নিউয়ের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

নিউয়ের ইতিহাস হলো পলিনেশীয় দেশীয় সম্প্রদায় সহ নিউয় অঞ্চল এবং অঞ্চলের জনগণের ইতিহাস। ৯০৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে সামোয়া থেকে পলিনেশীয় নাবিকরা এসে নিউয়ে প্রথম বসতি স্থাপন করে। ষোড়শ শতাব্দীতে টোঙ্গা থেকে আরও বসতি স্থাপকারীরা (বা সম্ভবত হানাদার) এখানে আগমন করে।[১]

১৭৭৪ সালে ক্যাপ্টেন জেমস কুকের দ্বিতীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভ্রমণকালে দ্বীপটি তার দৃষ্টিগোচর হলে প্রথম ইউরোপীয়রা দ্বীপটি সম্পর্কে জানতে পারে। অগ্রণী মিশনারি জন উইলিয়ামস ১৮৩০ সালে দ্বীপে অবতরণকারী প্রথম ইউরোপীয়। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ মিশনারিদের তৎপরতার পর ১৮৭৯ সালে  দ্বীপের ব্রিটিশদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় রাজাদের সাথে আলোচনা শুরু হয়। নিউজিল্যান্ডের গভর্নর লর্ড রনফুর্লি ১৯০০ সালে নিউয়ের উপরে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দেয়, এ কারণে দ্বীপটিকে নিউজিল্যান্ডের অভিভাবকত্বাধীনে রাখা হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিউয় তার জনসংখ্যার প্রায় ৪% হারায় কারণ নিউইজিল্যান্ড সেনাবাহিনীর অধীনে ১৫০ জন নিউয় সৈন্যকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে প্রায় কেউই ফিরে আসেনি। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বীপে সরাসরি কোন প্রভাব ফেলেনি।

নিউয় ১৯৭৪ সালে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এরপর থেকে ঘনঘন  ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে লোকজন দ্বীপ রাষ্ট্রটি ত্যাগ করতে থাকায় জনসংখ্যা ক্রমাগাত হ্রাস পাচ্ছে।

প্রাথমিক ইতিহাস সম্পাদনা

আঠারো শতকের গোড়ার দিকে নিউয়ে কোনও জাতীয় সরকার বা জাতীয় নেতা ছিল না বলে মনে করা হয়। সেই সময়ের আগে নেতা এবং পরিবার প্রধানরা জনসাধারণদের অংশবিশেষের উপর কর্তৃত্ব করে। ১৭০০ সালের দিকে সামোয়া বা টোঙ্গার সাথে যোগাযোগের ফলে রাজার ধারণা এবং প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল বলে মনে হয়। তখন থেকে পাতু-ইকি (রাজা) এর উত্তরাধিকারীরা এই দ্বীপে রাজত্ব করেছে, তাদের মধ্যে প্রথমজন ছিলেন পুনি-মাতা। তুই-তোগা ১৮৭৫ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন, তিনি নিউয়ের প্রথম খ্রিস্টান রাজা ছিলেন।[২] (দেখুন: নিউয় রাজার তালিকা)

ক্যাপ্টেন কুক সম্পাদনা

ক্যাপ্টেন জেমস কুক প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে দ্বীপটি দেখতে পান, কিন্তু স্থানীয় জনগণের তীব্র বিরোধিতার কারণে তিনি সেখানে অবতরণ করতে পারেননি। ১৯১১ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা দাবি করে যে স্থানীয়দের বিদেশী রোগের প্রতি ভয়ের কারণে এটি ঘটেছে।[৩] প্রতিক্রিয়া হিসাবে কুক নিউয় এর নামকরণ করেন সেভেজ আইল্যান্ড (বর্বরদের দ্বীপ)।

খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক সম্পাদনা

 
১৮৯৬ সালে থমাস অ্যান্ড্রুর উঠানো আলোফিতে গির্জা ভবনের অভ্যন্তরের ছবি।.

