) ২টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল, ৫টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, ২টি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট এবং ভোলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ঘাঁটিঁর কমিশনিং সম্পন্ন করেন।

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো সম্পাদনা

সোনাদিয়া-শ্রেণীর ফাস্ট প্যাট্রোল বোটের দৈর্ঘ্য ৪৩.৪০ মিটার (১৪২.৪ ফু), প্রস্হ ৬.৪০ মিটার (২১.০ ফু) এবং গভীরতা ৪.১০ মিটার (১৩.৫ ফু)। নৌযানটির ওজন ২৩৫ টন এবং প্রচলন শক্তি হিসেবে রয়েছে:

  • ২টি ৩,০১০ অশ্বশক্তি (২,২৪০ কিওয়াট) (১৮০০ আরপিএম) বিশিষ্ট ডুয়েটজ টিবিডি ৬২০ভি ১৬ ডিজেল ইঞ্জিন (জার্মানি);
  • ২টি সিসিএফ১২০জে-কেসি ১২০ কিলোওয়াট (১,৫০০ আরপিএম) ক্ষমতাসম্পন্ন কামিন্স জেনারেটর (গণচীন);
  • ২টি জেডএফ ৭৬০০ ট্রান্সমিশন (জার্মানি);
  • ২টি ফিক্সড পিটচ প্রোপেলার;
  • ২টি শ্যাফট।

যার ফলে নৌযানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ)। এছাড়াও উক্ত নৌযানসমূহ ৩০ জন সদস্য নিয়ে একনাগাড়ে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। সেন্সর এবং কার্যপদ্ধতি হিসেবে রয়েছে:

  • ১টি ফুরুনো ডিআরএস৪ডব্লিউ র‍্যাডার (জাপান);
  • ১টি ফুরুনো এফএআর-৩৩২০ চার্ট র‍্যাডার (জাপান);
  • ১টি হাল মাউনন্টেড মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি হাল মাউনন্টেড সিঙ্গেল-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি ডিজিপিএস রিসিভার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি সাউন্ড ভেলোসিটি প্রোফাইলার (যুক্তরাজ্য);
  • ১টি জেআরসি জেএমএ-৩৩০০ মাল্টিরোল ডিসপ্লে সহ নেভিগেশন র‍্যাডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি চৌম্বকীয় কম্পাস (জাপান);
  • ১টি জিপিএস রিসিভার (ফুরুনো);
  • ১টি ইকো সাউন্ডার (কোডেন);
  • ১টি রাডার অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর;
  • ১টি ভিএইচএফ সেট (আইকম);
  • ১০টি ভিএইচএফ ওয়াকিটকি সেট (আইকম/মটোরোলা)।

রণসজ্জা সম্পাদনা

সোনাদিয়া-শ্রেণীর ফাস্ট প্যাট্রোল বোটের আকার আয়তন অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও এর সক্ষমতা আধুনিক বিশ্বে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। শত্রু জাহাজ মোকাবেলা, চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমনে জাহাজটিতে রয়েছে:

  • ১টি টুইন ব্যারেল জেডউ-২৩ ২৩ মিমি বিমান-বিধ্বংসী নেভাল গান;
  • ২টি টাইপ ৫৬ ১২.৭ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান;
  • ৬টি কিউডব্লিউ-২ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণ যোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

জাহাজসমূহ সম্পাদনা

  বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড
 পরিচিতি সংখ্যা   নাম   নির্মাতা   নির্মাণ শুরু   হস্তান্তর   কমিশন   অবস্থা 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী" (পিডিএফ)pressinform.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  2. "বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর প্রক্রিয়াধীন উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা" (পিডিএফ)coastguard.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  3. "প্রকল্পসমূহের (৬টি) তথ্যাদি গত মাসের জের (১১/০২/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত হালনাগাদকৃত)"adp.plancomm.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  4. "প্রকল্পের প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত চেকলিস্ট"adp.plancomm.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  5. "শিগগিরই কোস্ট গার্ড আধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ ও হেলিকপ্টারে সজ্জিত হবে : প্রধানমন্ত্রী"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২ 
  6. "কোস্ট গার্ডকে আরো সক্ষম ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী | শিরোনাম"Noyashotabdi। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২ 
  7. প্রতিবেদক, নিজস্ব (১৯৭০-০১-০১)। "কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২ 
  8. "কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী"। ২০২৪-০৩-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২ 
  9. "বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এর ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী-২০২৪ উদযাপন" 
  10. "কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী"Dainikbangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৬ 
  11. "কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী"skhobor.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৬ 
  12. "শেখ হাসিনা: 'কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে'"ভিওএ। ২০২৪-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৬