গ্যোটিঙেন
গ্যোটিঙেন (জার্মান: Göttingen; আ-ধ্ব-ব: [ˈɡœtɪŋən]; ) মধ্য জার্মানির নিডারজাখসেন রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় শহর ও গ্যোটিঙেন জেলার প্রধান শহর। শহরটির ভেতর দিয়ে লাইনে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে হানোফার নগরীটি অবস্থিত। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী এখানে প্রায় ১ লক্ষ ১৯ হাজার লোকের বাস ছিল।[২]
গ্যোটিঙেন | |
---|---|
![]() গেনসেলিজেল ফোয়ারা ও পথচারীদের জন্য ধার্য এলাকা | |
দেশ | ![]() |
জেলা | গ্যোটিঙেন |
প্রথম উল্লিখিত | 953 |
সরকার | |
• ওবারব্যুর্গারমাইস্টার | পেট্রা ব্রোইষ্টেট[১] (SPD) |
আয়তন | |
• মোট | ১১৬.৮৯ বর্গকিমি (৪৫.১৩ বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | সিইটি/সিইডিটি (ইউটিসি+১/+২) |
ডাক কোড | 37001–37085 |
ফোন কোড | 0551 |
যানবাহন নিবন্ধন | GÖ |
৯৫৩ সালে প্রথম লোকালয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১২১০ সালে এটি রাজকীয় সনদ লাভ করে ও এসময় এটি হানজেয়াটীয় বণিক সংঘের অংশ ছিল। ১৪শ শতকে প্রুশিয়ার অধীনে এটি সমৃদ্ধি লাভ করে। ইংল্যান্ডের রাজা ২য় জর্জ এখানে ১৭২৭ সালে গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটিতে পরিণত হয় এবং এর ফলে শহরটির খ্যাতিও বৃদ্ধি পায়। ১৯শ শতকের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগটি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগার জার্মানির সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলির একটি। গ্যোটিঙেন শহরের সাথে ৪৪ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সম্পর্কিত, যাদের কেউ কেউ এই শহরে জন্ম নেন, অন্যরা এখানে শিখতে, শিক্ষাদান করতে বা গবেষণা করতে এসেছিলেন। এদের মধ্যে রসায়নবিদ অটো হান, পদার্থবিজ্ঞানী মাক্স বর্ন, জেমস ফ্রাংক, ভের্নার হাইজেনবের্গ ও মাক্স ফন লাউয়ে-র নাম উল্লেখ্য। সব মিলিয়ে শহরের আনাচে কানাচে ৩০০রও বেশি বিখ্যাত পণ্ডিতকে শ্বেতপাথরের ফলক স্থাপনের মাধ্যমে স্মরণ করা হয়েছে, যারা ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের অগ্রযাত্রার সাক্ষী। অটো ফন বিসমার্ক, হাইনরিখ হাইনে ও হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো এখানে পড়াশোনা করেন। এখানে ১৯৪৮ সালে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
গ্যোটিঙেনে উচ্চ প্রযুক্তি, আলোকীয় ও সূক্ষ্ম সরঞ্জাম, অণুবৈদ্যুতিন (মাইক্রোইলেকট্রনিক) দ্রব্যাদি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও কৃত্রিম দ্রব্যাদির কারখানা আছে। এখানকার প্রকাশনা শিল্পটিও গুরুত্বপূর্ণ। ২য় বিশ্বযুদ্ধে শহরটির তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি, তাই এখানে বহু মধ্যযুগীয় কাঠের বাসভবন ও স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়। ১৪শ শতকে নির্মিত নগর ভবন ও বেশ কিছু গোথিক ও বারোক স্থাপত্যশৈলীর গির্জা রয়েছে। আরও আছে ১৭৩৬ সালে স্থাপিত উদ্ভিদতাত্ত্বিক উদ্যান, মঞ্চভবন ও ধর্মীয় শিল্পকলার সংগ্রহে সমৃদ্ধ পৌর জাদুঘর।
গ্যোটিঙেন শহরে প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে আন্তর্জাতিক হান্ডেল উৎসবের আসর বসে, যেখানে বারোক ঘরানার সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সম্পাদনাগোটিনজেনের উৎপত্তিস্থল গুটিনগি নামক একটি গ্রামে, যার প্রথম উল্লেখ ৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে একটি নথিতে পাওয়া যায়। শহরটি এই গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে ১১৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। মধ্যযুগীয় সময়ে শহরটি হ্যানসিয়াটিক লীগের সদস্য হওয়াতে এটি একটি ধনী শহর ছিল।
