দিল্লি লুট ছিল তৈমুর লং অর্থাৎ তৈমুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং দিল্লি সালতানাতের মধ্যে একটি যুদ্ধ। এটি ১৭ ডিসেম্বর ১৩৯৮ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল এবং ৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল এবং ১০০,০০০ এরও বেশি নাগরিকদের পাশাপাশি দিল্লির সেনাবাহিনীর গণহত্যার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

দিল্লীর পতন
মূল যুদ্ধ: Timurid conquests and invasions এবং তৈমুর লং এর অভিযান

মানচিত্রে তৈমুরের ভারত আক্রমণ দেখানো হচ্ছে ১৩৯৭-১৩৯৯
তারিখ১৭ ডিসেম্বর ১৩৯৮
অবস্থান
দিল্লি বর্তমানের ভারত
ফলাফল তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
তৈমুরীয় সাম্রাজ্য দিল্লি সালতানাত
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
তৈমুর লং
পির মুহাম্মদ
নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহ তুঘলক
মাল্লু ইকবাল
শক্তি
৯০,০০০ অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত

পটভূমি সম্পাদনা

তৈমুর ১৩৭০ সালে ক্ষমতা অর্জন করেন, তিনি দ্রুত যুদ্ধে জড়িত হন এবং আশেপাশের অনেক দেশ জয় করেন। যখন তিনি পারস্য এবং ইরাক জয় করেন, তখন দিল্লি সালতানাতে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৩৯৮ সালের দিকে, সেখানে দুজন শাসক ছিলেন যারা নিজেদেরকে সুলতান বলে পরিচয় দিতেন: নাসির উদ্দীন মাহমুদ শাহ তুঘলক, ফিরোজ শাহ তুঘলকের নাতি যিনি দিল্লি থেকে শাসন করছিলেন এবং নাসির উদ্দীন নুসরাত শাহ তুঘলক, ফিরোজ শাহ তুঘলকের আরেক আত্মীয় যিনি দিল্লি থেকে কয়েক মাইল দূরে ফিরোজাবাদ থেকে শাসন করছিলেন।[১] তৈমুর এই কথা শুনেছিলেন এবং তিনি ভারতের ধন-সম্পদের কথা জানতেন তাই দ্রুত দিল্লির দিকে চোখ ফেরান। তৈমুর তার পরবর্তী অভিযানের জন্য প্রস্তুতি ও সৈন্য সংগ্রহ শুরু করেছিলেন। যদিও তৈমুরের ভারতে শাসন করার বা ভারতীয় সাম্রাজ্যের আগ্রহের কোনো ইচ্ছা ছিল না, তবে তার অবশ্যই ভারতের বিপুল পরিমাণ সম্পদের প্রতি আগ্রহ ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভারত আক্রমণ ১৩৯৮ সম্পাদনা

১৩৯৮ সালে, তৈমুর ভারত আক্রমণ করার জন্য ৯০,০০০ এরও বেশি সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৩৯৮ তারিখে তৈমুর সিন্ধু নদী পেরিয়ে তুলাম্বা পৌঁছান যেখানে তিনি শহরটিতে লুটতরাজ চালান এবং এর বাসিন্দাদের হত্যা করেন। পরে অক্টোবরে তিনি মুলতানে পৌঁছান এবং শহরটি দখল করেন। তার বেশিরভাগ আক্রমণ ভারতীয়দের দ্বারা কোন যুদ্ধ এবং প্রায় কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি, কারণ তারা ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সঠিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়নি।

 
তৈমুর দিল্লির সুলতানকে পরাজিত করেন

সুলতান নাসির-উদ-দিন মাহমুদ শাহ তুঘলক এবং মাল্লু ইকবাল তৈমুরের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দিল্লিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাদের বাহিনী ছিল যুদ্ধের হাতি এবং যে হাতিদের দাঁতে ছিল বিষ মাখানো। কিন্তু তৈমুর একজন কৌশলবিদ ছিলেন এবং একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন, তিনি তার পদাতিক বাহিনীর চারপাশে পরিখা খনন করেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে ঘোড়ারা সহজেই হাতিদের ভয় পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক অধিনায়কেরা পদাতিক বাহিনীকে অশ্বারোহী বাহিনী থেকে রক্ষা করার জন্য পরিখা খনন করত কিন্তু তৈমুর তার বিপরীত কাজ করেছিল, যা তার সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়িয়েছিল। তৈমুর আরও জানত যে হাতিরা সহজেই আতঙ্কিত হয়, তৈমুর উটের উপর খড় এবং কাঠ বোঝাই করে। প্রথমে উটগুলো ছুটে যায় যুদ্ধের হাতির দিকে। হাতিরা যখন আতঙ্কিত হচ্ছিল, তৈমুর এবং তার বাহিনী দাহ্য তরল ভরা পাত্র এবং আগুনের তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। দিল্লির সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব হাতিগুলোর দ্বারাই বিষ আক্রান্ত হয়ে যায়, তৈমুর তখন তার প্রধান সেনাবাহিনীকে ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং দিল্লির সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায় এবং তৈমুরের ঘোড়সওয়াররা সুলতান নাসির-উদ-দিন মাহমুদ শাহ তুঘলকের সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দেয়। শহরটি ধ্বংসস্তূপে লুটতরাজ করা হয় এবং জনগণকে ক্রীতদাস করা হয়েছিল। সালতানাতের রাজধানী দিল্লী দখলের পর তৈমুরের প্রতি অসন্তুষ্ট জনগণ বিদ্রোহ শুরু করে। এ অবস্থা ৩ দিন ধরে চলে এবং সেনাবাহিনী "পাখিদের খাবার" হিসেবে পচনশীল মৃতদেহ ফেলে রাখে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

আরও দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Smith 1920, পৃ. 248-254।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

Smith, Vincent A. (১৯২০)। The Oxford History of India: From the Earliest Times to the End of 1911। Clarendon Press।