নরম্যান উইলিয়ামস

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

নরম্যান লিওনার্ড উইলিয়ামস (ইংরেজি: Norman Williams; জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ - মৃত্যু: ৩১ মে, ১৯৪৭) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সেমাফোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার ছিলেন। সাউথ অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি লেগ স্পিন বোলার হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত ছিলেন নরম্যান উইলিয়ামস

নরম্যান উইলিয়ামস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামনরম্যান লিওনার্ড উইলিয়ামস
জন্ম(১৮৯৯-০৯-২৩)২৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯
সেমাফোর, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৩১ মে ১৯৪৭(1947-05-31) (বয়স ৪৭)
সেমাফোর, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ স্পিন
ভূমিকাবোলার
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯১৯/২০ – ১৯২৮/২৯সাউথ অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৪
রানের সংখ্যা ৮৫০
ব্যাটিং গড় ১৫.৪৫
১০০/৫০ –/৫
সর্বোচ্চ রান ৫৬
বল করেছে ৪৭৭৮
উইকেট ১২২
বোলিং গড় ৩৯.১৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৪০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১২/-
উৎস: ক্রিকইনফো, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

শৈশবকাল সম্পাদনা

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সেমাফোরে ক্যাপ্টেন থমাস ও ই. জে. উইলিয়ামস দম্পতির সন্তান ছিলেন নরম্যান উইলিয়ামস। লু, এথেল, ফ্রেড, টম ও জ্যাক তার অন্য ভাই ছিল।[১] পোর্ট অ্যাডিলেড ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে প্রথম খেলতে নামেন। কিশোর অবস্থাতেই অ্যাডিলেড জেলা ক্রিকেটে শীর্ষস্থানীয় লেগ স্পিনার হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটান। ফলে, সাউথ অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে খেলানোর জন্য দর্শকদের দাবী উঠে। একজন সমর্থক মন্তব্য করেন যে, নরম্যান উইলিয়ামস তরুণ ও প্রাণোচ্ছাসে ভরপুর। চমৎকার ফিল্ডারও সে। দলের প্রয়োজনে সাবলিলভাবে ব্যাটিংয়ে সক্ষম। সারাদিনই সে বোলিং করতে পারে। এ ধরনের বোলার যে-কোন দলে অবলীলাক্রমে অন্তর্ভূক্তির দাবীদার।[২]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯১৯-২০ মৌসুম থেকে ১৯২৮-২৯ মৌসুম পর্যন্ত নরম্যান উইলিয়ামসের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল।

বিশ বছর বয়সে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে নরম্যান উইলিয়ামসের। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯১৯ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে প্রতিপক্ষ নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে খেলায় তিনি ৫০ ও ০ এবং ৩/১৩৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ঐ খেলায় তার দল ইনিংস ও ৩৩০ রানের বিরাট ব্যবধানে পরাজয়বরণ করেছিল।[৩]

ডানহাতি লেগ স্পিনার হিসেবে বলকে শূন্যে ফেলে সফলতা পেতেন। বলে গতি আনয়ণ ও তীক্ষ্ণ স্পিনে আর্থার মেইলিকে তিনি তার শিকারে পরিণত করেছিলেন। ডিসেম্বর, ১৯২৩ সালে অ্যাডিলেড ওভালে বল হাতে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা সফলতা পেয়েছেন। ৬/৪০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার পর খেলায় ১২/১৯৫ লাভ করেন তিনি।[৪] তবে, ক্ল্যারি গ্রিমেটের ন্যায় উদীয়মান বোলারের আবির্ভাবে ১৯২৩-২৪ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দের স্পিন বোলারের মর্যাদা নষ্ট হয়।[৫] ১৯২৪-২৫ মৌসুমে একবারমাত্র খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ হয় তার। এরপর ১৯২৫-২৬ মৌসুমে তাকে আর খেলানো হয়নি।[৬]

১৯২৬-২৭ মৌসুমে পোর্ট অ্যাডিলেডের পক্ষে চমৎকার মৌসুম অতিবাহিত করেন নরম্যান উইলিয়ামস। ঐ মৌসুমে ১৪.৮৩ গড়ে ৮০ উইকেট পান তিনি। ফলশ্রুতিতে, সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার জন্য পুনরায় আহুত হন। অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম খেলাতেই ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে খেলায় ১২/২৩৪ পান। গ্রিমেট পান ৩/২২৭ ও ভিক্টোরীয় স্পিনার ডন ব্ল্যাকি লাভ করেন ১০/২৪৫।[৭]

