নাজমুন আরা সুলতানা

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারপতি

নাজমুন আরা সুলতানা (জন্ম: ৮ জুলাই, ১৯৫০) বাংলাদেশের একজন নারী বিচারক যিনি বাংলাদেশের হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টে আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসাবে প্রখ্যাত। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী মুনসিফ (সহকারী জজ) এবং জেলা জজ।[১] তিনি ২০১৭ সালের ৭ জুলাই অবসরে যান।

নাজমুন আরা সুলতানা
জন্ম৮ জুলাই, ১৯৫০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারপতি

জন্ম ও প্রথম জীবন সম্পাদনা

নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল কাশেম মঈনুদ্দীন ও মাতার নাম বেগম রশীদা সুলতানা দীন। তার ১১ বছর বয়সে পিতা মারা যান। তার মা ছিলেন ময়মনসিংহ রাধাসুন্দরী গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা এবং একজন চিত্রশিল্পী।[২][৩][৪]

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

নাজমুন আরা সুলতানা ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে। পরবর্তীতে তিনি ময়মনসিংহের মোমেনশাহী ল কলেজে ভর্তি হন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে তার প্রগতিমনা মায়ের উৎসাহ আর সমর্থনে ১৯৭২ সালে তিনি এলএলবি পাস করেন।[৩][৫][৬]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৭২ সালের জুলাই মাসে নাজমুন আরা সুলতানা ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পান। সেই সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের বিচারক হওয়া হওয়ার বিধান ছিল না। ১৯৭৪ সালে এই আইন তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ২০ নভেম্বর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিচার বিভাগের মুনসিফ হিসেবে যোগদান করেন নাজমুন আরা সুলতানা। নিম্ন আদালতে দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নাজমুন খুলনা, নারায়ণগঞ্জটাঙ্গাইলে দায়িত্ব পালন করেন। সাব-জজ হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৮২ সালে। কয়েক দফা পদোন্নতির পর ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজ হন। জেলা জজ হিসেবে ৯ বছর কাজ করার পর তিনি ২০০০ সালের ২৮ মে বাংলাদেশ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং দুই বছর পর হাইকোর্টে স্থায়ীভাবে যোগদান করেন।

হাইকোর্টে স্থায়ীভাবে যোগদানের ৯ বছর পর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন তাকে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চের নেতৃত্ব দেন ।

নাজমুন আরা সুলতানা নারী বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডব্লিউজেএ) প্রতিষ্ঠা করেন । এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থায় দু’বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন জাজেসের সেক্রেটারি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন জাজেসের অন্যতম পরিচালক। [৭][৮][৯][৩][১০][৫][১০][৩][১১]

উল্লেখযোগ্য রায় সম্পাদনা

নাজমুন আরা সুলতানা হাইকোর্টে অনেক রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে ফতোয়া অবৈধ বিষয়ক রায়টি ছিল বেশি আলোচিত। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি ফতোয়াকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেন। এছাড়াও তার দেওয়া উল্লেখযোগ্য রায়সমূহ হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির মামলা, চারদলীয় জোট সরকার আমলে বাদপড়া ১০ বিচারপতির মামলা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণবিষয়ক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়।[১২][১৩][১৪]

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এর সচিব কাজী নুরুল হককে বিয়ে করেন নাজমুন আরা সুলতানা। তাদের দুই ছেলে রয়েছে। তাদের বড় ছেলের নাম কাজী সানাউল হক উপল আর ছোট ছেলে এহসানুল হক সূর্য। [১৫][১৬]

অবসর গ্রহণ সম্পাদনা

২০১৭ সালের ৬ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন নাজমুন আরা সুলতানা। [৮][১৭][১৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. lawyersclubbangladesh.com। "Lawyers Club Bangladesh"। ২০১৭-০৭-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  2. "অবসরে যাচ্ছেন প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা | আদালত | The Daily Ittefaq"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  3. "সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা"। ২০১৭-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  4. "Last working day for the first female judge"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  5. "অবসরে যাচ্ছেন দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  6. "আত্মতৃপ্তি নিয়ে আজ বিদায় নিচ্ছি : বিচারপতি নাজমুন আরা"দৈনিক সকালের খবর। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "Last working day for the first female judge"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  8. "জেনে শুনে ভুল বিচার করলে তা হবে মহাপাপ: বিচারপতি নাজমুন আরা"। ২০১৭-০৭-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  9. Sun, The Daily। "আমি ব্যর্থ হলে ৪০০ নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না: বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রথম নারী বিচারপতি"আমি ব্যর্থ হলে ৪০০ নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না: বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রথম নারী বিচারপতি | daily-sun.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. BanglaNews24.com। "অবসরে যাচ্ছেন দেশের প্রথম নারী বিচারপতি"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  11. "Lawyers bid farewell to first female judge Justice Nazmun Ara Sultana" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; risingbd.com নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. "BBC Bangla - খবর - ফতোয়া নিয়ে আপিল"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  14. "আরেক মাইলফলকে বাংলাদেশের নারী - bdnews24.com"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  15. "আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা | Kaler Kantho"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬ 
  16. "http://www.channelionline.com/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8/"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  17. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :0 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  18. "'জেনে-বুঝে কখনো ভুল বিচার করিনি': বিচারপতি নাজমুন আরা | আদালত | The Daily Ittefaq"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৬