নমঃশূদ্র
এই নিবন্ধটিতে একজন বিশেষজ্ঞের মনোযোগ প্রয়োজন।(ফেব্রুয়ারি ২০২৩) |
নমঃশূদ্র বা নমঃ'স্বেজ'-এর অর্থ নির্ধারণ করতে হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি জাতি সমূহ। এই গোষ্ঠীর বিস্তার মূলত বৃহৎবঙ্গ বর্তমানে যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বসবাস করছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা অল্প সংখ্যায় ছড়িয়ে আছে।।[১] নমঃ নাম টি নমস মুনি থেকে প্রাপ্ত হয়েছে। ব্যবস্থার ভিত্তিতে তাদের নামের শেষে শূদ্র জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে তাদের শূদ্র বলা হয় নি। এর আগের কোনো প্রমাণ বা উল্লেখ নেই। এটি ১৯১১ এর অশেপাশে বর্ণ বা অবর্ণ জনের মধ্যে কিছু বর্ণবাদীদের কেউ ছড়িয়ে দিয়ে থাকবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বস্তুত সমস্ত তথ্য প্রমাণে এরা একটি অবর্ণ গোষ্ঠী যাদের কয়েকটি গোত্র নামের গল্প জনসমাজে প্রচলিত ছিলো। অবর্ণ গোষ্ঠীর গোত্র নামের মধ্যে নমঃ কাশ্যপ রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ বৈষ্ণব সম্প্রদায় অনুগামী হয়েছিল। পরিসংখ্যানে তাদের পূর্বপুরুষের শ্রুতি অনুযায়ী, অধিকাংশ নমঃই কাশ্যপ গোত্রের অন্তর্গত।[২] এরা সাধারণত হীরা (সকলেই) বালা, বিশ্বাস(সকলে নয়), মণ্ডল (সকলে না), হালদার (সকলে নয়), সরকার (সকলে নয়), সিকদার, মজুমদার(সকলে নয়), দাস (সকলে নয়), রায় (সকলে নয়) ইত্যাদি পদবি ব্যবহার করে ।
ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্ বাংলা সাহিত্যে নমশূদ্র শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে আলোচনার অভাব রয়েছে এবং এর উৎপত্তিকালও অনির্ধারিত। বেশ কয়েকটি তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু তাদের কোনটিকে সমর্থন করে এমন কোন তথ্য প্রমাণ বা ব্যাপক ঐকমত্য নেই।
উৎপত্তি সম্পাদনা
নমশূদ্র সম্প্রদায় পূর্বে চন্ডাল বা চণ্ডাল নামে পরিচিত ছিল । তারা চার-স্তরের আচার-অনুষ্ঠান বর্ণ ব্যবস্থার বাইরে বসবাস করত এবং তাই হিন্দু 'উচ্চ বর্ণ' সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তারা ছিল বহিষ্কৃত এবং অস্পৃশ্য ।
সম্প্রদায়টি ঐতিহ্যগতভাবে তাদের জন্মভূমির জলাভূমিতে মাছ ধরা এবং নৌকার চালক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। বছরের পর বছর ধরে, যেহেতু জলাভূমিগুলি কৃষি কাজের জন্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, তারা একটি প্রধান পেশা হিসাবে কৃষক কৃষিতে পরিণত হয়েছিল। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বেশ খারাপ এবং ঋণের হার অনেক বেশি।
ইতিহাস সম্পাদনা
১৮৯১ সালে ব্রিটিশদের একটি পরিসংখ্যানে তাদের পূর্বপুরুষের শ্রুতি অনুযায়ী , অধিকাংশ নমঃশূদ্র বা নমঃস্বেজ ই কাশ্যপ গোত্রের অন্তর্গত।[৩] এছাড়াও কয়েকটি গোত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। ঋষি কাশ্যপ এর পরবর্তী নমস মুনির বংশধর হেতু তারা নিজেদের সম্প্রতি নমঃস্বেজ বলে অভিহিত করে ।
নমঃস্বেজ ও চণ্ডাল প্রসঙ্গ সম্পাদনা
সেন যুগঃ বল্লাল সেনের রাজ্য কালে যখন তিনি অধিক বয়সে এক ডোম নতকীকে বিবাহ করেন তখন তাকে নিয়ে সারা রাজ্য জুড়ে দুর্নাম ছড়িয়ে পরে। বল্লাল সেন সেই দূর নাম থেকে মুক্তি জন্য মহাভোজের জন্য রাজের সব প্রজাদের নিমন্ত্রণ দিন। কিন্তু নমস্য পারশব ব্রাহ্মণরা সেখানে যেতে আপত্তি পোষন করে। ফলে বল্লাল সেন তাদের চন্ডাল অখ্যায়িত করে, রাজ কার্য থেকে বহিষ্কার করে তাদের উপর নির্যাতন শুরু করে। তখন তাদের বল্লাল সেন ব্রাহ্মণত্ব মুছে ফেলা চেষ্টা করে এবং রাজ্য থেকে বিতারিত করেন। তখন পারশব ব্রাহ্মণরা প্রাণ বাচাতে পাহাড় উপকূলে,পূর্ব বঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। ব্রটিশ আমলঃ ১৮৭১ সালের সেন্সাস রিপোর্টে ব্রিটিশ সরকারের ও বিধর্মী দের চক্রান্তে