ধর্মরাষ্ট্র

ধর্মভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা

ঈশ্বরতন্ত্র বা ধর্মরাষ্ট্র বলতে এমন ধরনের সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কোন দেব-দেবী বা ঐশ্বরিক শক্তিকে সর্বোচ্চ শাসক কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয় এবং যিনি সরকারের দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য মধ্যস্থতাকারী কোন ব্যক্তি তথা শাসককে স্বর্গীয় নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।[২][৩][৪]

দেবতা জুপিটার বা জোভ বেশে রাজদন্ড ও গ্লোব হাতে সম্রাট অগাস্টাস ( সময়: খৃষ্টীয় প্র্রথম শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশ)[১]

প্রাচীন রোমের ইম্পেরিয়াল কাল্ট বা রাজ পূজার ধারা রোমের সম্রাটদের এবং তাদের পরিবারের কিছু সদস্যকে রোমান রাজ্যের ঐশ্বরিকভাবে অনুমোদিত কর্তৃপক্ষ (অক্টোরিটাস)হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এ ব্যবস্থায় পূজ্য বা আরাধ্য ঈশ্বর কর্তৃক একজন বিদ্যমান সম্রাটের কর্মকাণ্ড ও শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত এবং সাংবিধানিক ধরে নেয়া হয়। সুতরাং সে সম্রাটের শাসন ব্যবস্থায় অবশ্যই প্রথাগত দেবদেবী এবং অলিখিত বিধিবিধানের প্রতি যথাযথ আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

উৎপত্তি সম্পাদনা

ঈশ্বরতন্ত্র শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ θεοκρατία (থিওক্রেশিয়া) থেকে যার অর্থ " ঈশ্বরের শাসন"। আর থিওক্রেশিয়া শব্দের দুটি অংশের উৎপত্তি হয়েছে অন্য দুটি গ্রীক শব্দ θεός (থিয়োস) যার অর্থ "ঈশ্বর" এবং κρατέω (ক্রেটো) থেকে যার অর্থ "শাসন করা"। সুতরাং গ্রীক ভাষায় শব্দটির অর্থ হল " ঈশ্বর (বা একাধিক ঈশ্বর) " বা ‌ঈশ্বরের মানব অবতার (বা মানব অবতারগণ)কর্তৃক শাসিত।

শব্দটি প্রথম খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ইহুদিদের বিশেষ ধারার সরকারকে বোঝাতে তৈরি করেছিলেন ফ্ল্যাভিয়াস জোসেফাস। জোসেফাস যুক্তি দিয়েছেন যে, মানবজাতি যে বিভিন্ন ধরনের শাসন ধারার বিকাশ ঘটিয়েছে তার বেশিরভাগ নিম্নলিখিত তিন ধরনের শাসন পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র। তবে জোসেফাসের মতে, ইহুদিদের সরকার পদ্ধতিটি স্বতন্ত্র। জোসেফাস তাদের রাষ্ট্রপদ্ধতিকে বর্ণনা করার জন্য "ঈশ্বরতন্ত্র" শব্দটি ব্যবহার করেছেন যেখানে মূসা ধর্মাধিকারী, ঈশ্বর সার্বভৌম এবং তাঁর বাক্যই আইন।[৫]

আলোকিত যুগের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত জোসেফাসের সংজ্ঞা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু তারপর এই শব্দটি নেতিবাচক অভিব্যক্তি গ্রহণ করে। আর হেগেলের দুর্বোধ্য ভাষ্য দ্বারা শব্দটির স্বাভাবিক অভিব্যক্তির পুনরুদ্ধার হয়নি বললেই চলে।[৬] শব্দটির প্রথম ইংরেজী ব্যবহার হয়েছিল ১৬২২ সালে, যার অর্থ ছিল "ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার অধীনে যাজকীয়, ধর্মসম্মত বা ধর্মসম্মত সরকার" (যেমন রাজাদের উত্থানের আগে বাইবেলের ইসরায়েল); ১৮২৫ সাল থেকে শব্দটি "রাজনৈতিক ও নাগরিক শক্তি সরবরাহকারী পুরোহিত বা ধর্মীয় সংস্থা" অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

সারমর্ম সম্পাদনা

কিছু কিছু ধর্মে, শাসক (যিনি সাধারণত একজন রাজা) ঈশ্বরের (বা দেবতাদের) পছন্দনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতো এবং তাদের অবস্থান ছিল প্রশ্নাতীত। কখনও কখনও তাদের নিজস্ব অধিকারে তারা দেবতার বংশধর এমনকি দেবতা হিসেবেও গণ্য হতো।

বর্তমানে এমন সরকারও রয়েছে যেখানে যাজকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে এবং সর্বোচ্চ নেতা তার সব ধরনের কাজের জন্য জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। ঈশ্বরতান্ত্রিক সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে, "ঈশ্বর নিজেই রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে স্বীকৃত",[৭] কোইন গ্রীক শব্দ θεοκρατία "ঈশ্বরের শাসন" থেকে ঈশ্বরতন্ত্র শব্দটির আবির্ভাব যা ইসরায়েলের ও জূদার রাজ্যগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে জোসেফাস ব্যবহার করেছেন।[৮] আক্ষরিক অর্থে, ঈশ্বরতন্ত্রের অর্থ ঈশ্বর বা দেবতাদের দ্বারা শাসিত হওয়া এবং যা প্রধানত অভ্যন্তরীণ তথা "হৃদয়ের শাসন"। চার্চের শাসন বা আনুষঙ্গিক ধর্মীয় নেতৃত্ব বোঝাতে ওপরের আলোচনায় শব্দটিকে যে অর্থে বোঝানো হয়েছে তাকে ধর্মতত্ত্বের মাধ্যমে সবচেয়ে যথার্থভাবে প্রকাশ করা সম্ভব।[৯]

নিখাদ ঈশ্বরতত্ত্বে, নাগরিক শাসকের সভ্যতার ধর্ম বা বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মূসা ইসরায়েলীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং মুহাম্মদ আদি মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ধর্মীয় চরিত্র নিয়োগের এবং ধর্মভিত্তিক সরকার গঠনের প্রবণতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্ধক্য রয়েছে। একটি ধর্মতত্ত্ব এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ধর্মীয় নেতারা রাজ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন, তবে তারা দাবি করেন না যে তারা ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের মাধ্যম। যেমন, ইউরোপীয় মধ্যযুগের সামন্ত-বিশপরা, যেখানে বিশপ নিজেও অস্থায়ী শাসক ছিলেন। এই জাতীয় রাষ্ট্র তার নিজস্ব প্রশাসনের জন্য ধর্মের প্রশাসনিক শ্রেণিবিন্যাস ব্যবহার করতে পারে, বা এর দুটি "অস্ত্র" থাকতে পারে - প্রশাসক এবং যাজক - তবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক শ্রেণিবিন্যাস ধর্মীয় শ্রেণিবিন্যাসের অধীনস্থ হয়। পোপের রাজ্যগুলোতে পোপতন্ত্র ঈশ্বরতন্ত্র এবং ধর্মতত্ত্বের মাঝে একটি মধ্যম স্থান দখল করেছিল কেননা পোপ কখনও নিজেকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রত্যাদেশ পাওয়া নবী হিসেবে দাবী করেননি এবং তার আদেশ নাগরিক আইনেও পরিণত করেননি। ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত রাজতন্ত্রগুলি এই দুটি মেরুর মধ্যে পড়ে।

