অল্ট নিউজ
অল্ট নিউজ হলো প্রাক্তন সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রতীক সিনহা এবং মোহাম্মদ জুবায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও চালিত একটি ভারতীয় অলাভজনক তথ্য যাচাইয়ের ওয়েবসাইট।[৩][৪] এটি ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ তারিখে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়।[৫][৬][৭] অল্ট নিউজ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের স্বাক্ষরকারী অংশীদার ছিলো।[৮][১৩]
প্রতিষ্ঠা | ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ |
---|---|
সদরদপ্তর | আহমেদাবাদ, ভারত |
মালিক | প্রাবদা মিডিয়া ফাউন্ডেশন[১] |
প্রতিষ্ঠাতা(গণ) | প্রতীক সিনহা, মোহাম্মদ জুবায়ের[২] |
পণ্যসমূহ | ওয়েব পোর্টাল |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
সম্পাদনাঅল্ট নিউজ আহমেদাবাদে আইনজীবী ও জনসংঘর্ষ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মুকুল সিনহার ছেলে প্রাক্তন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রতীক সিনহা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৪][১৫][১৬] প্রতীক সিনহা যখন ভারতে তার সক্রিয়কর্মী মা-বাবার সাথে কাজ শুরু করেন তখন ভুয়া খবর উন্মোচন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ২০১৩ সালের প্রথম দিকে ভুয়ো খবরের উত্থানকে অনুসরণ করছিলেন কিন্তু ২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব উপলব্ধি করার পরে ওয়েবসাইটটি শুরু করেন, যখন গুজরাতের উনাতে একটি মৃত গরুর চামড়া কাটার জন্য চার দলিত ছেলেকে বেত্রাঘাত করা হয়েছিলো। তিনি ২০১৬ সালে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেন ও পরের বছর অল্ট নিউজ প্রতিষ্ঠা করেন।[১৪]
ওয়েবসাইটটি চালু করার পর থেকে সিনহা প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন, হুমকিদাতাদের দাবি ছিলো যেন তিনি অল্ট নিউজের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি করা বন্ধ করেন।[১৭][১৮]
২০২২ সালের জুলাইয়ে সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুবায়েরকে "ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার" অভিযোগে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।[১৯] আইপিসি ২৯৫ক ধারা ও আইটি আইনের ৬৭ ধারার অধীনে অভিযোগগুলো ২০১৮ সালে করা একটি ব্যঙ্গাত্মক টুইটের জন্য প্রয়োগ করা হয়, যেখানে তিনি হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ১৯৮৩ সালের ভারতীয় কৌতুকধর্মী চলচ্চিত্র কিসি সে না কেহনা থেকে একটি অসম্পাদিত স্ক্রিনশট শেয়ার করেন।[২০] এক বেনামী টুইটার ব্যবহারকারীর দ্বারা এই টুইটটি হিন্দুদের অনুভূতিকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করা হয়। সাংবাদিক সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক বিরোধীরা মোদীর ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার কথা উল্লেখ করার সময়, ২০২২-এর বিজেপি মুহম্মদ মন্তব্য বিতর্ক ও সমাজে বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অল্ট নিউজের কাজে তার ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে এই গ্রেপ্তারকে প্রত্যক্ষ করে।[২১]
প্রক্রিয়া
সম্পাদনাঅল্ট নিউজ ভুল তথ্য পর্যবেক্ষণ করে কাজ করে, যারা প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত ভাইরাল তথ্য শনাক্ত করে। তারা ক্রাউডট্যাঙ্গোল নামক একটি ফেসবুক টুল ব্যবহার করে প্রকাশকরা ইন্টারনেট জুড়ে কীভাবে বিষয়বস্তু ছড়িয়ে পড়ে তা ট্র্যাক করে ফেসবুকের পাতা পর্যবেক্ষণ করে অতীতে কোনও সময়ে ভুল তথ্য প্রকাশ ও আদর্শগত গোষ্ঠীর উভয় পাশে রয়েছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করে৷ তারা একটি টুইটার ম্যানেজমেন্ট টুল টুইটডেক ব্যবহার করে একইভাবে সেসব টুইটারে পোস্ট করা বিষয়বস্তু নিরীক্ষণ করে যেগুলো প্রায়শই ভুল তথ্য টুইট করতে পরিচিত। তারা একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিরীক্ষণ করে যেগুলোয় তারা অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয় ও সেইসাথে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে যারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপে সতর্ক করে।[২২]
জনপ্রিয় কাজ
সম্পাদনাঅল্ট নিউজ হিন্দু ডানপন্থী ওয়েবসাইট দৈনিকভারত.অর্গ পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে।[২৩] সিনহা দেখিয়েছেন যে বিহারে একজন হিন্দু লোককে মুসলিমদের হাতে পিটিয়ে মারার ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের। তিনি দিল্লি ভিত্তিক আইনজীবী প্রশান্ত পটেলের তথ্যও ফাঁস করেন যিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে মিথ্যাভাবে অনেক জাল খবর প্রকাশ করতেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি আরও দেখান যে একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে একটি মাড়োয়ারি মেয়েকে একটি মুসলিম পুরুষের সাথে বিয়ে করা হয়েছে যাকে বোরকা না পরার কারণে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে যা মূলত গুয়াতেমালার ঘটনা।[৪][২৪][২৫][২৬] বিবিসির সূত্রানুসারে, ২০১৭ সালের জুন মাসে অল্ট নিউজের একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পেনীয়-মরক্কো সীমান্তের একটি ছবি ব্যবহার করে দাবি করেছে যে এটি ভারতের সীমান্তে ফ্লাডলাইট স্থাপন করেছে যার ফলে মন্ত্রকটি অনলাইনে উপহাসের সম্মুখীন হয়।[২৫][২৬] সিনহা ৪০ টিরও বেশি একটি তালিকা সংকলন করেছেন যা তিনি জাল সংবাদ উৎস হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যার বেশিরভাগই তার মতে ডানপন্থী মতামত সমর্থন করে।[২৭]
অল্ট নিউজ দল "ইন্ডিয়া মিসইনফর্মড: দ্য ট্রু স্টোরি"[২৮][২৯] একটি বই লিখে। হার্পারকলিন্স দ্বারা প্রকাশিত বইটি মার্চ ২০১৯-এ প্রকাশিত হয়। বইটি অরুন্ধতী রায় দ্বারা "প্রাক-অনুমোদিত" হয়।[৩০] ২০১৭ সালে সিনহাকে গুগল নিউজল্যাব এশিয়া-প্যাসিফিক সম্মেলনে ভুয়া খবরের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Top 7 Platforms That Are Busting Fake News On Social Media"। Analytics India। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ Joy, Shemin (৬ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "FIR against Alt News co-founder Mohammed Zubair on NCPCR complaint"। Deccan Herald।
- ↑ Manish, Sai (৮ এপ্রিল ২০১৮)। "Busting fake news: Who funds whom?"। Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-০৩ – Rediff.com-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ গ Sengupta, Saurya (১ জুলাই ২০১৭)। "On the origin of specious news"। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭ – The Hindu-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Fake news in the time of the internet"। The Financial Express। ২৮ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "10 Instances That Show A Fake News Explosion Is Taking Place In India"। HuffPost। ২৬ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Dhawan, Himanshi (১৫ মে ২০১৭)। "Breaking fake news"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Pravda Media Foundation Profile"। International Fact-Checking Network, Poynter।
- ↑ Alawadhi, Neha (২০২০-০৫-০৪)। "WhatsApp launches chatbot to bust fake news, allies with global group"। Business Standard India। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ Tiwari, Ayush। "The embarrassment that is PIB Fact Check: Who fact-checks this 'fact checker'?"। Newslaundry (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ "A fact-checker's life: Exposing fake news and communalism, surviving social boycott"। Moneycontrol। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ Mantas, Harrison (২০ মে ২০২০)। "Why would Indian police issue and then withdraw a manual on misinformation? Political divides could be the answer"। Poynter Institute (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ [৯][১০][১১][১২]
- ↑ ক খ "To stop misinformation, ask questions: Interview with Alt News founder Pratik Sinha"। The News Minute।
- ↑ Sen, Shreeja (১২ মে ২০১৪)। "Gujarat riots activist Mukul Sinha dies at 63"। livemint.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ Janmohamed, Zahir। "Mukul Sinha, self-effacing Modi opponent and labour organiser who disliked being called a leader"। scroll.in। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "News website owner gets threat call from 'gangster'"। The Indian Express। ১০ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Mukul Sinha's son gets threat call from 'Pujari'"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Alt News co-founder Mohammed Zubair arrested for 'hurting religious sentiments'"। Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৬-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০২।
- ↑ "Kissi Se Na Kehna! Mohammed Zubair Arrested for Tweeting Photo from 1983 Hindi Film"। The Wire। ২৮ জুন ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২২।
- ↑ দয়া করে নিচের লিংকগুলো দেখুন
- ↑ "Alt News co-founder Pratik Sinha on the fake-news ecosystem in India"। The Caravan।
- ↑ "Inside the world of Hindu right wing fake news website DainikBharat.org"। Hindustan Times। ১৩ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Bhuyan, Anoo। "What the Indian Media Can Learn From the Global War on Fake News"। thewire.in। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "India ministry mocked for 'appropriating' Spain border"। BBC News। ১৫ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ Imran Ahmed Siddiqui (১৫ জুন ২০১৭)। "Border lights illuminate a Moroccan mockery"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "How Alt News is trying to take on the fake news ecosystem in India"। Firstpost। ৪ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Sinha, P; Shaikh, S (২০১৯)। India Misinformed : The True Story (English ভাষায়)। HarperCollins। আইএসবিএন 978-93-5302-838-1। ওসিএলসি 1274781508।
- ↑ "Upcoming book to lay bare propaganda of misinformation and hoaxes"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। IANS। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৩।
- ↑ "Upcoming book to lay bare propaganda of misinformation and hoaxes"। Outlook India। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৩।