১৮৪৬ সাল নাগাদ লন্ডন মিশনারি সোসাইটির খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা দ্বীপের অধিবাসীদের প্রায় বেশিরভাগকে ধর্মান্তরিত করে ফেলে। ১৮৮৭ সালে রাজা ফাতাইকি যুক্তরাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে চিঠি লিখে নিউয়কে ব্রিটিশ আশ্রয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়। ১৯০০ সালে পুনরায় আবেদন করা হলে দ্বীপটিকে ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করা হয়, এবং পরের বছর এটি নিউজিল্যান্ডের সাথে যুক্ত করা হয়। নিউয়ের দূরবর্তীত্ব একই সাথে পাশাপাশি পলিনেশীয় অধিবাসী এবং কুক দ্বীপপুঞ্জের লোকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পার্থক্যের কারণে এটি আলাদাভাবে পরিচালিত হয়েছে।

 
১৯০০ সালে নিউয়েতে ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা উত্তোলন

১৯ শতকের অন্যান্য পরিদর্শনকারী সম্পাদনা

১৮৪৯ সালের জুলাইয়ে এই দ্বীপটি এইচ.এম.এস. হাভানা-এর ক্যাপ্টেন জন এরস্কাইন পরিদর্শন করেন।[৪]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

১৫০ জন নিউয় অধিবাসী যা দ্বীপের জনসংখ্যার ৪%, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউজিল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীতে সৈনিক হিসাবে কাজ করে।[৫][৬]

স্বায়ত্তশাসন সম্পাদনা

নিউজিল্যান্ডের সাথে জোট মুক্ত হয়ে ১৯৭৪ সালে নিউয় স্বায়ত্তশাসন লাভ করে, নিউজিল্যান্ড এই দ্বীপের সামরিক ও বৈদেশিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৯৬৫ সালে নিউয়কে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয় (কুক দ্বীপপুঞ্জের সাথে, যা অনুমোদিত হয়েছিল), কিন্তু এর স্বায়ত্তশাসন আরও এক দশক পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বলে।

নিউয়ীরা নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব বজায় রয়েছে এবং নিউজিল্যান্ডের মানের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। যে কোনও দেশের সাধারণ বাসিন্দার মানদণ্ড পূরণ করা নিউয়ীরা এই দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে বা দাঁড়াতে পারে। নিউয় নিউজিল্যান্ডের মুদ্রা ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে, তবে নিজস্ব ডাকটিকিট চালু করেছে (নিউয়ে নিউজিল্যান্ডের ডাকটিকিট বৈধ নয়, একই ভাবে নিউজিল্যান্ডে নিউয়ের ডাকটিকিট বৈধ নয়)।

সাম্প্রতিক ইতিহাস সম্পাদনা

২০০৪ সালের জানুয়ারিতে নিউয়ে এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় (ঘূর্ণিঝড় হেতা) আঘাত হানে, যার ফলে দ্বীপপুঞ্জের ১৬০০ অধিবাসীর মধ্যে ২০০ জন গৃহহীন হয়ে পড়ে। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা পুনর্গঠন না করার সিদ্ধান্ত নেয়, নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ফিল গফ মনে করেন যে যদি খুব বেশিসংখ্যক বাসিন্দা মৌলিক সেবা বজায় রাখতে দ্বীপ ছেড়ে চলে যায় তবে নিউজিল্যান্ডের সাথে জোট মুক্ত স্বায়ত্তশাসিত দেশ হিসাবে নিউয়ের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এর পরপরই নিউয়ের প্রধান ইয়ং ভিভিয়ান নিউজিল্যান্ডের সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

নিউজিল্যান্ডে ব্যপকহারে প্রবসনের ফলে দ্বীপের জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে (১৯৬৬ সালে জনসংখ্যা সর্বোচ্চ ৫,২০০ জন ছিল, সেখান থেকে কমে ২০০০ সালে ২,১০০ জনে দাড়ায়)।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Foster, Sophie। "Niue"Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৩ 
  2. S. Percy Smith, Niuē-fekai (or Savage) Island and its People, 1903, pp.36-44
  3. 1911 Encyclopedia, "Niue"
  4. "The Church Missionary Gleaner, October 1853" Savage IslandAdam Matthew Digital। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৫ 
  5. Pointer, Margaret. Tagi tote e loto haaku - My heart is crying a little: Niue Island involvement in the great war, 1914-1918. Alofi: Government of Niue; Suva: Institute of Pacific Studies, University of the South Pacific, 2000, আইএসবিএন ৯৮২-০২-০১৫৭-৮
  6. "Niuean war heroes marked" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে, Susana Talagi, Western Leader, May 22, 2008

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:ব্রিটিশ বৈদেশিক অঞ্চল