ঈশ্বরতন্ত্র বিষয়টি অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ সরকার যাদের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে অথবা যারা ঐশ্বরিক বা নৈতিক ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং যাদের রাজতন্ত্রগুলো "ঈশ্বরের অনুগ্রহের দ্বারা" পরিচালিত হয় তাদের থেকে পৃথক। এই শব্দটির সর্বাধিক প্রচলিত ব্যবহার অনুযায়ী কিছু নাগরিক শাসক প্রভাবশালী ধর্মের নেতা (যেমন, বাইজেন্টাইন সম্রাট আনুষ্ঠানিকভাবে গির্জার পৃষ্ঠপোষক এবং রক্ষক)। এক্ষেত্রে ঈশ্বর বা উচ্চতর শক্তির পক্ষ থেকে তাদের আইনগুলো তৈরি হয়েছে বলে দাবী করা হয় যা স্থানীয় ধর্ম দ্বারা বিশেষায়িত এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও আইনসমূহের ঐশ্বরিক অনুমোদনের মাধ্যমে অনুমোদিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলে সিজারোপেপিস্ট (সমাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতা সম্পন্ন সরকার) শাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য অবশ্য ধর্মতান্ত্রিক ছিল না, কারণ যাজক বা প্যাট্রিয়ার্ক সম্রাটের কাছে জবাবদিহি করতেন সম্রাট নয়। একইভাবে টিউডর ইংল্যান্ডে রাজ শাসনই চার্চকে রোম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য করেছিল যাতে রাজকীয় ( বিশেষত পরবর্তীকালে সংসদীয়) ক্ষমতা অ্যাঙ্গলিকান শ্রেণিবিন্যাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং বেশিরভাগ গির্জার সম্পত্তি ও আয় বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

ধর্মনিরপেক্ষ সরকার রাষ্ট্রীয় ধর্মের সাথে সহাবস্থান করতে পারে বা নাগরিক আইনের কিছু দিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে অর্পণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলে বিবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ধর্মীয় সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় যারা প্রত্যেকে তাদের সম্মানিত অনুগামীদের জন্য বিবাহের পরিষেবা সরবরাহ করে অথচ নাস্তিকদের জন্য বা যেকোন ধর্মের নাগরিক বিবাহের কোনও অস্তিত্ব নেই এমনকি অ-স্বীকৃত সংখ্যালঘু ধর্ম দ্বারা বিবাহেরও কোন অস্তিত্ব নেই।

বিদ্যমান ধর্মরাষ্ট্রসমূহ সম্পাদনা

খৃষ্টান ধর্মরাষ্ট্রসমূহ সম্পাদনা

ঐতিহাসিকভাবে আর্মেনিয়া, আবিসিনিয়া, জর্জিয়া, রোমান সাম্রাজ্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য নিজেদের খৃষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল। বর্তমানে আরো অনেকগুলো রাষ্ট্র একইভাবে নিজেদের খৃষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে যার মধ্যে রয়েছে, আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, ডেনমার্ক, গ্রীনল্যান্ড, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভাদর, ইংল্যান্ড, ইথিওপিয়া, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, মাল্টা, মোনাকো, নরওয়ে, সামোয়া, টোঙ্গা, টুভ্যালু, ভ্যাটিকান সিটি, জাম্বিয়া। একটি খৃষ্টান রাষ্ট্র অন্য যেকোন ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক অথবা অন্যান্য ধর্মীয় রাষ্ট্র তথা একটি ইহুদী বা ইসলামী রাষ্ট্র থেকে বিপরীত আদর্শে অবস্থান করে।

পবিত্র সাগর (ভ্যাটিকান সিটি) সম্পাদনা

১৮৭০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রোম দখলের পর, ইতালী ভ্যাটিকানের সাথে রোম সহ পোপশাসিত রাজ্যগুলো যুক্ত করে নেয়। ১৯২৯ সালে, ইতালীয় সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত ল্যাটরান চুক্তির মাধ্যমে ভ্যাটিকান সিটি প্রাক্তন পোপশাসিত রাজ্যগুলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন[১০] হয়ে নতুন ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে(জনসংখ্যা ৮৪২) আনুষ্ঠানিকভাবে সৃষ্টি এবং স্বীকৃত হয়েছিল।[১১]

ভ্যাটিকান রাজ্যের প্রধান ব্যক্তি পোপ, তিনি চার্চের সেনেটরিয়াল-অধিকারীদের এসেম্বলী কলেজ অফ কার্ডিনালস দ্বারা নির্বাচিত। তারা সাধারণত পুরোহিতদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত যাজক, তবে পূর্বে এমন ব্যাক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা বিশপ বা যাজক কোনটিই ছিলেন না।[১২] একজন পোপ সারা জীবনের জন্য নির্বাচিত হন। তার পদ তখনই শূণ্য হয় যখন তিনি মারা যান বা নিজে পদত্যাগ করেন। কার্ডিনালদের পোপ নিযুক্ত করেন, যারা পরবর্তীতে তাদের উত্তরসূরিদের নির্বাচকদের নির্বাচন করেন।

৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরাই শুধু ভোট দেয়ার অধিকার রাখেন।[১২] পোপ কর্তৃক সরাসরি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলো দেখার জন্য একজন সচিব নিযুক্ত হন। ভ্যাটিকান আইনী ব্যবস্থাটি মূলত ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃক প্রবর্তিত ক্যানন আইনের অন্তর্ভুক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত; সুপ্রিম পন্টিফ হিসাবে রোমের বিশপ "আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচারিক সম্পূর্ণ ক্ষমতা পেয়ে থাকেন।"[১৩] যদিও ভ্যাটিকান সিটির আইনগুলো মূলত ইতালীয় ধর্মনিরপেক্ষ আইন থেকে এসেছে, আইনের উৎসের অনুচ্ছেদ নং ৩ অনুসারে , "ইতালী রাজ্য কর্তৃক প্রবর্তিত আইন" এর পরিপূরক প্রয়োগের জন্যও বিধান করা হয়েছে।[১৪] ভ্যাটিকান সরকারকে একটি ধর্ম শাসিত রাষ্ট্র (চার্চ দ্বারা শাসিত) হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

মাউন্ট অ্যাথোস (অ্যাথোনাইট রাজ্য) সম্পাদনা

মাউন্ট এ্যাথোস গ্রিসের একটি পর্বত উপদ্বীপ যা পূর্বের একটি রক্ষণশীল স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে কনস্টান্টিনোপলের একিউম্যানিকাল প্যাট্রিয়ার্কের (পুরোহিত) প্রত্যক্ষ অধিকারভুক্ত ২০টি মঠ নিয়ে গঠিত। এ্যাথোস পর্বতে প্রায় ১,৮০০ বছর অবধি ক্রমাগত খ্রিস্টান উপস্থিতি রয়েছে এবং এর সন্ন্যাসীদের ঐতিহ্যবাহী দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যা কমপক্ষে ৮০০ খৃষ্টাব্দ সময়কালের হয়ে থাকবে। স্ব-শাসনের সূচনা মূলত বাইজেন্টাইন সম্রাট আইওনিস তিজিমিসেসের একটি আদেশ থেকে এসেছিল ৯৭২ সালে যা পরবর্তীকালে ১০৯৫ সালে সম্রাট আলেক্সিয়োস প্রথম কোমনেনোস দ্বারা পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৮৩০ সালে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতার পরে গ্রিস অ্যাথোস পর্বতকে নিজেদের দাবী করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার সাথে কূটনৈতিক বিরোধ শেষে অঞ্চলটিকে গ্রিকরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দিয়েছিল।[১৫]

ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রিসের সদস্যপদ দ্বারা প্রয়োজনীয় লোক ও পণ্যদ্রব্য চলাচল থেকে মাউন্ট অ্যাথোসকে বিশেষভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে[১৬] এবং শুধুমাত্র সেখানকার সন্ন্যাসীদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। মাউন্ট অ্যাথোসে দৈনিক দর্শনার্থীর সংখ্যাও সীমাবদ্ধ যেহেতু সমস্ত দর্শনার্থীরই অনুমতি দরকার হয়। শুধুমাত্র পুরুষরাই পরিদর্শনের অনুমতি পায় এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান। মাউন্ট অ্যাথোসের বাসিন্দাদের অবশ্যই বয়স ১৮ বা তার বেশি বয়সের হতে হবে, ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের সদস্য হতে হবে এবং তিনি হয় সন্ন্যাসী হবেন কিংবা শ্রমিক হবেন।[১৭]

অ্যাথোস একটি 'পবিত্র সম্প্রদায়' দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত যা গ্রীসের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা নিযুক্ত ২০ টি মঠের প্রতিনিধি এবং একজন সিভিল গভর্নর দ্বারা গঠিত। এখানে পবিত্র সম্প্রদায়ের চার সদস্যের 'পবিত্র প্রশাসন' নামে একটি নির্বাহী কমিটিও রয়েছে, যার নেতৃত্ব দেন প্রোটোস (ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের মঠ অফিস)।

ইসলাম ধর্মরাষ্ট্র সম্পাদনা

'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' ঐ সমস্ত রাষ্ট্রকে বলা হয় যারা ইসলামিক আইন দ্বারা সরকারীভাবে শাসিত হয়। আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান এবং মরিতানিয়া সহ আরো বেশ কিছু দেশ এ ধরনের রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তান সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালের সংবিধানের অধীনে নিজেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণ করে। মৌরিতানিয়া একই পথ অনুসরণ করে ১৯৫৮ সালের ২৮ নভেম্বর। ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পরে পাহলভি বংশকে উৎখাত করে ইরান 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' এ পরিণত হয়। তালেবান সরকারের পতনের পরে ২০০৪ সালে আফগানিস্তান একে গ্রহণ করেছিল। একই রকম নাম থাকলেও, দেশগুলোর সরকার এবং আইনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

"ইসলামিক প্রজাতন্ত্র" শব্দের অর্থ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়েছে, এ নিয়ে মতবিরোধও রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার যেসব মুসলিম ধর্মীয় নেতাগণ এর পক্ষে ছিলেন, তাদের কাছে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বলতে একটি নির্দিষ্ট ইসলামী সরকারের অধীনে থাকা একটি রাষ্ট্রকে বোঝায়। তারা এটিকে বিশুদ্ধ ইসলামী খেলাফত এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ এবং প্রজাতন্ত্রবাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হিসেবে দেখেন। তাদের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ধারণা অনুসারে, রাষ্ট্রের দন্ডবিধি ইসলামী শরিয়তের কিছু বা সমস্ত আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রটিতে রাজতন্ত্র নাও থাকতে পারে যেমনটি বর্তমানে অনেক মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রে রয়েছে।[১৮]

ইরান সম্পাদনা

সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ ইরানকে[১৯] একটি "ঈশ্বরতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং এর গঠনতন্ত্রকে ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা[২০] ঐশ্বরিক ও গণতান্ত্রিক উপাদানগুলোর সমন্বয়ে সংকর ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রের মতো এটিও ধর্মীয় আইন অনুসরণ করে এবং আইনের সমস্ত দিক ব্যাখ্যা করার জন্য এখানে ধর্মীয় আদালত রয়েছে। ইরানের সংবিধান অনুসারে, "সব ধরনের নাগরিক বিষয়ক, দণ্ডনীয়, আর্থিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, এবং অন্যান্য আইন ও বিধিসমূহ অবশ্যই ইসলামী মানদণ্ডের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।"[২১]

এছাড়াও, ইরানে একজন ধর্মীয় শাসক রয়েছেন এবং প্রভাবশালী সরকারী পদে একাধিক ধর্মীয় কর্মকর্তা রয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান বা "সুপ্রিম লিডার" হিসেবে একজন ফাকিহ (ইসলামী আইনের পণ্ডিত)[২২] রয়েছেন এবং তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতির চাইতে বেশি ক্ষমতা রাখেন। ধর্মীয় মূল নেতা বিভিন্ন প্রভাবশালী সরকারী পদের প্রধান নিযুক্ত করেন; যেমন: সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার, জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন নেটওয়ার্কের পরিচালক, প্রধান ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাধর প্রধান, ইরানের প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল (পরোক্ষভাবে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে), বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এবং সর্বোচ্চ জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্য যারা প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তিনি গার্ডিয়ান কাউন্সিলের তথা অভিভাবক পরিষদের ১২জন ফাকীহ নিয়োগের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন।[২৩]

নেতা বিশেষজ্ঞ সভা দ্বারা নির্বাচিত হন[১৯][২৪] যে সভা শরিয়ত ব্যাখ্যায় অত্যন্ত সক্ষম ইসলামী পণ্ডিত মুজতাহিদের[২৫] সমন্বয়ে গঠিত।

