পল দ্যতিয়েন[ক] (ফরাসি: Paul Detienne, ফরাসি উচ্চারণ: ​[pɔl dətjɛn]; ৩০শে ডিসেম্বর ১৯২৪ – ৩১শে অক্টোবর ২০১৬), যিনি ফাদার দ্যতিয়েন নামে সুপরিচিত, ছিলেন একজন ফরাসি বেলজীয় জেসুইট পাদ্রি ও লেখক।[১][২] তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

ফাদার

পল দ্যতিয়েন
Paul Detienne
২০০৬ সালে ব্রাসেল্‌সে ফাদার দ্যতিয়েন
উচ্চারণ[pɔl dətjɛn]
জন্ম
পল দ্যতিয়েন

(১৯২৪-১২-৩০)৩০ ডিসেম্বর ১৯২৪
রশফর, বেলজিয়াম
মৃত্যু৩১ অক্টোবর ২০১৬(২০১৬-১০-৩১)
ব্রাসেল্‌স, বেলজিয়াম
জাতীয়তাবেলজীয়
পেশা
  • পাদ্রি
  • যাজক
  • প্রাবন্ধিক
  • অনুবাদক
  • সাহিত্য সমালোচক
পুরস্কারনরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৭৩)
ক্রিস্তফেল প্লঁত্যাঁ পুরস্কার (১৯৭৭)
রবীন্দ্র পুরস্কার (২০১০)
লেখক হিসেবে কর্মজীবন
ভাষা
সময়কালআধুনিক
ধরন
  • প্রবন্ধ
  • রম্যরচনা
  • অনুবাদ
  • সমালোচনা

মূলত ব্রাসেল্‌স শহরের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন খ্রীষ্টধর্মপ্রচারক হিসেবে বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষে অবস্থান করেছিলেন। এসময় তিনি ভালভাবেই বাংলা ভাষা রপ্ত করেন। ফরাসি তাঁর মাতৃভাষা হলেও তিনি স্বচ্ছন্দ্যে বাংলা বলতে ও লিখতে পারতেন। ‘ফাদার দ্যতিয়েন’[খ] নামে তাঁর রচনা দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতের দেশ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর রচনারীতিতে সংস্কৃত ভাষার সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। ডায়েরির ছেঁড়া পাতা গ্রন্থটির জন্যে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতের ‘নরসিংহ দাস পুরস্কার’ লাভ করেন।[৩]

জীবনবৃত্তান্ত

সম্পাদনা

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর তারিখে বেলজিয়ামের রশফর নামীয় ছোট শহরে পল দ্যতিয়েনের জন্ম হয়। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারের অভীপ্সা নিয়ে ধর্মীয় জীবনে সম্পৃক্ত হন। যাজক হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি জেযুইট বর্গের একজন খ্রিস্টান যাজক। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত প্রতিষ্ঠা হওয়ার অল্প পরেই তিনি কোলকাতায় আগমন করেন। সেই থেকে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দিন দশক তিনি ভারতে অবস্থান করেন।

কোলকাতায় আসার পূর্বে বেলজিয়ামের নামুরে তিনি সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন। তাতে বাংলা ভাষা শিখতে সুবিধা হয়ছিল। ভারতে আসার পর কোলকাতা, শ্রীরামপুর ও বিশ্বভারতী সহ বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা করেছেন। ভারতে অবস্থানকালে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি সৃজনশীল সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রসবোধ অসামান্য। তার প্রবন্ধে-নিবন্ধে এই রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তার দুটি রম্যরচনা গ্রন্থ রয়েছে যেগুলো উচ্চ প্রশংসিত এবং পুরস্কার বিভূষিত।

 
ফাদার দ্যতিয়েন বাংলায় লিখিত বই

তিনি বহু অনুবাদ কর্ম সম্পাদন করেছেন। লিখেছেন অনেক প্রবন্ধ। প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকটি সংকলনগ্রন্থ। বাঙলা ছাড়াও তিনি ফরাসী ভাষায় লিখে থাকেন। দীর্ঘ দিন লেখালিখি বন্ধ ছিল। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আবার লেখালিখি শুরু করেছেন। তার একটি রম্য রচনা থেকে কীয়দংশ নিচে দেয়া হলোঃ

ভদ্রলোকটি বাস করেন স্বনামধন্য তালতলা লেনে। সস্ত্রীক, সপুত্রক, সকন্যাক। রাজধানীর দেয়ালে অঙ্কিত যত লাল ত্রিকোণ, কাগজে মুদ্রিত যত বিজ্ঞাপন, ট্রামের গায়ে চিত্রিত যত সতর্কবাণী, তিনি হয়তো দেখেননি, তিনি হয়তো মানেন না। তাঁর ঘরে টেবিল নেই, চেয়ার নেই, ইলেকট্রিসিটি নেই, আছে সন্তোষের আনন্দ। সন্তোষই তাঁর নাম। অর্থাৎ অফিসের নাম। পাড়ায় তাঁকে সবাই ‘বাপ্তিস্মের নাম’ ধরে ডাকে জর্জ। আর ক্যাথলিক সমাজে সংখ্যাতীত জর্জ আছে বলে অনির্দিষ্টকাল থেকে সেই জর্জ নামে সংযোজিত হয়েছে গুণাত্মক—গর্দভারূঢ়ার কৃপাসূচক—এক বিশেষণ: স্পটি জর্জ।

প্রকাশনা

সম্পাদনা
  • সাধাসিধে খসড়া (২০১৭)
  • গদ্য পরম্পরা (১৯৭৭)
  • ছোট্ট রাজকুমার ( অনুবাদ )
  • ডায়েরির ছেঁড়া পাতা (১৯৭১)
  • আটপৌরে দিনপঞ্জি (১৯১৩)
  • রোজনামচা (১৯৭৩)
  • সম্পাদনা: উইলিয়াম কেরির ইতিহাসমালা
  • অনুবাদ : ছোট রাজকুমার (১৯৭০) ও খ্রিষ্টানুকরণ (১৯৭১)

সম্মাননা

সম্পাদনা

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে বেলজিয়াম ফাদর দ্যতিয়নকে ক্রিস্তফ প্লানতিন পুরস্কারে ভূষিত করে। যে সকল বেলজিয়ান নাগরিক শুদ্ধু বিদেশের মাটিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রসিদ্ধি লাভ করেন কেবল তাদেরই এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মৃত্যু

সম্পাদনা

দীর্ঘ দিনের ভারতপ্রবাস শেষ করে তিনি ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বদেশ বেলজিয়ামে প্রত্যাবর্তন করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন।[৪] এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসা কালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ৩১শে অক্টোবর সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৬টায় তিনি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।[৫] ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর নিকট তিনি বলেছিলেন যেন তার শেষকৃত্যকারে রবি ঠাকুরের ‘‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে গানটি বাজানো হয়।[৬][৭]

  1. এই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
  2. ফাদার, যার বাংলা অর্থ বাবা, তাঁর নামের অংশ নয়। ফাদার একটি সম্বোধন; খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীরা সন্ন্যাসীদের ফাদার সম্বোধন করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা