পরিবেশ আইন
পরিবেশ আইন হলো একধরনের আইনের নাম যেটি পরিবেশ রক্ষার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাপুরো ইতিহাসজুড়েই পরিবেশের রক্ষার্থে ও মানুষের কল্যাণের জন্য নানা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। সাধারণত, নুইসেন্স আইনে সুরক্ষার উল্লেখ ছিল, কিন্তু এই আইন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পদ বা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ
সম্পাদনাবায়ুমান
সম্পাদনাবায়ুমান আইন বায়ু দূষক পদার্থকে পরিবেশে ত্যাগ করতে নিয়ন্ত্রণ করে। বায়ুমান আইনের বিশেষ শাখা দালানের ভেতর বায়ুর মানকে নিয়ন্ত্রণ করে। বায়ুমান আইন সাধারণত গঠন করা হয়েছে দূষক পদার্থ বায়ু থেকে সরিয়ে ফেলল মানুষের স্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য। অন্যান্য লক্ষ্য হলো পরিবেশের নানা সমস্যা সমাধান করা, যেমন যেসকল রাসায়নিক ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেগুলোর ব্যবহার কমিয়ে দেয়া। তাছাড়া, এটির অবদানের মাঝে রয়েছে বায়ু দূষক পদার্থকে চিহ্নিত করা ও তাদেরকে শ্রেণিবিন্যাস করা।
পানিমান
সম্পাদনাপানিমান আইন পানির ভেতর বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ফেলাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই পানির ভেতর রয়েছে ভূপৃষ্ঠের পানি, ভূগর্ভস্থ পানি এবং সংরক্ষিত খাবার পানি। কিছু পানিমান আইন, যেমন পানি পান করার নিয়ম, মানুষের স্বাস্থ্য বিবেচনায় তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য নিয়ম, যেমন পানি সম্পদকে রাসায়নিক, বাহ্যিক ও জৈবিকভাবে দূষিত করাকে বাধা দেওয়াও পানিকে বিস্তৃতভাবে সুরক্ষিত করে। তাছাড়া আইনগত অবদানের মাঝে রয়েছে পানির দূষক পদার্থকে চিহ্নিত করা ও শ্রেনিবিন্যাস করা এবং এসকল দূষক পদার্থকে তাদের উৎস থেকে মুক্ত করায় নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝে অন্তর্ভুক্ত হলো নালা ব্যবস্থা, শিল্প কারখানা ও কৃষিতে নোংরা পানির ব্যবস্থাপনা।
আবর্জনা ব্যবস্থাপনা
সম্পাদনাআবর্জনা ব্যবস্থাপনা আইন সকল প্রকার আবর্জনার পরিবহন, সংরক্ষণ ও ধ্বংসকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইসকল আবর্জনার ভেতর রয়েছে পৌরসভার কঠিন বর্জ্য, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য, নিউক্লিয়ার বর্জ্য এবং আরও অসংখ্য ধরনের আবর্জনা। আবর্জনা আইন গঠন করা হয়েছে মূলত অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহার করা হয়না এমন বর্জ্যকে পরিবেশ থেকে এমনভাবে কমিয়ে বা সরিয়ে ফেলা যাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয়।
ভেজাল পরিষ্কার
সম্পাদনারাসায়নিক নিরাপত্তা
সম্পাদনারাসায়নিক নিরাপত্তা আইন মূলত মানব কাজে রাসায়নিকের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে, বিশেষ করে মানব তৈরি রাসায়নিক যেগুলো শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়।
সম্পদ স্থায়ীত্বতা
সম্পাদনাপানি সম্পদ
সম্পাদনাপানি সম্পদ আইন পানি সম্পদের মালিকানা ও ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে, ভূমির উপর ও ভূতলের পানি।
বন সম্পদ
সম্পাদনামাছ এবং শিকারযোগ্য প্রাণী
সম্পাদনামাছ এবং শিকারযোগ্য প্রাণী আইন মাছ এবং বন্য প্রাণী (শিকারযোগ্য প্রাণী) মারার নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরনের আইন মাছ বা প্রাণী চাষ, প্রতি ব্যক্তির শিকার করা প্রাণীর সংখ্যা, মাছ ধরার ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
সারা পৃথিবীতে
সম্পাদনাআন্তর্জাতিক আইন
সম্পাদনাবৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পরিবেশ সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীন।
আফ্রিকা
