দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

বগুড়া জেলার একটি বিদ্যালয়

দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় অবস্থিত। বিদ্যালয়টি অত্র উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার মধ্যে খুবই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। পূর্বে বিদ্যালয়টির নাম দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে নাম পরিবর্তিত হয়ে দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় হয় এবং ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের আওতায় এটি জাতীয়করণ করা হয়।

দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
Front Of School.jpg
অবস্থান
মানচিত্র

স্থানাঙ্ক২৪°৫২′২৬″ উত্তর ৮৯°১০′৪৮″ পূর্ব / ২৪.৮৭৩৮° উত্তর ৮৯.১৮০০° পূর্ব / 24.8738; 89.1800
তথ্য
ধরনসরকারি
নীতিবাক্যমানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হল শিক্ষা
প্রতিষ্ঠাকাল১৯২৩
বিদ্যালয় জেলাবগুড়া
ইআইআইএন১১৯৪০৯ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রধান শিক্ষকআনিসুল ইসলাম লিটন
কর্মকর্তা১৬ জন [২]
শ্রেণী৬ষ্ঠ-১০ম
শিক্ষার্থী সংখ্যা৭১৩ জন [৩]
অ্যাথলেটিক্সফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল
ডাকনামদুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় [১]
ওয়েবসাইটdgpmhs.edu.bd

অবস্থানসম্পাদনা

বগুড়া শহর থেকে ২০ কিঃ মিঃ পশ্চিমে দুপচাঁচিয়া থানার ঠিক দক্ষিণ পাশে ও নাগর নদীর কোল ঘেঁষে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।

ইতিহাসসম্পাদনা

তৎকালীন ব্রিটিশভারতে অত্র এলাকার কিছু বিদ্যানুরাগী ব্যক্তির সহযোগিতায় ১৮৯২ সালে প্রথম সংস্কৃত টোল আকারে পরে ১৯১০ সালে প্রথম 'মধ্যবাংলা স্কুল' নামে এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় এবং কিছুদিন পর মধ্যবাংলা নামটি বিলুপ্ত হয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম হয় 'মাইনর ইংলিশ স্কুল'। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালে এটি 'মিডল ইংলিশ স্কুল' বা এম. ই. স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এম. ই. স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালের ০২ জানুয়ারি স্থানীয় জীতেন্দ্রনাথ চৌধুরী (ভুলু বাবু), মৃত আলহাজ্ব আজিজার রহমান তালুকদার, মৃত ডাক্তার আয়েজ উদ্দিন মন্ডল, মৃত মজিবর রহমান তালুকদার, মনিন্দ্রনাথ সাহা, ডাক্তার প্রাণ বল্লব সাহা, রুহিনী কান্ত বসাকসহ নাম না জানা বিদ্যানুরাগী ও সুধী মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দুপচাঁচিয়া হাইস্কুল নামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ সালের ০১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।[৪] সেই সময় বাবু নলিনী মোহন ভট্টাচার্য প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করে বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে অগ্রযাত্রা শুরু করে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে দেলোয়ার হোসেন খন্দকার, আব্দুল জব্বার কাদিয়ানী, নসিব উদ্দিন খাঁন, এ এ এম এমদাদুল হক, আফতাবুজ্জামান, ওসমান আলী ফকির, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল ওয়াহেদ ফকির (ভারপ্রাপ্ত) ও আনিসুুুল ইসলাম লিটন (বর্তমান)।[৫]

বিদ্যালয়ের জায়গা ও ভবনসম্পাদনা

বর্তমানে বিদ্যালয়ে মোট জায়গার পরিমাণ ৭.২৮ একর। বিদ্যালয়ের মোট ভবনের সংখ্যা ০৬টি। এর মধ্যে দু'টি ভবন প্রায় জরাজীর্ণ ও প্রায় পরিত্যক্ত।

বিদ্যালয়ের একটি ভবন অফিস এবং অন্যান্য ভবন শ্রেণীকক্ষ রূপে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যালয়ে একটি পাঠাগার, একটি ল্যাবরেটরি, একটি কম্পিউটার ল্যাবসহ শিক্ষক বিশ্রামাগার রয়েছে।

 
দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রাঙ্গণ।
 
বিদ্যালয়ের পূর্ন ভবনসমূহ

খেলার মাঠসম্পাদনা

বিদ্যালয়ের সম্মুখে একটি বড় খেলার মাঠ ও পিছনে একটি ছোট মাঠ রয়েছে। এই মাঠে জাতীয় দিবসের নানা কর্মসূচী সহ উপজেলার বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মাঠের ঠিক পশ্চিম পাশে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অবস্থিত।

প্রচলিত কোর্সসম্পাদনা

এ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বোর্ড অনুমোদিত ২টি কোর্স বা গ্রুপ রয়েছে। এগুলো হলঃ বিজ্ঞানমানবিক

সহশিক্ষা কার্যক্রমসম্পাদনা

বিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের সমন্বয়ে একটি স্কাউট দল, সততা সংঘ সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য একটি ক্লাব রয়েছে। এদের সমন্বয়ে বিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বনায়ন কার্যক্রম, স্কাউটিং কার্যক্রম সহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

বিশ্বকবির বাণীসম্পাদনা

 
বিশ্বকবির অভিনন্দন বাণী

এই স্কুলের ছাত্র ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী অনন্ত মোহন কুণ্ডু বিশ্ববরেণ্য ও কালজয়ী বিশ্বকবির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। এক সময় এ বিদ্যাপীঠ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে আশীর্বাদ বানী লিখে দিয়েছিলেন। যা এখনও বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে শোভা পাচ্ছে। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই পতিসরে ‘পূণাহ্য’ অনুষ্ঠান শেষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই বিদ্যালয়ে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে যাত্রা শুরুর আগে তিনি আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে আসতে পারেননি। তবে তিনি তার নিজস্ব প্যাডে স্বহস্তে যে আশীর্বাদ বানী তিনি লিখেছিলেন সেটি হল-

" দেশে জ্ঞানের অভিষেচন কার্য্যে দুবচাঁচিয়া হাইস্কুল অন্যতম কেন্দ্ররুপে যে সাধনায় প্রবৃত্ত, তাহাতে তাহার সফলতা আমি কামনা করি।"[৬]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীসম্পাদনা

  • রমেন্দ্রকুমার পোদ্দার, প্রাক্তন উপাচার্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (জুন ২০, ১৯৭৯ - ডিসেম্বর ৩০, ১৯৮৩ )।[৭] তিনি ১৯৪৬ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাট্রিকুলেশন পরিক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করেছিলেন।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালিকা"bogra.gov.bd [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. সুদেব কুমার, সিনিয়র শিক্ষক, দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।
  3. রেজিস্টার, দুপচাঁচিয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। তাং ২৬/০৫/১৫
  4. Bengal Secretariat Depot, 1927 সালে প্রকাশিত কলিকাতা গেজেট, পৃষ্ঠা নং-২১৮
  5. "দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়"web.archive.org। ২০১৯-০৫-১১। Archived from the original on ২০১৯-০৫-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১ 
  6. "নাগর কূলে রবি ঠাকুরের স্মৃতিগাঁথা"দ্য ডেইলি স্টার। সুকান্ত পার্থিব। ৮ মে ২০১৭। 
  7. "ঠাকুরের ছোটো নদী-355454 - অবসরে"কালের কণ্ঠ