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সংসদে পাসকৃত বিলসমূহ নাকচের ক্ষমতা রয়েছে। তারা প্রেসিডেন্সি, সংসদ এবং বিশেষজ্ঞ সভার প্রার্থী হতে চান এমন প্রার্থীদের অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কাউন্সিল নির্বাচন তদারকি করে এবং নির্বাচন তদন্তের অনুমতি বা নিষিদ্ধ করতে পারে।[১৯] কাউন্সিলের বারো সদস্যের মধ্যে ছয়জন ফাকিহ এবং ফাকিহগণ খেয়াল করেন বিলটি ইসলামী আইন ও রীতিনীতি (শরিয়া) মেনে চলছে কিনা এবং সে অনুযায়ী সংসদে পাসকৃত সমস্ত বিল অনুমোদন বা বাতিল করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। অন্য ছয়জন সদস্য মূলত প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি নিজে একজন ধর্মজ্ঞ এবং মূল নেতা কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত।[২৬]

কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসন সম্পাদনা

কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসন, সাধারণভাবে নির্বাসিত তিব্বত সরকার নামে পরিচিত, এটি তিব্বত থেকে নির্বাসিত একটি সংগঠন যার অভ্যন্তরীণ গঠনকাঠামো অনেকটা রাষ্ট্রের মতো। এর সনদ অনুসারে, কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসনের রাষ্ট্রপ্রধানের পদটি বর্তমান ধর্মপ্রাণ দালাই লামার আধিকারিকের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে এটি তিব্বতের প্রাক্তন সরকারের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছে, যা এক শ্রেণীর সন্ন্যাসী কর্মকর্তার জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব রেখে দালাই লামাস এবং তাদের মন্ত্রীরা শাসন করেছিলেন ।

১৪ ই মার্চ, ২০১১ সালে দালাই লামার পরামর্শে কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসনে নির্বাচিত নেতা থাকা উচিত এ বক্তব্যের সমর্থনে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দালাই লামার ভূমিকা অপসারণের প্রস্তাব বিবেচনা শুরু হয়।

প্রথম সরাসরি নির্বাচিত কালান ত্রিপা ছিলেন সামধং রিনপোচে, যিনি ২০ আগস্ট ২০০১ নির্বাচিত হয়েছিলেন।[২৭]

২০১১ সালের আগে কালান ত্রিপার অবস্থান ১৪ তম দালাই লামার অধীনস্থ ছিল।[২৮] যিনি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে নির্বাসিত সরকারের সভাপতিত্ব করেছিলেন।[২৯] সে বছরের আগস্টে, লোবস্যাং সাংগায়ে ৪৯,১৮৯ এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেথং তেনজিন নামগিয়ালকে ৮,৬৪৬ ভোটে পরাজিত করেছিলেন[৩০] এবং দ্বিতীয় জনপ্রিয় নির্বাচিত কালন ত্রিপা হন। দালাই লামা ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব সাংগায়ের নিকট স্থানান্তরিত হবে।[৩১]

সাইকং-এ পরিবর্তন সম্পাদনা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সালে ১৫তম নির্বাসিত তিব্বতের সংসদ নির্বাসিত তিব্বতি সনদের ১৯ এর অনুচ্ছেদে ও প্রাসঙ্গিক নিবন্ধে সর্বসম্মতভাবে কালিন ত্রিপা উপাধিকে সাইকং-এ পরিবর্তন করার পক্ষে ভোট প্রদান করে।[৩২] দালাই লামা পূর্বে কালিন ত্রিপাকে 'সাইকং' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং এটিই উপাধিটির নাম পরিবর্তনের পেছনে প্রথম যৌক্তিকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিব্বতীয় পর্যালোচনা অনুসারে, "সাইকং" অর্থ "রাজনৈতিক নেতা" যিনি "আধ্যাত্মিক নেতা" থেকে পৃথক।[৩২] বিদেশ বিষয়ক কালন বা মন্ত্রী ডিকি ছোয়াং বলেছেন যে "সাইকং" শব্দটির সংযোগ সপ্তম দালাই লামার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এই নাম পরিবর্তন "পঞ্চম দালাই লামার সময় থেকে ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের বৈধতা এবং ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকে নিশ্চিত করে"।[৩৩] অনলাইন ধর্ম অভিধান (Dharma Dictionary) অনুযায়ী "সেক্যুলার শাসক; শাসনব্যবস্থা, রাজপ্রতিভূ" হিসেবে সাইকংকে (স্রিড সাইকং) অনুবাদ করা হয়েছে।[৩৪] সাইকং উপাধিটি পূর্বে দালাই লামার সংখ্যালঘুত্বের সময়ে তিব্বত শাসনকারী রাজপ্রতিভূরা ব্যবহার করতেন।

আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রধর্মবিশিষ্ট রাষ্ট্রসমূহ সম্পাদনা

ধর্মরাষ্ট্র হওয়ার ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ধর্ম থাকাটাই যথেষ্ট নয়। অনেক দেশেরই এমন রাষ্ট্রীয় ধর্ম রয়েছে যেখানে সরকার সরাসরি ঐশ্বরিক কোন কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত নয় বা কোন ধর্মীয় কর্তৃপক্ষও সরাসরি সরকারী ক্ষমতা প্রয়োগ করে না। যেহেতু এই শব্দটির সংকীর্ণ অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খুব কম উদাহরণ আধুনিক বিশ্বে রয়েছে, তাই এর সবচেয়ে বেশি সাধারণ ব্যবহার দেখা যায় প্রয়োগকৃত রাষ্ট্র ধর্মের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে।

ধর্মরাষ্ট্রীয় বিষয়াদি সম্বলিত ঐতিহাসিক রাষ্ট্রসমূহ সম্পাদনা

সুমের সম্পাদনা

উরুক আমলে সুমেরীয় শহরগুলো খুব সম্ভব ধর্মতাত্ত্বিক ছিল এবং সম্ভবত , প্রবীণ বয়সী পুরুষ এবং নারী উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিষদের সহযোগীতায় পুরোহিত-রাজা (এনসি) এর নেতৃত্বে দিতেন।[৩৫]

প্রাচীন মিশর সম্পাদনা

প্রাচীন মিশরীয় ফেরাউনদের ঐশ্বরিক মূর্তি হিসেবে দেখা হত এবং দেবতা হোরাসের সমতুল্য জ্ঞান করা হত এবং মৃত্যুর পরে দেবতা ওসিরিসের সমতুল্য মনে করা হতো।[৩৬] তবে তিনি মিশরীয় প্যানথিয়নের অন্যান্য দেবদেবীদের সমতুল্য বিবেচিত হতেন না। ফেরাউনকে দেবতা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করতেন।[৩৭]

জাপান সম্পাদনা

জাপানের সম্রাটকে ঐতিহাসিকভাবে সিন্তো ধর্মের সূর্য দেবী আমেতেরাসুর উত্তরসূরি হিসেবে উপাসনা করা হতো। এই অবতরণের মধ্য দিয়ে সম্রাটকে জীবন্ত দেবতারূপে দেখা হতো যিনি জাপানি জনগণের সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর জাপান অধিগৃহীত হওয়ার পরই এই অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছিল যখন সম্রাট হিরোহিতো ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে জাপানকে গণতান্ত্রিক দেশে পুনর্গঠিত করার জন্য তিনি কোন অবিনশ্বর ঈশ্বর নন।[৩৮]

ইসরায়েল সম্পাদনা

প্রথমদিকে ইসরায়েল ছিল ক্রিটর্কি (মোজেস বা নবী মূসা কর্তৃক প্রবর্তিত ব্যবস্থা), যেখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে বিচারকরা শাসন করতেন। বিচারকদের ইয়াহ্‌ওয়েহ বা যেহোভার প্রতিনিধি মনে করা হতো।

পাশ্চাত্যের প্রাচীন উদাহরণ সম্পাদনা

প্রাচীন মিশর ও রোমান সাম্রাজ্যসহ আরো অনেক সাম্রাজ্যে ইম্পেরিয়াল কাল্ট (রাজ পূজা) এর সময় সম্রাটকে দেবতাজ্ঞান করা হতো। রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রায়শই দেবতা বা তার অবতার হিসাবে শাসকের উপাসনার জন্য নিবেদিত হত।

প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান ধর্মে সিজারোপিজম (ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে ধর্মীয় ক্ষমতার সংমিশ্রণে একটি মতবাদ) নামে একটি মতবাদের কথা জানা যায় যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান একই সাথে চার্চের প্রধান ছিলেন।

তিব্বত সম্পাদনা

বৌদ্ধ তিব্বতে একীভূত ধর্মীয় শাসন শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে, যখন পঞ্চম দালাই লামা গেকুগ স্কুলের প্রধান হিসেবে তাঁর অফিসের চারদিকে রাজনৈতিক শক্তি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণকে সুসংহত করার জন্য মঙ্গোল গুশরি খানের সামরিক শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন।[৩৯] এ প্রক্রিয়া সরকারের দ্বৈত ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। ১৬৪২ এর আগে, বিশেষ কিছু মঠ এবং সন্ন্যাসীরা তিব্বত জুড়ে যথেষ্ট ক্ষমতা অর্জন করেছিল, তবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের নেয়ার মতো কিছু অর্জন করতে পারেনি। যদিও পঞ্চম দালাই লামার উত্থানের পরে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতা অব্যাহত ছিল। তিব্বতে ক্ষমতা থাকত বেশিরভাগ অভিজাত ও সম্মানী সদস্যদের হাতে যাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল বড় বড় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধানগণ (তাদের বিভিন্ন তুলকাসসহ (তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের বিশেষ ধারা)) এবং বিভিন্ন বৃহৎ ও প্রভাবশালী সন্ন্যাসী সম্প্রদায়।[৪০]

মঙ্গোলিয়ার বোগড খানাট সময়কালকে (১৯১১-১৯) সাবেক বৌদ্ধ ধর্ম শাসিত রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

চীন সম্পাদনা

রোমান সম্রাটের মতোই ঐতিহাসিকভাবে চীনা সার্বভৌমকে স্বর্গের পুত্র হিসেবে মনে করা হতো। যাইহোক, প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট থেকে এটি মূলত আনুষ্ঠানিক ছিল এবং রোমান ব্যবস্থার মতো এই ঐতিহ্যটি খুব দ্রুত মরণোত্তর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সম্রাট কিন শি হুয়াং ডি-র আগের পরিস্থিতি স্পষ্ট নয়।

শ্যাং রাজবংশ মূলত একটি ঈশ্বরতন্ত্র হিসেবে কাজ করত। এ সময় শাসক পরিবারকে স্বর্গের পুত্রবৃন্দ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং প্রধান আকাশ দেবতা শংদি নামে অভিহিত করা হয়েছিল তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের।[৪১] ঝুউ রাজবংশ কর্তৃক তাদের উৎখাতের পরে, শ্যাংয়ের রাজবংশটিকে নির্মূল করা হয়নি বরং তাদের একটি আনুষ্ঠানিক রাজধানীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল যেখানে তাদের প্রথাগত আচার অনুষ্ঠানের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

কিং রাজবংশের সময়ও একই ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। এমনকি কিং রাজবংশের পতনের পরও সম্রাটের উচ্চারিত যেকোন কথা পবিত্র আদেশ হিসেবে মান্য করা হতো।

১৮৬০ এর দশকে চীনে কিং শাসনামলে হেভেনলি কিংডম অফ গ্রেট পিস ( মূল নাম তাইপিং হেভেনলি কিংডম যা কিং রাজবংশের বিরোধী একটি অস্বীকৃত রাজ্য ছিল) একটি ভিন্নমতাবলম্বী খৃষ্টান ধর্মরাষ্ট্র ছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন হং জিউকুয়ান এবং তাকে যিশু খৃষ্টের ছোট ভাই মনে করা হতো। এই ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি ইতিহাসের অন্যতম ধ্বংসাত্মক যুদ্ধটি করেছিল যা তাইপিং বিদ্রোহ নামে বিখ্যাত। বিদ্রোহটি বিদ্রোহী রাজধানী নানজিংয়ের পতনের পরপরই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিং রাজবংশের বিরুদ্ধে ১৫ বছর ধরে অব্যাহত ছিল।

খেলাফত সম্পাদনা

ইসলামের সুন্নি শাখার শর্তানুযায়ী, রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে একজন খলিফা অবশ্যই মুসলিম বা তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হওয়া উচিত। শিয়া ইসলামের অনুসারীরা অবশ্য বিশ্বাস করেন, আহলে বাইত (মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ বংশধর) হতে স্রষ্টা কর্তৃক মনোনীত একজন ইমামই খলিফা হওয়ার উপযুক্ত।

বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য সম্পাদনা

বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য (৩২৪-১৪৫৩ খৃষ্টাব্দ) সিজারোপাপিজম এর অধীনে পরিচালিত হতো, অর্থাৎ সম্রাট নাগরিক সমাজের প্রধানও ছিলেন আবার আধ্যাত্মিক কর্তৃপক্ষের ওপরও চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ছিল তার। পৃথিবীতে ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান প্রতিনিধি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হত এবং তিনি নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারী হিসেবে শাসন করতেন।[৪২]

জেনিফার ফ্রেটল্যান্ড ভ্যানওয়ার্স্ট যুক্তি দেন, "বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এই অর্থে একটি ধর্মরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল যে খ্রিস্টান মূল্যবোধ এবং আদর্শ সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিস্বরূপ এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যসমূহের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিল"।[৪৩] স্টিভেন রুনসিম্যান দ্য বাইজেন্টাইন থিওক্রিয়া (২০০৪) গ্রন্থে বলেন:

বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের গঠনতন্ত্র এই দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর তৈরি হয়েছিল যে, এই ভূমি স্বর্গরাজ্যের একটি পার্থিব প্রতিলিপি। ঈশ্বর যেভাবে স্বর্গ রাজত্ব করেন, ঠিক তেমনি তাঁর প্রতিমূর্তিরূপে তৈরি সম্রাটেরও পৃথিবীতে রাজত্ব করা উচিত এবং তাঁর আদেশ অনুসরণ করা। ... এটি নিজেকে একটি সর্বজনীন সাম্রাজ্য হিসেবে দেখত। আদর্শগতভাবে, একে পৃথিবীর সকল মানুষেরই অনুসরণ করা উচিত অন্তত যারা একটি সত্যিকার খৃষ্টান চার্চের তথা অর্থোডক্স চার্চের সদস্য। মানুষকে যেমনি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীতে মানুষের রাজত্বও স্বর্গরাজ্যের প্রতিরূপ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

মুনস্টার (১৬ শতক) সম্পাদনা

১৫৩৩ এবং ১৫৩৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রোটেস্ট্যান্ট নেতা জ্যান ম্যাটিস এবং লেইডেনের জন মুনস্টার শহরে একটি ক্ষণস্থায়ী ধর্মতান্ত্রিক রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। তারা চিলিয়াস্টিক (যারা যীশুর পুনরুত্থানে বিশ্বাসী এবং তিনি ১০০০ বছর শাসন করবেন বলে বিশ্বাস করে)ও সহস্রাব্দের প্রত্যাশা নিয়ে একটি অ্যানাব্যাপিস্ট শাসন ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। সেখানে অর্থ বিলুপ্ত করা হয়েছিল এবং দশ আদেশের (বাইবেলীয় নীতি) যে কোনটি লঙ্ঘন করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান করা হয়েছিল। চৈতন্যবাদী মতাদর্শ থাকা সত্ত্বেও সেখানে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং ভন লেইডেনের নিজের ১৭জন স্ত্রী ছিল। ১৫৩৫ সালে, মুনস্টার রাজত্বের অস্তিত্বের অবসান ঘটিয়ে ফ্রাঞ্জ ভন ওয়ালডেক একে পুনরায় দখল করে নেন।

জেনেভা ও জুরিখ (১৬ শতক) সম্পাদনা

ঐতিহাসিকগণ জেনেভা, সুইজারল্যান্ডে জন ক্যালভিনের (১৫০৯-৬৪) সময়কালে ঠিক কতদিন পর্যন্ত ধর্মরাষ্ট্র বজায় ছিল তা নিয়ে বিতর্ক করেছেন। একদিকে ক্যালভিনের ধর্মতত্ত্ব স্পষ্টতই গির্জা এবং রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথকীকরণের আহ্বান জানিয়েছিল। অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ সে সময়ের যাজকদের ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারি হওয়ার বিষয়টির ওপর জোরারোপ করেছেন।[৪৪][৪৫]

সুইজারল্যান্ডের নিকটবর্তী জুরিখে, প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারক হুলড্রিখ জুইঙলি (১৪৮৪-১৫৩১) একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিলেন যাকে অনেক পণ্ডিত ঈশ্বরতন্ত্র বা ধর্মরাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন যদিও অন্যান্যরা এটি অস্বীকার করেছেন।[৪৬]

ডেসারেট (এলডিএস চার্চ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সম্পাদনা

ইলিনয় এবং বিশেষ করে ইউটাহ-তে লেটার-ডে সেইন্ট (এলডিএস চার্চ বা মরমন চার্চ নামে বহুল পরিচিত) সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে ঈশ্বরতন্ত্রের প্রশ্নে ঐতিহাসিকরা ব্যাপক বিতর্ক করেছেন।[৪৭][৪৮][৪৯]

ইলিনয়ে নওভোর মেয়র এবং লেটার ডে সেইন্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ স্মিথ ১৮৪৪ সালে রাষ্ট্রপতির স্বতন্ত্রভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হন। তিনি সরকারী জমি বিক্রি করে, কংগ্রেসের আকার ও বেতন হ্রাস করে, জেলখানাগুলো বন্ধ করে দিয়ে দাসদের মুক্ত করার প্রস্তাব করেছিলেন। টেক্সাস, ওরেগন, এবং কানাডার কিছু অংশ সংযুক্ত করাসহ সমুদ্রের উপর আন্তর্জাতিক অধিকার সুরক্ষা মুক্ত বাণিজ্য এবং একটি জাতীয় ব্যাংকের পুনঃপ্রতিষ্ঠাও তিনি করেছিলেন।[৫০] তাঁর শীর্ষ সহযোগী ব্রিঘাম ইয়ং স্মিথের পক্ষে প্রচারণায় বলেছিলেন, "তিনি স্বর্গের দেবতা যিনি এই জাতিকে ধ্বংস থেকে রক্ষা এবং সংবিধান রক্ষার পরিকল্পনা করেছিলেন।"[৫১] ইলিনয়ের কার্তেজে স্মিথ ১৮৪৪ সালের ২রা জুন বিক্ষুব্ধ জনতার দ্বারা নিহত হওয়ার পর অভিযানটি সমাপ্ত হয়েছিল।[৫২]

মারাত্মক নিপীড়নের পর মরমনরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে ইউটাহ এর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুনর্বাসিত হয় যা তখন মেক্সিকোর অংশ ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৪৮ সালে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং বহুবিবাহকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করে। সুতরাং মরমন রাজ্য ডেসেরেট খুব অল্পদিন টিকে ছিল।[৫৩] এর মূল সীমানা পশ্চিম কলোরাডো থেকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ১৮৪৭ সালে মরমনরা যখন গ্রেট সল্টলেকের উপত্যকায় পৌঁছে তখনও গ্রেট বেসিন মেক্সিকোর একটি অংশ ছিল এবং তাদের কোনও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ছিল না। ফলস্বরূপ, ব্রিগহাম ইয়ং এই অঞ্চলটিকে আধ্যাত্মিকভাবে এবং অস্থায়ীভাবে সুশৃঙ্খল এবং কেন্দ্রীভূত মেলচিজেদেক পুরোহিততন্ত্রের (মরমনবাদে পুরোহিততন্ত্রের দুটো প্রধান ধারা) মাধ্যমে পরিচালনা করেন। এই মূল সংগঠনটি থিয়োডেমোক্রেসি (জোসেফ স্মিথ কর্তৃক প্রবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা) ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যা মধ্য উনিশ শতকের আমেরিকান রাজনৈতিক আদর্শের সাথে বাইবেলের ধর্মতত্ত্বকে মিশ্রিত একটি সরকারী ব্যবস্থা।[৫৪][৫৫]

১৯৪৯ সালে, সাধুরা উটাহতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার সংগঠিত করে যদিও অনেক ধর্মীয় নেতা তাদের ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তির অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। মরমনরা কংগ্রেসের কাছেও অনুরোধ করেছিলেন যেন ডেসারেটকে একটি রাজ্য হিসেবে ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাইহোক, ১৮৫০ সালের সমঝোতার অধীনে ইউটাহ ভূখণ্ড তৈরি করা হয়েছিল এবং ব্রিগহাম ইয়ংকে গভর্নর নিযুক্ত করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, ইয়ং এখনও স্যা চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ লেটার-ডে সেইন্টস (এলডিএস চার্চ) এর প্রধান এবং উটাহ-র ধর্ম নিরপেক্ষ সরকারেরও প্রধান।

১৮৫৭–-১৮৫৮-এর ব্যর্থ উটাহ যুদ্ধের পর ইয়ংয়ের স্থলে বাইরের ফেডারেল টেরিটরিয়াল গভর্নর আসার পর এলডিএস চার্চের নেতাদের তীব্র ফেডারেল মামলা, বহুবিবাহ সম্পর্কিত বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান এবং ইউটা কর্তৃক রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ হওয়ায় তখনকার মতো এলডিএস থিয়োডেমোক্রেসির প্রসঙ্গগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।[৫৬]

পারস্য / ইরান সম্পাদনা

অ্যাকেমেনিড সাম্রাজ্যের সময় জরথুস্ট্রবাদ রাষ্ট্রীয় ধর্ম ছিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এর উপাসনা করা হতো। পারস্যের রাজারা ধার্মিক জরথুস্ট্রবাদী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তারা জরথুস্ট্রবাদ অনুসারে প্রবর্তিত আশা নামক আইন দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তবে, সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী গ্রেট সাইরাস বিজিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপরে জরথুস্ট্রবাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেন নি। ইহুদিদের প্রতি সাইরাসের এই অনুগ্রহকে ইহুদি ধর্মের উপর জরথুস্ট্রবাদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫৭]

সেলিউসিডদের অধীনে জরথুস্ট্রবাদ স্বায়ত্তশাসিত রূপে চলে আসে। সাসানিড সময়কালে, জরথুস্ট্রবাদের বিশেষ ক্যালেন্ডারের সংস্কার সাধিত হয় এবং উপাসনায় চিত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় প্রচুর অগ্নি মন্দির নির্মিত হয়েছিল সেই সাথে অন্যান্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতাও বিদ্যমান ছিল।[৫৮]

সাভোনারোলার অধীনে ফ্লোরেন্স সম্পাদনা

ফ্লোরেন্স শহরে ডমিনিকান পুরোহিত গিরোলোমো সাভোনারোলার সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে (১৪৯৪–১৪৯৮) ঈশ্বরতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়। তার শাসনামলে, "অ-খৃষ্টীয়" বই, মূর্তি, কবিতা এবং অন্যান্য বিভিন্ন জিনিস পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল (বনফায়ার অফ ভ্যানিটিসের পবিত্র অনুষ্ঠানে (চার্চ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়াদি বা পাপস্মণ্য বস্তু পুড়িয়ে ফেলার আয়োজন), সোডমিকে (কোন প্রাণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন) একটি প্রধানতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং অন্যান্য খ্রিস্টান অনুশীলনকে আইনে পরিণত করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. The imperial cult in Roman Britain-Google docs
  2. Webster's Encyclopedic Unabridged Dictionary of the English Language (1989 edition).
  3. "Definition of THEOCRACY"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯ 
  4. "THEOCRACY | Definition of THEOCRACY by Oxford Dictionary on Lexico.com also meaning of THEOCRACY"Lexico Dictionaries | English (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৫-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯ 
  5. "Introduction to Against Apion (vol. 10)"Flavius Josephus Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯ 
  6. Moked, Oran (২০০৪)। "The Relationship between Religion and State in Hegel's Thought"Hegel Bulletin25 (1-2): 96–112। আইএসএসএন 2051-5367ডিওআই:10.1017/s0263523200002032 
  7. "CATHOLIC ENCYCLOPEDIA: Theocracy"www.newadvent.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২০ 
  8. English form the 17th century (OED). The Greek term is explicitly coined by Josephus and isn't attested elsewhere in Ancient Greek; Josephus marks it as a nonce coinage by calling it a "strained expression". W. Whiston tr. Josephus, Against Apion ii. §17 (1814) IV. 340: "He [Moses] ordained our government to be what, by a strained expression, may be termed a Theocracy", translating ὡς δ'ἄν τίς εἴποι, βιασάμενος τὸν λόγον, θεοκρατίαν
  9. Stephen., Palmquist, (১৯৯৩)। Biblical theocracy : a vision of the biblical foundations for a christian political philosophy। (Hong Kong: Philopsychy Press, 1993), introduced these more precise uses of the terms in arguing that theocracy (in this pure sense) is the only political system defended in the Bible. While Palmquist defends theocracy in this pure form as a viable (though "non-political") political system, he warns that what normally goes by this name is actually ecclesiocracy, the most dangerous of all political systems.: Philopsychy Press। আইএসবিএন 962-7770-02-7ওসিএলসি 954540981 
  10. Vitalone, Alessia (2007). "Il Pontefice sovrano dello Stato della Città del Vaticano". Diritto e Religioni. II (1): 313.
  11. "Holy See"World Christian Encyclopedia Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২১ 
  12. "Holy See (Vatican City) - The World Factbook"www.cia.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২২ 
  13. Fundamental Law of Vatican City State, Art. 1 §1
  14. Young, Stephen (২০১৭-০৭-২০)। "Separating State from Church: Researching the Legal System of the Vatican City State"dx.doi.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২২ 
  15. Travels to Jerusalem and Mount Athos। Gorgias Press। ২০১৪-১২-৩১। পৃষ্ঠা 143–152। আইএসবিএন 978-1-4632-3565-9 
  16. "Conference on facilitating the entry into force of the comprehensive nuclear-test-ban treaty: Final declaration"dx.doi.org। ২০১৩-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২২ 
  17. Mount Athos। Peter Lang। আইএসবিএন 978-3-03911-995-0 
  18. https://en.wikipedia.org/wiki/Wikipedia:Citation_needed
  19. "Iran - The World Factbook"www.cia.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  20. Francis Fukuyama (২০০৯)। "Transitions to the Rule of Law"Journal of Democracy21 (1 While articles One and Two vest sovereignty in God, article six "mandates popular elections for the presidency and the Majlis, or parliament." source: July 27, 2009, "Iran, Islam and the Rule of Law". Francis Fukuyama): 33–44। আইএসএসএন 1086-3214ডিওআই:10.1353/jod.0.0145 
  21. LL.M., Prof. Dr. Axel Tschentscher,। "ICL > Iran > Constitution"www.servat.unibe.ch (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  22. article 109 of the constitution states the among the "essential qualifications and conditions for the Leader" are "scholarship, as required for performing the functions of mufti in different fields of fiqh" Chapter 8 – The Leader or Leadership Council Archived 2010-11-23 at the Wayback Machine Constitution of Iran
  23. "Who's in Charge?" by Ervand Abrahamian London Review of Books, 6 November 2008
  24. Voices from Zoroastrian Iran। Harrassowitz, O। ২০১৮-১১-০১। পৃষ্ঠা 395–398। আইএসবিএন 978-3-447-19812-7 
  25. Postrevolutionary Iran। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 263–287। আইএসবিএন 978-0-8156-5432-2 
  26. Constitution of Iran, Article 157: In order to fulfill the responsibilities of the judiciary power in all the matters concerning judiciary, administrative and executive areas, the Leader shall appoint a just Mujtahid well versed in judiciary affairs and possessing prudence, and administrative abilities
  27. Rinpoche, Samdhong (২০০৬)। Samdhong Rinpoche : uncompromising truth for a compromised world : Tibetan Buddhism and today's world। Donovan Roebert। Bloomington, Ind.: World Wisdom। পৃষ্ঠা (On August 20, 2001, Venerable Professor Samdhong Rinpoche was elected Kalon Tripa (Prime Minister) of the Tibetan Government in Exile, receiving 84.5% of the popular exile vote.)। আইএসবিএন 1-933316-20-9ওসিএলসি 69645799 
  28. LL.M., Prof. Dr. Axel Tschentscher,। "ICL > Tibet > Constitution"www.servat.unibe.ch (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  29. The Charter of Tibetans in-Exile, Articles 19, 30, & 31 of the Constitution of Tibet, retrieved 2010-03-19.
  30. "Lobsang Sangay chosen for political work"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৪-২৮। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  31. "Lobsang Sangay: profile"www.telegraph.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  32. "kalon-tripa-affirms-tibetan-peoples-commitment-to-nonviolence-jan-30-2009-1pp"Human Rights Documents online। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  33. Kuzmin, Sergius (২০১৮)। "Review of the book: Cultural Genocide in Tibet: A Report. Dharamsala: The Tibet Policy Institute; The Department of Information and International Relations, Central Tibetan Administration (Drafting Committee: T. Samphel, B.D. Sonam, R. Dorjee, T. Desal)"Восток. Афро-Азиатские общества: история и современность (6): 235–240। আইএসএসএন 0869-1908ডিওআই:10.31857/s086919080002988-3 
  34. "srid skyong - Rangjung Yeshe Wiki - Dharma Dictionary"rywiki.tsadra.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩ 
  35. Jacobsen, Thorkild (Ed) (1939),"The Sumerian King List" (Oriental Institute of the University of Chicago; Assyriological Studies, No. 11., 1939)
  36. Gadd, C. J. (1941-07)। "The Sumerian King List. By Thorkild Jacobsen. Oriental Institute of Chicago Assyriological Studies, No. 11. 9½ × 7, pp. xvi + 208, figs. 3, tables 3. Chicago: University of Chicago Press, 1939."Journal of the Royal Asiatic Society73 (3): 283–284। আইএসএসএন 1356-1863ডিওআই:10.1017/s0035869x00097501  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  37. "ancient Egypt - The king and ideology: administration, art, and writing"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৪ 
  38. "Emperor, Imperial Rescript Denying His Divinity (Professing His Humanity) | Birth of the Constitution of Japan"www.ndl.go.jp (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৪ 
  39. Hannabuss, Stuart (2004-09)। "Encyclopedia of Buddhism2004300Editor‐in‐chief Robert E. Buswell. Encyclopedia of Buddhism. New York, NY: Macmillan 2004. , ISBN 0 02 865718 7 $265 2 vols Also available as an e‐book, ISBN 0 02 865910 4"Reference Reviews18 (6): 12–13। আইএসএসএন 0950-4125ডিওআই:10.1108/09504120410552426  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  40. Lopez, Donald S., Jr. (১৯৯৯)। Prisoners of Shangri-La : Tibetan Buddhism and the West। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-49311-3ওসিএলসি 41258460 
  41. The Wiley-Blackwell companion to Chinese religions। Randall Laird Nadeau। Malden, MA: Wiley-Blackwell। ২০১২। আইএসবিএন 978-1-4443-6197-1ওসিএলসি 784138755 
  42. Steven Runciman, The Byzantine Theocracy (Cambridge: Cambridge University Press, 1977).
  43. Fretland VanVoorst, Jenny (২০১৩)। The Byzantine Empire। North Mankato, MN: Compass Point Books। আইএসবিএন 978-0-7565-4627-4ওসিএলসি 829180196 
  44. Larson, Mark James (২০০৯)। Calvin's doctrine of the state : a Reformed doctrine and its American trajectory, the Revolutionary War, and the founding of the republic। Eugene, Oregon: Wipf & Stock। আইএসবিএন 978-1-4982-7554-5ওসিএলসি 957607078 
  45. Harro., Höpfl, (১৯৮৫)। The Christian polity of John Calvin। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-31638-3ওসিএলসি 802576362 
  46. Clifford., Walton, Robert (১৯৬৭)। Zwingli's theocracy। University of Toronto Press। ওসিএলসি 421778072 
  47. Latzer, Michael J. (2000-02)। Whitmer, David (1805-1888), early Mormon leader। American National Biography Online। Oxford University Press।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  48. Williams, J. D. (১৯৬৭-০৩-০১)। "The Separation of Church and State in Mormon Theory and Practice"Journal of Church and State (ইংরেজি ভাষায়)। 9 (2): 238–262। আইএসএসএন 0021-969Xডিওআই:10.1093/jcs/9.2.238 
  49. Brown, Robert E. (২০১৩)। "The Power and the Peculiarity: The Paradoxes of Early Mormonism"Reviews in American History41 (3): 451–457। আইএসএসএন 1080-6628ডিওআই:10.1353/rah.2013.0063 
  50. 1805-1844., Smith, Joseph, Jr., (১৮৪৪)। The Voice of truth : containing General Joseph Smith's correspondence with Gen. James Arlington Bennett ; appeal to the Green Mountain Boys ; correspondence with John C. Calhoun, Esq. ; views of the powers and policy of the government of the United States ; Pacific Innuendo, and Gov. Ford's letter ; a friendly hint to Missouri, and a few words of consolation for the "Globe ; " also, correspondence with the Hon. Henry Clay.। Printed by John Taylor। ওসিএলসি 18137988 
  51. Winn, Kenneth H. (১৯৮৯)। Exiles in a land of liberty : Mormons in America, 1830-1846। Chapel Hill: University of North Carolina Press। পৃষ্ঠা পৃ:২০৩। আইএসবিএন 0-8078-6635-0ওসিএলসি 44956801 
  52. Carthage Jail
  53. "Home"History to Go (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫ 
  54. G., Turner, John (২০১৪)। Brigham young : pioneer prophet.। Belknap Harvard। আইএসবিএন 0-674-41685-6ওসিএলসি 894538617 
  55. Mason, P. Q. (২০১১-০৯-০১)। "God and the People: Theodemocracy in Nineteenth-Century Mormonism"Journal of Church and State (ইংরেজি ভাষায়)। 53 (3): 349–375। আইএসএসএন 0021-969Xডিওআই:10.1093/jcs/csq135 
  56. Perry, Luke। The American Election 2012। Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-1-137-38922-0 
  57. "JewishEncyclopedia.com"www.jewishencyclopedia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫ 
  58. A History of Zoroastrianism, Zoroastrianism under Macedonian and Roman Rule। BRILL। ১৯৯১-০১-০১। পৃষ্ঠা 573–596। আইএসবিএন 978-90-04-29391-5