ড.ননীগোপাল মজুমদার (১ ডিসেম্বর ১৮৯৭ – ১১ নভেম্বর ১৯৩৮) ছিলেন একজন বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ যিনি চানহুদাড়ো সহ সিন্ধুতে ৬২টি সিন্ধু সভ্যতার ভগ্নাবশেষবহুল স্থান আবিষ্কার করার জন্য কৃতিত্ব অর্জন করেন। [১]

ননীগোপাল মজুমদার
জন্ম
ননীগোপাল মজুমদার

(১৮৯৭-১২-০১)১ ডিসেম্বর ১৮৯৭
মৃত্যু১১ নভেম্বর ১৯৩৮(1938-11-11) (বয়স ৪০)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
দাম্পত্য সঙ্গীস্নেহলতা মজুমদার
সন্তানঅধ্যাপক তাপস মজুমদার

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

ননীগোপাল মজুমদারের জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের যশোহরের দেবরাজপুরে। পিতা  বরদাপ্রসন্ন মজুমদার ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মাতা ছিলেন সরোজিনী দেবী। [১] ননীগোপাল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন [১] ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি ও গ্রিফিথ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল প্রাচীন খরোষ্টী লিপিমালা। ভারতের ইতিহাসের বহু উপকরণ-সংগ্রহ এই লিপির পাঠোদ্ধারের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। [১] এম.এ পাশের পরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বৎসরের  অধ্যাপনা শেষে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহীর বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির অধ্যক্ষ হন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে  তিনি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় (এএসআই)  যোগ দেন এবং স্যার জন মার্শালের অধীনে গবেষণার কাজ করেন,মহেঞ্জোদাড়ো খননকার্যে  অংশ নেন । [২]

প্রত্নতত্ত্ব কাজ সম্পাদনা

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সার্কেলের সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত হন, কিন্তু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে কলকাতায় তৎকালীন সদর দপ্তরে সহকারী সুপারিনটেনডেন্টের পদে বদলি হন [১]

সিন্ধুতে অনুসন্ধান সম্পাদনা

ননীগোপাল মজুমদার ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সিন্ধু প্রদেশে জরিপ-অন্বেষণ করেন। [২] অনুসন্ধানের সময়, তিনি আবিষ্কার করেন যে, নিম্ন সিন্ধু উপত্যকায় আদি সিন্ধু যুগের প্রথম দিকে জনবসতি ছিল। [২] স্বল্প অনুদান রাশিতে, ১৯২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে, ননীগোপাল মহেঞ্জোদারোর কাছে 'ঝুকার' সিন্ধু উপত্যকার স্থানটি খনন করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে,  মজুমদার 'থারো পাহাড়' এবং 'চানহুদাড়ো' নামক দুটি নতুন স্থান খনন করেন। [২]১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে, ননীগোপাল মহেঞ্জোদাড়োর কাছে ডোকরি ছেড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে কির্থর পর্বতমালা বরাবর চলে যান। [২]১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ফিরে আসার সময় তিনি ৩২টিরও বেশি প্রাগৈতিহাসিক স্থান আবিষ্কার করেন। তাঁর সিন্ধু অনুসন্ধান ও খননের বিস্তারিত প্রতিবেদন- 'Exploration of Sind' শীর্ষক গ্রন্থ ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি বিবরণী হিসাবে প্রকাশিত হয় [২] [৩]

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর, ননীগোপালকে পুনরায় সিন্ধু উপত্যকার  অঞ্চলে অন্বেষণ করার জন্য ছয় মাসের জন্য সিন্ধুতে নিযুক্ত করা হয়। [২][১] তিনি ২০০ মাইল পায়ে হেঁটে চ্যালকোলিথিক যুগের ছয়টি স্থান আবিষ্কার করেন। [১]

মৃত্যু সম্পাদনা

৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের জন্য   সিন্ধুপ্রদেশের দাদু জেলায়  যান। সেখানকার জোহি'র  'রোহেলজি কুন্ড' নামক এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে ১১  নভেম্বর সকালে  গাজ নদীর তীরে' এক ছোট হিন্দু মন্দিরে পূজা দেওয়ার সময় উপজাতীয় হুর দস্যু আক্রমণে  নিহত হন। [২] [১] যেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে একটি ফলক চিহ্নিত করা হয়েছে। [৩]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ননীগোপাল মজুমদার  স্নেহলতা মুখোপাধ্যায়কে বিবাহ করেন। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র তাপস মজুমদার (১৯২৯ -২০১০)। [১] ননীগোপাল যখন মারা যান, তখন তার বয়স ছিল নয় বছর মাত্র। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং  পরে ওই কলেজেই  অর্থনীতির অধ্যাপক হন। [৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "N. G. Majumdar remembered"Dawn। ৩১ জুলাই ২০১১। 
  2. Flam, Louis। "The Sindh Archaeological Project: Explorations in the Lower Indus Basin and Western Sindh"। Connections and Complexity: New Approaches to the Archaeology of South Asia। পৃষ্ঠা 91–92। 
  3. "Tribute paid to archaeologist N G Majumdar"Dawn। ১৬ জানুয়ারি ২০১১। 
  4. "Obituary:Tapas Majumdar (1929-2010)"The Telegraph। ১৯ অক্টোবর ২০১০।