আজ, গোটিনজেন তার পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়ের ( জর্জিয়া অগাস্টা, অথবা "জর্জ-আগস্ট-ইউনিভার্সিটি" ) জন্য বিখ্যাত, যা ১৭৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (১৭৩৭ সালে প্রথম পড়াশোনা চালু) এবং ইউরোপের সর্বাধিক পরিদর্শন করা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে। ১৮৩৭ সালে, সাতজন অধ্যাপক হ্যানোভারের রাজাদের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন; তারা তাদের পদ হারান, কিন্তু " গটিনজেন সেভেন " নামে পরিচিত হন। এর প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে কিছু সুপরিচিত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন: ব্রাদার্স গ্রিম, হেনরিখ ইওয়াল্ড, উইলহেম এডুয়ার্ড ওয়েবার এবং জর্জ গারভিনাস । এছাড়াও, জার্মান চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্ক এবং গেরহার্ড শ্রোডার গোটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। কার্ল বার্থ এখানেই তার প্রথম অধ্যাপকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের মধ্যে কয়েকজন, কার্ল ফ্রিডরিখ গাউস, বার্নহার্ড রিম্যান এবং ডেভিড হিলবার্ট, গোটিনজেনে অধ্যাপক ছিলেন।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শহরের মতো, গোটিনজেনও নিজস্ব অদ্ভুত ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। যেদিন তাদের ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে, সেদিন শিক্ষার্থীদের গ্রেট হল থেকে ওল্ড টাউন হলের সামনের গ্যানসেলিসেল -ফাউন্টেনে হ্যান্ডকার্টে করে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাদের ঝর্ণায় উঠতে হবে এবং গ্যানসেলিসেলের ( হাঁস মেয়ে ) মূর্তিকে চুম্বন করতে হবে। এই প্রথাটি আসলে নিষিদ্ধ, কিন্তু আইন প্রয়োগ করা হয় না। এই মূর্তিটিকে বিশ্বের সবচেয়ে চুম্বনপ্রাপ্ত মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বোমা হামলা থেকে প্রায় অস্পৃশ্য, গোটিনজেনের অভ্যন্তরীণ ংশে খন অনেক দোকান, ক্যাফে এবং বার সহ বসবাসের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। এই কারণে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহরের ভেতরের দিকে বাস করে এবং গোটিনজেনকে তারুণ্যের অনুভূতি দেয়। ২০০৩ সালে, শহরের অভ্যন্তরীণ জনসংখ্যার ৪৫% এর বয়স ছিল মাত্র ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
বাণিজ্যিকভাবে, গোটিনজেন অপটিক্যাল এবং স্পষ্টতা-প্রকৌশলী যন্ত্রপাতি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, কার্ল জেইস, ইনকর্পোরেটেডের হালকা মাইক্রোস্কোপি বিভাগের কেন্দ্রস্থল এবং জৈব-প্রযুক্তি এবং পরিমাপ সরঞ্জামগুলিতে বিশেষজ্ঞ সার্টোরিয়াস এজি-র একটি প্রধান স্থান - গোটিনজেনের আশেপাশের অঞ্চলটি নিজেকে "পরিমাপ উপত্যকা" হিসাবে বিজ্ঞাপন দেয়।
২০০৩ সালে গোটিনজেনে বেকারত্বের হার ছিল ১২.৬% এবং এখন ৭% (মার্চ ২০১৪)। শহরের কেন্দ্রস্থলের পশ্চিমে শহরের রেলওয়ে স্টেশনটি জার্মানির প্রধান উত্তর-দক্ষিণ রেলপথে অবস্থিত।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Stichwahlen zu Direktwahlen in Niedersachsen vom 26. September 2021" (পিডিএফ)। Landesamt für Statistik Niedersachsen। ১৩ অক্টোবর ২০২১। ১৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ (জার্মান ভাষায়) Statistische Monatshefte Niedersachsen