বঙ্গের নমঃ ক্ষুদ্র জাতিকে নমঃজাতিকে ‘চণ্ডাল জাতি’ নামে আখ্যত করে যাতে তারা ক্রোধিত হেয়ে তারা হিন্দু সমাজের পরিত্যাগ এবং ধর্ম পরিবর্তন করে নিক। এই সময় পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৮৭১ সালের সেন্সাস রিপোর্টের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমানের নমঃশূদ্ররা যে শুধু নমঃ জাতি বলেই স্বীকৃত ছিল তা আমরা ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের ‘বাংলার ইতিহাস’ ও রমাপ্রসাদ চন্দ্রের ‘গৌড়মালা’ থেকে জানতে পারি। তাই চণ্ডাল’ নাম অপসারণ করে নমঃ নামকরণের দাবিতে গুরুচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলনে অতিষ্ঠ হয়ে এবং বঙ্গভাষা আন্দোলনের পড়ে শেষ পর্যন্ত তারা কৌশল বদলাতে বমানিত করে।
নমঃশূদ্র বা নমঃস্বেজ আন্দোলন সম্পাদনা
মতুয়া ধর্মসম্প্রদায়কে কেন্দ্র করেই নমঃশূদ্রদের সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। তাদের আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দি গ্রামে। নমঃশূদ্ররা এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে একটি সমিতি গঠন করে এবং নিয়মিত উন্নয়নী সভার আয়োজন করে। তা ছাড়া যাত্রানুষ্ঠান ও প্রতি পরিবার থেকে মুষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমেও আন্দোলনের বিস্তার ঘটে। নমঃশূদ্ররা ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে Bengal Namasutra Association প্রতিষ্ঠা করে পুরোপুরি সংগঠিত হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে।
- নমঃশূদ্ররা তাদের নমঃশূদ্র নামের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দাবি করেছিল। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র শ্রী গুরুচরণ বা গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাতে। এবং তাকে প্রভূত সাহায্য করেছিলো মিড্ সাহেব। এর আগে ব্যবস্থা লিখিয়ে হিন্দু বর্ণ সমাজের পণ্ডিতদের সম্মতি নিতে হয়। সেখানে ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার প্রধান পণ্ডিত সহ বিভিন্ন জেলার আরও ৪১ জন পণ্ডিত হস্তাক্ষর করে । হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রত্যাদেশ নাম অর্থাৎ গোত্র সূত্র ধরে নমস মুনির থেকে সৃষ্ট বলে আত্মপরিচয়ের কথা বলা হয়েছে এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর । জনগণনার নথিতে নাম পরিবর্তনের দাবিপত্রের সাথে এই ব্যবস্থার অনুলিপি জমা দেওয়া হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারিতে নমঃশূদ্র নামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- নমঃশূদ্ররা তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ-সুবিধার দাবি করে এবং এক্ষেত্রে তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে সক্ষম হয়।
- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নমঃশূদ্রদের দাবি ছিল পৃথক নির্বাচন ও স্বয়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি সংখ্যা বাড়ানো। ব্রিটিশ সরকার এক্ষেত্রেও নমঃশূদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাই নমঃশূদ্ররাও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্ৰহণ করেনি।[৪]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ Bose, N.K. (1994 revised ed.)। The Structure Of Hindu Society। Orient Longman Limited। পৃষ্ঠা 161–162। আইএসবিএন 81-250-0855-1। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Risley, Herbert Hope (১৮৯১)। The Tribes and Castes of Bengal। 2।
- ↑ Risley, Herbert Hope (১৮৯১)। The Tribes and Castes of Bengal। 2।
- ↑ ইতিহাস সহায়িকা। ৬সি রমানাথ মজুমদার স্ট্রীট, কলকাতা- ৭০০০০৯। জানুয়ারি, ২০১৬। পৃষ্ঠা ৩২৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)