সম্পাদনাইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর এনভাইরনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এন্ড এনফোর্সমেন্ট (আইএনইসিই) এর মতে আফ্রিকাতে সবচেয়ে বড় পরিবেশ সমস্যা হলো, “বন্যা, বায়ু দূষণ, বন উজাড়, বিশুদ্ধ পানির অভাব।”[২] ইউ.এস. এনভাইরনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) “নগরায়ণ ও শিল্পকারখানা দূষণ, পানির মান, বৈদ্যুতিক আবর্জনা ও চুলার ধোয়া”র উপর গুরুত্ব দেয়।[৩] আফ্রিকা ও বিশ্বের পরিবেশকে দূষণের পূর্বে তারা আশা করে দূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। এটি করে, তারা মানব স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করতে চায়, বিশেষ করে শিশু ও গরীবদের।[৩] আফ্রিকাতে এই লক্ষ্য পূরণের জন্য, ইপিএ পরিবেশ আইনকে জোড়দাড় করার জন্য নানা কার্যক্রম চালায়। অন্যান্য কার্যক্রম পারিবেশ আইন, নিয়মকে উন্নত করার লক্ষ্যে করা হয়। [৩]
এশিয়া
সম্পাদনাএশিয়ান এনভাইরনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এন্ড এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক হলো এশিয়াতে পরিবেশ আইন উন্নত করার জন্য ১৬টি এশীয় দেশের একটি চুক্তি। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালদ্বীপ, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং লাও পিডিআর। [৪]
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
সম্পাদনাইইউ আইনের ২৪৯ নাম্বার নিবন্ধ হলো ট্রিটি ফর দ্য ফাংশনিং অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (টিএফইইউ)। ইইউ আইনের কিছু সাধারণ বিষয় হলোঃ
- জলবায়ু পরিবর্তন
- বায়ু দূষণ
- পানি দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা
- আবর্জনা ব্যবস্থাপনা
- মাটি সুরক্ষা
- প্রকৃতির সুরক্ষা, প্রজাতি এবং জীববৈচিত্র্য
- শব্দ দূষণ
- পরিবেশের জন্য তৃতীয় দেশ (যেগুলো ইইউ এর সদস্য নয়) গুলোর সাথে যোগাযোগ
- নাগরিক নিরাপত্তা
মধ্যপ্রাচ্য
সম্পাদনামধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা এজেন্সি কাজ করছে যাতে “পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, পানি দূষণ এবং পানি নিরাপত্তা, পরিষ্কার তেল ও যান, দূষণরোধ” ইত্যাদি নিশ্চিত করা যায়।[৫]
ব্রাজিল
সম্পাদনাব্রাজিলের সরকার ১৯৯২সালে পরিবেশ রক্ষার জন্য পরিবেশের মন্ত্রিসভা গঠন করে। এই মন্ত্রিসভা পানি সম্পদ, আমাজনে হওয়া নানা পরিবেশ কার্যক্রমে এবং পরিবেশ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে।[৬]
কানাডা
সম্পাদনাপরিবেশ অধিনিয়মের ডিপার্টমেন্ট কানাডার সরকারে পরিবেশ মন্ত্রীর পদ হিসেবে পরিবেশ ডিপার্টমেন্ট গঠন করে। তাদের কাজ হলো পরিবেশের উপাদানের মান রক্ষা করা ও বৃদ্ধি করা; যাদের মাঝে রয়েছে পানি, বাতাস ও মাটির মান; নবায়নযোগ্য সম্পদ, অতিথি পাখি।[৭] কানাডা পরিবেশ সুরক্ষা অধিনিয়ম, ১৯৯৯ হলো কানাডার পরিবেশ আইনের মূল যেটি গঠিত হয় ২০০০সালের ৩১ মার্চ।[৮][৯]
বাংলাদেশ
সম্পাদনাবাংলাদেশে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারকির জন্য ১৯৮৯ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণীত হয় এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ বিধিবদ্ধ করার মাধ্যমে পুরনো আইন সংশোধন করা হয়। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে অদ্যাবধি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পরিবেশ সম্পর্কিত প্রায় ১৮৫টি আইন রয়েছে।
- পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭
- পরিবেশ আদালত আইন ২০০০
- পরিবেশ নীতি ১৯৯৯
ভারত
সম্পাদনাভারতে পরিবেশ আইন পরিবেশ সুরক্ষা অধিনিয়ম, ১৯৮৬ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।[১০] এই অধিনিয়মটি পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় দূষণ রোধ বোর্ড এবং অন্যান্য প্রদেশের দূষণ রোধ বোর্ড। এটি ছাড়াও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বিশেষকরে পানি, বাতাস, বন প্রভৃতিকে রক্ষার জন্য আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। এই সকল আইনের মাঝে রয়েছেঃ-
- পানি (দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) অধিনিয়ম, ১৯৭৪
- পানি (দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) অধিনিয়ম, ১৯৭৭
- বন (সুরক্ষা) অধিনিয়ম, ১৯৮০
- বাতাস (দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) অধিনিয়ম, ১৯৮১
- বাতাস (দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮৩
- জীববৈচিত্র অধিনিয়ম, ২০০২ এবং বনজীবন সুরক্ষা আইন, ১৯৭২
- ব্যাটারি আইন (ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ), ২০০১
- প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ব্যবহার আইন, ১৯৯৯[১১]
- পানি (দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৮
- গঙ্গা পরিকল্পনা, ১৯৮৬
- বন (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮০
- বন্যজীবন সুরক্ষা অধিনিয়ম, ১৯৭২
- জীববৈচিত্র অধিনিয়ম, ২০০২[১২][১৩]
- বিপজ্জনক আবর্জনা (ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৩[১৪]
ভিয়েতনাম
সম্পাদনাভিয়েতনাম বর্তমানে মিথেনের ব্যবহারকে হ্রাসের জন্য ইউ.এস. এনভাইরনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে থাকে। ২০০২সালের মার্চে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম ইউ.এস.-ভিয়েতনাম মেমোর্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন রিসার্চ অন হিউম্যান হ্যালথ এন্ড দয়া এনভায়রনমেন্টাল এফেক্টস অব এজেন্ট অরেঞ্জ/ডাইঅক্সিন নামক চুক্তি স্বাক্ষর করে।[১৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Phillipe Sands (2003) Principles of International Environmental Law. 2nd Edition. p. xxi Available at [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে Accessed 19 February, 2020
- ↑ "INECE Regions- Africa"। ২০ আগস্ট ২০০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ ক খ গ "Africa International Programs"। Environmental Protection Agency। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৮, ২০১২।
- ↑ "AECEN"। www.aecen.org। ২০১৫-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৭।
- ↑ "EPA Middle East"। Environmental Protection Agency। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Apresentação"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Department of the Environment Act"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Environment Canada"। ২০০৭-০১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ See Canada's Legal System Overview ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে.
- ↑ "THE ENVIRONMENT (PROTECTION) ACT, 1986"। envfor.nic.in। ২০০২-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৭।
- ↑ "Archived copy" (পিডিএফ)। ২০১৩-০৮-১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২৭।
- ↑ "THE INDIAN WILDLIFE (PROTECTION) ACT, 1972"। envfor.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৭।
- ↑ Rhuks Temitope, "THE JUDICIAL RECOGNITION AND ENFORCEMENT OF THE RIGHT TO ENVIRONMENT:DIFFERING PERSPECTIVES FROM NIGERIA AND INDIA", NUJS LAW REVIEW,March 11, 2020
- ↑ Surendra Malik, Sudeep Malik। Supreme Court on Environment Law (2015 সংস্করণ)। India: EBC। আইএসবিএন 9789351451914।
- ↑ "Vietnam International Programs"। Environmental Protection Agency। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৮, ২০১২।