নুরুদ্দিন আল-বিতরুজি

নুরুদ্দিন আল-বিতরুজি ( আরবি: أبو إسحاق البطروجي ) ( নুরুদ্দিন ইবনে ইসহাক আল-বেতরুগি এবং আবু ইশাক ইবনে আল-বিত্রোগি বানানও ব্যবহার করা হয়ে থাকে) (মৃত্যু ১২০৪) ছিলেন একজন আইবেরীয়-আরব [১] জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং আল-আন্দালুসের একজন কাজি (বিচারক)।[২] পশ্চিমা বিশ্বে তিনি ল্যাটিন নাম আলপেট্রাজিয়াস নামে পরিচিত। আল-বিতরুজি ছিলেন প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী যিনি টলেমির মডেলের বিকল্প হিসেবে একটি অটলেমীয় জ্যোতির্বিদ্যা ব্যবস্থা উপস্থাপন করেন। এই মডেলে সৌরজগতের গ্রহগুলো ভূকেন্দ্রিক গোলক দ্বারা বহন করা অবস্থায় ছিল। তার সিস্টেমের আরেকটি মূল দিক ছিল যে, তিনি স্বর্গীয় গতির একটি বাহ্যিক কারণ প্রস্তাব করেছিলেন।[২] ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তার বিকল্প সৌরজগতের মডেল ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়ে।[৩]

চাঁদের আলপেট্রাজিয়াস গর্তটি তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

জীবনী সম্পাদনা

তার জীবন সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। তবে তার নামের শেষাংশটি সম্ভবত কর্ডোবার নিকটবর্তী একটি অঞ্চল লস পেড্রোচেস (আল-বিত্রাওশ) থেকে এসেছে।[২] তিনি ইবনে তুফায়েলের (আবুবাসের) শিষ্য ছিলেন এবং ইবনে রুশদের সমসাময়িক ছিলেন।

গ্রহের মডেল সম্পাদনা

আল-বিতরুজি গ্রহের গতির উপর একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন। এই মডেলে তিনি উপচক্র (এপিসাইকেল) এবং উৎকেন্দ্রিকতা উভয়কেই এড়াতে[৪] এবং সমকেন্দ্রিক গোলকের যৌগিক ঘূর্ণন দ্বারা বিচরণকারী নক্ষত্রের অদ্ভুত ঘটনাগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন। এটি ছিল তার পূর্বসূরি ইবনে বাজ্জাহ (অ্যাভেম্পেস) এবং ইবনে তুফায়েল (আবুবাসার) দ্বারা প্রস্তাবিত গ্রহের গতি ব্যবস্থার একটি পরিবর্তির রূপ। তিনি টলেমির গ্রহের মডেল প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ হন, কারণ অ্যারিস্টটলের সমকেন্দ্রিক গোলকের উপর টলেমির উপচাক্রিক বা এপিসাইক্লিক মডেলটি ম্যাপ করার অসুবিধার কারণে তার প্রস্তাবিত মডেলের গ্রহের অবস্থানের সংখ্যাগত ভবিষ্যদ্বাণী টলেমির মডেলের তুলনায় কম সঠিক ছিল।[৫]

লাতিন অনুবাদের উপর ভিত্তি করে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, তার সিস্টেমটি আল-জারকালি দ্বারা বিকশিত স্থির তারার গতির সাথে মিলিত সিনিডাসের ইউডক্সাসের একটি হালনাগাদ এবং সংস্কার। তবে আন্দালুসীয় জ্যোতির্বিদদের কাছে ইউডক্সাসের কাজের প্রাপ্যতা বা সেই সম্পর্কিত জ্ঞান ছিল কিনা তা জানা যায়নি।[২]

আল-বিতরুজির সিস্টেমের একটি মূল দিক হল তার স্বর্গীয় গতির একটি বাহ্যিক কারণের প্রস্তাব। কীভাবে শক্তি নবম গোলকের মধ্যে স্থাপন করা প্রথম মুভার থেকে অন্য গোলকের কাছে স্থানান্তরিত হয়, অন্যান্য গোলকের পরিবর্তনশীল গতি এবং বিভিন্ন গতি ব্যাখ্যা করে তা নির্ণয় করা জন্য, তিনি "প্রেরণা" (জন ফিলোপোনাস দ্বারা প্রথম প্রস্তাবিত) এবং আবু আল-বারাকাত আল-বাগদাদির শাওক ("ইচ্ছা")-এর ধারণাটি একত্রিত করেন। তিনি অ্যারিস্টটলীয় ধারণার বিরোধিতা করেন যে, প্রতিটি বিশ্বের জন্য একটি নির্দিষ্ট ধরনের গতিশীলতা রয়েছে। এর পরিবর্তে তিনি সাবলুনার এবং মহাকাশীয় জগতে একই গতিশীলতা প্রয়োগ হওয়ার মতবাদ দেন।[২]


ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তার বিকল্প ব্যবস্থা ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত তার ধারণাগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক এবং দুইপক্ষেরই যুক্তিখণ্ডন অব্যাহত থাকে। [৩] নিকৃষ্ট গ্রহের ক্রম তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করার সময় কোপার্নিকাস ডি রেভোল্যুশিনিবাস গ্রন্থে তার সিস্টেমের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন।[৩]

কর্ম সম্পাদনা

আল-বিত্রুজি কিতাব আল-হায়াহ (তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিদ্যা/মহাবিশ্বতত্ত্বের বই, আরবি, كتاب الهيئة ) লিখেছেন। বইটিতে তিনি বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে টলোমির আলমাজেস্টের সমালোচনা উপস্থাপন করেছিল। এটি ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত বইটি ইউরোপে সুপরিচিত ছিল। সেসময় পণ্ডিতদের মধ্যে এটি টলেমির আলমাজেস্টের একটি বৈধ বিকল্প হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। [২]

১২১৭ সালে মাইকেল স্কট এই বইটি লাতিন ভাষায় ডি মোতিবাস সেলোরাম [৬] নামে অনুবাদ করেছিলেন। ১৫৩১ সালে ভিয়েনায় অনূদীত সংস্করণটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল। ১২৫৯ সালে মোশি ইবনে তিবন বইটির একটি হিব্রু অনুবাদ করেছিলেন।[২]

এছাড়াও জোয়ারের উপর একটি বেনামী গ্রন্থ রয়েছে (এস্কোরিয়াল এমএস ১৬৩৬, তারিখ ১১৯২)। এটি আপাতদৃষ্টিতে আল-বিত্রুজি থেকে ধার করা উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. J., Vernet। "al-Biṭrūd̲j̲ī" (ইংরেজি ভাষায়)। 
  2. Samsó 2007
  3. Samsó 1980
  4. Bernard R. Goldstein (March 1972). "Theory and Observation in Medieval Astronomy", Isis 63 (1), p. 39-47 [41].
  5. Ptolemaic Astronomy, Islamic Planetary Theory, and Copernicus's Debt to the Maragha School, Science and Its Times, Thomson Gale.(inaccessible document)
  6. Pederson, Olaf. (1978) Science in the Middle Ages. ed. by David Lindberg. Chicago: Chicago University Press. p. 321

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Helaine Selin, Encyclopaedia of the history of science, technology, and medicine in non western cultures, p. 160