নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যাম

নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যাম (১৮৯০ - ২৬ জুন ১৯৬৪) ছিলেন শিলচরের লব্ধ-প্রতিষ্ঠ আইনজীবী, খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক[১] বিশ শতকের অসমের বরাক উপত্যকায় রবীন্দ্রচর্চার পথিকৃৎ তথা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিলেন তিনি।[২] [৩]

নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যাম
জন্ম১৮৯০
বাসুদেবপুর,শ্রীহট্ট, ব্রিটিশ ভারত (বৰ্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৬ জুন ১৯৬৪(1964-06-26) (বয়স ৭৩–৭৪)
দাম্পত্য সঙ্গীমালতী শ্যাম (বি.১৯১৯)
সন্তানমনুজেন্দ্র শ্যাম (পুত্র)
পিতা-মাতানবীনচন্দ্র শ্যাম (পিতা)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যামের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের শ্রীহট্ট তথা সিলেট জেলার পরবর্তীতে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে। পিতা নবীনচন্দ্র শ্যাম। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাশের পর ভর্তি হন সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে। এখান থেকে আই.এ পাশের পর কলকাতায় আসেন। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এল পাশ করেন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

প্রথমে কিছুদিন মৌলভীবাজারে এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ হতে শিলচরে দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বৎসর আইন ব্যবসা করে প্রভূত খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কিছুদিন তিনি সরকারি উকিল ছিলেন। [১] মূলপেশা তার আইন ব্যবসা হলেও আসামের শিলচরে সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন নগেন্দ্রচন্দ্র। তিরিশের দশকে 'মাসিক ভবিষ্যৎ' নামে এক জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি 'সাপ্তাহিক সুরমা' পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। সেই সময়ে অসমের বাঙালি ও বাংলার পূর্বাংশের বাঙালিদের মধ্যে পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি কমলগঞ্জেরও প্রথম সাংবাদিক হিসাবে পরিচিতি পান। [২] শিলচরে তার পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে এক সাহিত্যগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া 'প্রাচ্যবার্তা', 'বর্তমান' পত্রিকার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা বিষয়ে তার সুচিন্তিত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বড়োগল্প, কবিতা, রসরচনাতে পারদর্শী ছিলেন। [১] বিভিন্ন সময়ে ছদ্মনাম "অনিরুদ্ধ গুপ্ত" ব্যবহার করতেন। তিনি যেমন রবীন্দ্র অনুরাগী ছিলেন, তেমন রবীন্দ্রচর্চার মধ্যে রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। এ বিষয়ে তার সমালোচনামূলক গ্রন্থটি হল- রূপ ও রস। তার অপর গ্রন্থটি - রবীন্দ্রনাথ, ধর্ম ও সমাজ[১]

সুরমা উপত্যকা অঞ্চলের সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজকর্মে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিতেন। সেজন্য তাকে অনেক সময় বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের পরিকল্পনায় স্ত্রী মালতী দেবী, পরিবারের সদস্যা ও বন্ধুকন্যা ও ছেলেদের নিয়ে নৃত্য ও অভিনয়ের অনুষ্ঠান করেন। তার স্ত্রী মালতী শ্যাম ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মেয়েদের নিয়ে এ আই ডব্লিউ সি'র শাখা শিলচর নারীকল্যাণ সমিতি গঠন করেন এবং তাই ব্যবস্থাপনায় অসমে শিলচরের মেয়েরা প্রথম প্রকাশ্যে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করে। শিলচরে নগেন্দ্রচন্দ্র "বাণী পরিষদ" প্রতিষ্ঠা করেন। শিলচর ল' কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। এছাড়াও, তিনি স্থানীয় গুরুচরণ কলেজের গভর্নিং বডি ও গান্ধী স্মারকনিধির সভাপতি হন। বিভিন্ন সঙ্গীত শিক্ষায়তন, সুরলোক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল।[১]

১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন প্রয়াত হন। তার পুত্র মনুজেন্দ্র শ্যাম ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রবীন্দ্রানুরাগী। [৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩২১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "সাংবাদিকতায় কমলগঞ্জ: গৌরবের অতীত ও বর্তমান"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০৪ 
  3. "মনুজেন্দ্র শ্যাম প্রয়াত"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০৪