পল রয়টার
পল জুলিয়াস রয়টার (জন্ম নাম- 'ইসরায়েল বিয়ার জোসাফাট' পরে 'ফ্রেইহার ফন রয়টার' বা 'ব্যারন ভন রয়টার' নামে পরিচিত হন) (২১ জুলাই ১৮১৬ - ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯), [১] ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংবাদ প্রতিবেদক, উদ্যোক্তা যিনি তাৎক্ষণিক সংবাদ সরবরাহে টেলিগ্রাফির ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা নেন এবং বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রতিষ্ঠা করেন।[২] তার সংবাদ সংস্থাটি অবশ্য পরে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে থমসন রয়টার্স-এর সংগঠনের অংশ হয়ে ওঠে। [৩]
পল জুলিয়াস রয়টার | |
---|---|
জন্ম | ইসরায়েল বিয়ার জোসাফাট ২১ জুলাই ১৮১৬ |
মৃত্যু | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ | (বয়স ৮২)
পেশা | উদ্যোক্তা ও প্রতিবেদক |
পরিচিতির কারণ | রয়টার্স সংবাদ সংস্থা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইডা মারিয়া এলিজাবেথ ক্লেমেনটাইন ম্যাগনাস (বি. ১৮৪৫) |
সন্তান | ৩ পুত্র - হার্বার্ট, জর্জ ও আলফ্রেড |
জীবন এবং কর্মজীবন
সম্পাদনাইসরায়েল বিয়ার জোসাফাট-এর (পরবর্তীতে পল জুলিয়াস ব্যারন ফন রয়টারের) জন্ম ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই। জার্মানির ক্যাসেলে এক ইহুদি পরিবারে। [৪]তার পিতা স্যামুয়েল লেভি জোসাফাট ছিলেন একজন ধর্মীয় আইনজ্ঞ বা র্যাবাই, মাতা স্যামুয়েল বেটি স্যান্ডার্স। মাতা-পিতা তার নাম রেখেছিলেন 'ইজরায়েল বিয়ার জোসাফেত'। তরুণ বয়সে তিনি তার কাকার ব্যাংকে করণিকের কাজ করেন। জার্মানির গ্যোটিঙেনে সেই সময় তার পরিচয় হয় পদার্থবিদ কার্ল ফ্রিডরিশ গাউসের। গাউস তখন তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করার উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন [৫] এবং ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের মাধ্যমে গাউসের প্রচেষ্টা বাস্তবতার রূপ নেয়।
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর তিনি ২৯ বৎসর বয়সে চলে যান লন্ডনে। সেখানে নিজেকে জোসেফ জোসাফেত বলে পরিচয় দিতেন। কিন্তু ওই বছরের ১৬ নভেম্বর লন্ডনের সেন্ট জর্জ জার্মান লুথারান চ্যাপেলে নিজের পারিবারিক ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং নাম পরিবর্তন করে পল জুলিয়াস রয়টার নামে পরিচিত হন। [২] এক সপ্তাহ পরে, ওই চ্যাপেলে, তিনি বার্লিনের এক জার্মান ব্যাঙ্কারের কন্যা ইডা মারিয়া এলিজাবেথ ক্লেমেন্টাইন ম্যাগনাসকে বিবাহ করেন।[৬] পরে এক সময় নিজের যোগ্যতাবলে তার নামের সাথে জুড়ে যায় ব্যারন উপাধিও।
রয়টার দম্পতির আর্থিক অবস্থা সেসময় স্বচ্ছল ছিল না। সেকারণে নানা টানাপোড়েন স্বত্ত্বেও শিক্ষিতা, বুদ্ধিদীপ্তা স্ত্রী ক্লেমেনটাইন তার স্বামীর কাজে যথেষ্ট সাহায্য করতেন। প্যারিসে অবস্থানকালে তিনি সংবাদ সংস্থার যাবতীয় কাজকারবারের অনেকটাই বুঝে নিয়েছিলেন। কিন্তু লন্ডনে আর না থেকে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে বার্লিনে ফিরে আসেন। বার্লিনের বিখ্যাত পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা 'রয়টার এন্ড স্টারগার্ড'-এর অংশীদার হন। কিন্ত ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ইউরোপে বিপ্লবের কারণে তার সংস্থার রাডিক্যাল প্রচারপত্র প্রচারে বাধা আসে। শেষে জার্মান নেতৃত্বের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে তাকে পাড়ি জমাতে হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। [৭]সেখানে চার্লস-লুই হাভাসের সংবাদ সংস্থা এজেন্স হাভাস তথা এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসে কাজ করেন। [৫]
টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায়, রয়টার ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ফেরত আসেন এবং আচেনে নিজের সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে আচেন থেকে ব্রাসেলসে কবুতরের মাধ্যমে সংবাদ আদানপ্রদান এবং পরবর্তীতে তিনি বার্লিনের সঙ্গে প্যারিসকে সংযুক্ত করেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, আর্থিক খবরাখবর আদানপ্রদানে পোস্ট ট্রেনের চেয়ে দ্রুততর কবুতর খুব সহজেই কাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ। প্রথমদিকে তিনি দুশোটির মত কবুতর রেখেছিলেন। অবশেষে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় কবুতর সরাসরি টেলিগ্রাফ লিঙ্ক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [৮]
ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপের নানা দেশের সঙ্গে ইংলিশ চ্যানেলের তলদেশ দিয়ে 'কালেই-ডোভার টেলিগ্রাফ ক্যাবল' নামের 'সাবমেরিন টেলিগ্রাফ ক্যাবল' ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত টেলিগ্রাফ লাইন নির্মাণাধীন দেখে দূরদর্শী রয়টার লন্ডনের রয়াল স্টক এক্সচেঞ্জ-এর পাশের বাড়িতে অফিস ভাড়া নেন এবং নতুন স্থাপিত এই অন্তঃসাগরীয় যোগাযোগ লাইনকে তার সংবাদ-সংস্থায় ব্যবহার করার পরিকল্পনায়
নিজ সংস্থার জন্য ‘সাবমেরিন টেলিগ্রাফ’ অফিস স্থাপন করেন। লন্ডনের রয়াল স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি প্যারিসের শেয়ার বাজারের খবরাখবর লন্ডনে এবং লন্ডনের শেয়ার বাজারের খবর প্যারিসের ব্যবসায়ীদের সাথে বিনিময় করা শুরু করেন। এই চুক্তির কল্যাণে 'দ্য টাইমস'- সহ বহো ব্রিটিশ সংবাদপত্র রয়টার্সের সাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। রয়টার্সে এই পত্রিকাসমূহের সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সংবাদসংস্থা হিসাবে রয়টার্সের সফল যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ভিন্নধর্মী সংবাদ সরবরাহের জন্য খুব দ্রুতই রয়টারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক স্তরে।
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাপল জুলিয়াস রয়টার ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে বার্লিনের এক জার্মান ব্যাঙ্কার ফ্রেডরিখ মার্টিন ম্যাগনাসের কন্যা ইডা মারিয়া এলিজাবেথ ক্লেমেনটাইন ম্যাগনাসকে বিবাহ করেন।[৬] পল ও ইডা দম্পতির তিন পুত্র, হার্বার্ট (১৮৫২-১৯১৫), (দ্বিতীয় ব্যারন, আত্মহত্যা করলে তার পুত্র হুবার্ট হন তৃতীয় ব্যারন), জর্জ এবং আলফ্রেড।[৯] জর্জ-এর দুই পুত্র, অলিভার (চতুর্থ ব্যারন) ও রোনাল্ড।
জীবনাবসান এবং উত্তরাধিকার
সম্পাদনাপল জুলিয়াস রয়টার ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারির যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রয়াত হন।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে এডওয়ার্ড জি রবিনসন রয়টার্স-এর জীবনীর উপর চলচ্চিত্র- এ ডেসপ্যাচ ফ্রম রয়টার্স নির্মাণ করেন এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্স পরিবেশন করে।
রয়টার্স নিউজ এজেন্সি প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর শতবর্ষ উদযাপনে জার্মানিতে পল জুলিয়াস রয়টার্স নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার প্রবর্তন করে। [২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "নং. 26227"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ নভেম্বর ১৮৯১।
- ↑ ক খ গ Paul Julius Reuter, Encyclopedia of World Biography, 2004, The Gale Group Inc.
- ↑ Company History – Thomson Reuters
- ↑ "Heroes – Trailblazers of the Jewish People"। Beit Hatfutsot। ১৮ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ Lennon, Troy (২০১৬-০৭-২০)। "Brilliant clerk turned old news into the news of the day"। Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১২।
- ↑ ক খ Paul Julius Freiherr von Reuter, Encyclopaedia Judaica, 2008, The Gale Group.
- ↑ "Paul Julius, baron von Reuter", Encyclopædia Britannica, ১৯৯৮ .
- ↑ Wynter, Andrew (১৮৬১)। Our social bees; or, Pictures of town & country life, and other papers। United Kingdom: R. Hardwicke। পৃষ্ঠা 298। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৪।
- ↑ Jones, Sir Roderick (১৯৫১)। A life in Reuters। Hodder & Stoughton।