ঐ মৌসুম জুড়ে নরম্যান উইলিয়ামসকে সম্ভবতঃ অস্ট্রেলিয়ার সেরা উত্তরণকারী বোলার হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। তার বল বেশ নিখুঁত ছিল। বলকে উভয় দিকেই বাঁক খাওয়াতে সক্ষমতা দেখাতেন। ধূর্ততার সাথে বল বেশ বিপজ্জ্বনক হয়ে উঠতো। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে তিনি বেশ জনপ্রিয় খেলোয়াড়ে পরিণত হন ও খেলায় আদর্শ উজ্জীবনী শক্তি প্রদানকারীরূপে পরিচিতি পান।[৮][৮] ১৯২৬-২৭ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান। ৩২ গড়ে ৩৫ উইকেট লাভ করেন। তুলনান্তে ব্ল্যাকি ২৪.৬০ গড়ে ৩৩, গ্রিমেট ৩৪.৩০ গড়ে ৩০ ও মেইলি ৪২ গড়ে ২০ উইকেট পেয়েছিলেন।[৯]

নরম্যান উইলিয়ামসের এ উত্তরণে বাদ-বাকী একাদশের পক্ষে খেলার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ তারিখে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হওয়া অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ৬/১৭৪ পান।[১০]

১৯২৭-২৮ মৌসুমে তেমন ভালো খেলা উপহার দিতে পারেননি তিনি। ৭৩.০০ গড়ে মাত্র পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন। তবে, ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ৩৪.৯০ গড়ে ২৪ উইকেট পান। জানুয়ারি, ১৯২৯ সালে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সর্বশেষবারের ন্যায় অংশ নেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ২/৯৫ পান।[১১] তবে, ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে থাকেন। পোর্ট অ্যাডিলেডের পক্ষে ১৮.৮৫ গড়ে ৮৯৪ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[১২] অদ্যাবধি অ্যাডিলেড জেলা প্রতিযোগিতায় তার সংগৃহীত উইকেটগুলো রেকর্ড হিসেবে টিকে রয়েছে স্ব-মহিমায়।[১৩] এগারোবার জেলা ক্রিকেট মৌসুমে শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারী ছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, নয়বার উপর্যুপরী এ সফলতা পান।[১৪]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ক্রিকেটের বাইরে নরম্যান উইলিয়ামস দন্তচিকিৎসক ছিলেন।[১৫] এছাড়াও, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।[১৬]

৩১ মে, ১৯৪৭ তারিখে ৪৭ বছর বয়সে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সেমাফোর এলাকায় আকস্মিকভাবে নরম্যান উইলিয়ামসের দেহাবসান ঘটে। জেলা ক্রিকেটের উন্নয়নে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পোর্ট অ্যাডিলেডের নিজ জন্মস্থানের অ্যালবার্টন ওভালের স্কোরবোর্ডের তার সম্মানার্থে রাখা হয়।[১৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Family Notices", The Advertiser, 5 June 1947, p. 16.
  2. 'One of the paying public', "Interstate cricket", The Register (Adelaide), 15 December 1919, p. 4.
  3. "South Australia v New South Wales – Sheffield Shield 1919/20"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৫ 
  4. "South Australia v Queensland – Other First-Class matches in Australia 1923/24"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৫ 
  5. "Death of Former State Cricketer", Chronicle (Adelaide), 5 June 1947, p. 42.
  6. "First-Class Matches played by Norman Williams (34)"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৫ 
  7. "South Australia v Victoria Sheffield Shield 1926/27"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৫ 
  8. "Improved Slow Bowler", News (Adelaide), 1 January 1927, p. 3.
  9. "First-class Bowling in Australia for 1926/27 (Ordered by Average)"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  10. "Australian XI v The Rest, Other First-Class matches in Australia 1926/27"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৫ 
  11. "South Australia v New South Wales, Sheffield Shield 1928/29"CricketArchive। Association of Cricket Statisticians and Historians। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৫ 
  12. Sando, p. 138.
  13. Sando, p. 170.
  14. Kneebone, H. "Tribute to N.L. Williams", The Advertiser (Adelaide), 6 June 1947, p. 13.
  15. Their tribute", The Kadina and Wallaroo Times, 6 June 1947, p. 1.
  16. Kneebone, H. "Ex-Cricketer's Death", The Advertiser, 2 June 1947, p. 12.
  17. Sando, p. 49.

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা