দেবেশ ভট্টাচার্য
দেবেশ ভট্টাচার্য (জন্ম: ৩ নভেম্বর ১৯১৪ – মৃত্যু: ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪) একজন বাংলাদেশী মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও বিচারপতি। যিনি বাংলাদেশ হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। [১][২][৩]
দেবেশ ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ | (বয়স ৮৯)
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | বিচারপতি ও মানবাধিকার কর্মী |
দাম্পত্য সঙ্গী | চিত্রা ভট্টাচার্য |
সন্তান | দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাবিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ৩ নভেম্বর ১৯১৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গায় জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শুরু এলেঙ্গার মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে। তিনি টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে আই.এস.সি এবং ১৯৩৫ সালে বি.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেন। কলকাতার ইউনিভার্সিটি ল’ কলেজ থেকে ১৯৩৮ সালে বিএল ডিগ্রি এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।[১][৪]
রাজনৈতিক আন্দোলন
সম্পাদনাবিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং কৃষক শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। দু‘বছর (১৯৪৯-৫১) রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ শত্রু সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিমিত্তে গঠিত গণ-আদালতের তিনি ছিলেন অন্যতম বিচারক। বাংলাদেশ শান্তি কাউন্সিলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরে সংঘটিত জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার গণতদন্ত কমিশনের তিনি ছিলেন সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[১][৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৪১ সালে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬১ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। ১৯৬০ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন এবং ১৯৬৫ সালের বার কাউন্সিল অ্যাক্ট চালু হওয়া পর্যন্ত ঐ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পরে হাইকোর্টের রুল কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন এবং ঢাকা হাইকোর্টের অবলুপ্তি পর্যন্ত ঐ পদে বহাল ছিলেন। সম্পত্তি বিষয়ক আইন তথা দেওয়ানি আইনে তিনি বিশেষ পারদর্শি ছিলেন।[১][৬][৭]
২১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন জুন ১৯৭৫ সালে। ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার বেশ কিছু সাংবিধানিক ও মানবাধিকার বিষয়ক রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে।[১][৮]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাচিত্রা ভট্টাচার্যের সাথে দেবেশ ভট্টাচার্যের বিয়ে হয়। চিত্রা ভট্টাচার্য (জন্ম: ১৯২৬- মৃত্যু: ২০১০) ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইলের সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের দুই পুত্র সন্তান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং পদার্থবিজ্ঞানী দেবদর্শী ভট্টাচার্য এবং এক কন্যা দেবলিনা রায়।[১][৯]
লেখা-লেখি ও কাব্যচর্চা
সম্পাদনাবিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য পারিবারিক জীবন, আইন পেশা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত কাব্যচর্চাও করতেন। কল্পকাব্য মঞ্জুষা শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে তার রচিত কবিতাগুলো সংকলিত হয়েছে। চার খণ্ডে তার রচিত প্রবন্ধের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।[১] সম্প্রদায়গত আইনের সংস্কার ও অন্যান্য তার লেখা অত্যন্ত জনপ্রিয় বই।[১০][১১]
মৃত্যু
সম্পাদনাবিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে ঢাকার শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন কর্তৃক টাঙ্গাইলে একটি মাতৃ-শিশু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালিত হয়।[১][১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (২০১২)। "ভট্টাচার্য, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Irina Bhattacharya (নভেম্বর ৩, ২০১৪)। "A tribute to Justice Debesh Bhattacharya"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৫।
- ↑ "In memoriam : Justice Debesh Bhattacharya"। The Daily Star। ফেব্রুয়ারি ৫, ২০০৪। ডিসেম্বর ২২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫।
- ↑ "বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের জন্ম শতবার্ষিকী আজ"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ছিলেন আইনের দার্শনিক | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "দেবেশ চন্দ্রের মতো বিচারক পেতে আরেক প্রজন্ম লাগবে: প্রধান বিচারপতি | শেষ পাতা | The Daily Ittefaq"। archive1.ittefaq.com.bd। ২০১৯-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "'বিচারপতি দেবেশ ছিলেন আইনের দার্শনিক'"। Risingbd.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য || চতুরঙ্গ"। জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "Chitra Bhattacharya passes away"। দ্য ডেইলি স্টার। নভেম্বর ৩০, ২০১০। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৫।
- ↑ "সম্প্রদায়গত আইনের সংস্কার ও অন্যান্য - দেবেশ ভট্টাচার্য"। www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "সম্প্রদায়গত আইনের সংস্কার ও অন্যান্য - দেবেশ ভট্টাচার্য | বইবাজার.কম"। BoiBazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "জন্মশতবার্ষিকী > বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য : অনন্য ব্যক্তিত্ব"। www.bhorerkagoj.com। ২০১৯-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।