দাজ্জাল
দজ্জাল বা দাজ্জাল (আরবি: المسيح الدجّال, প্রতিবর্ণীকৃত: আল-মাসীহ আদ-দাজ্জাল; সিরীয়: ܡܫܝܚܐ ܕܓܠܐ, প্রতিবর্ণী. মসিহা দগ্গাল) ইসলামি বিধান অনুসারে একটি অশুভ চরিত্র। বিভিন্ন স্থান থেকে—সাধারণত পূর্বাঞ্চল, খোরাসান বা সিরিয়া ও ইরানের মধ্যবর্তী কোনো এলাকা থেকে—তার আগমন ঘটবে বলে ধারণা করা। দাজ্জাল চরিত্রটি খ্রিষ্টান পরলোকতত্ত্বে বর্ণিত খ্রিষ্টারি চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।[১]
আল-মাসিহুদ দাজ্জাল | |
---|---|
পূর্ণ নাম | আল-মাসিহুদ দাজ্জাল |
ছদ্মনাম | খ্রীষ্টারি |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম খ্রিষ্টধর্ম ইয়াহুদি ধর্ম |
নাম
সম্পাদনাদাজ্জাল (دجال) শব্দটি আরবি دجل বিশেষণের অতিশায়ন যার অর্থ মিথ্যা বা প্রতারণা।[২] এর অর্থ প্রতারক এবং সুরিয়ানি ভাষায় শব্দটির সমরূপ হল দগ্গালা (ܕܓܠܐ)।[৩] আল-মাসিহ আদ-দাজ্জাল শব্দবন্ধটির অর্থ প্রতারক মসিহ যার দ্বারা শেষ জমানার একজন প্রতারককে বোঝানো হয়। দাজ্জাল এক অশুভ সত্তা যে প্রকৃতি মসীহের ছদ্মবেশ ধারণ করবে।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাদাজ্জালের উত্থানের সাথে বেশ কয়েকটি স্থান যুক্ত, তবে সাধারণত, তিনি পূর্ব থেকে বেরিয়ে আসবেন। সাধারণত তার এক চোখ অন্ধ বলে বর্ণনা করা হয়; কোন চোখ অন্ধ তা অনিশ্চিত কেননা কোন হাদিসে বাম চোখ অন্ধ আবার কোন হাদিসে ডান চোখ অন্ধের কথা বলা হয়েছে। তবে তার দুটি চোখই ত্রুটিপুর্ন বলে বিবেচিত হয় - অন্তত - একটি পুরোপুরি অন্ধ এবং অন্যটি বেরিয়ে আছে।[৪][৫][৬] ত্রুটিপূর্ণ চোখের অধিকারী হওয়া প্রায়শই অশুভ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও ক্ষমতা দেওয়া হিসাবে বিবেচিত হয়। [৭]সে মক্কা ও মদিনা ব্যতীত প্রত্যেক শহরে প্রবেশ করে সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবে।[৮] একজন মিথ্যা মসীহ হিসেবে, এটা বিশ্বাস করা হয় যে অনেকে তার দ্বারা প্রতারিত হবে এবং তার দলে যোগ দেবে, তাদের মধ্যে ইহুদি, বেদুইন, তাঁতি, যাদুকর ও জারজ সন্তানেরা বেশি থাকবে। এছাড়াও তাকে শয়তানদের একটি বাহিনী সহায়তা করবে। তা সত্ত্বেও, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমর্থক হবে ইহুদিরা, যাদের কাছে তিনি ঈশ্বরের অবতার বলে বিবেচিত হবেন। [৯] দাজ্জাল অলৌকিক কাজ করতে সক্ষম হবে, যেমন অসুস্থদের নিরাময় করা, মৃতদেরকে জীবিত করা (যদিও কেবল মাত্র যখন তার শয়তান অনুসারীদের দ্বারা সমর্থিত মনে করবে), পৃথিবীর গাছপালা বৃদ্ধি করা, গবাদি পশুসমৃদ্ধ হওয়া, এবং সূর্যের চলাচল বন্ধ করে দেয়া। [১০] তাঁর অলৌকিক ঘটনাগুলো ঈসা (আঃ) দ্বারা সম্পাদিত অলৌকিক ঘটনাগুলোর অনুরূপ। পরিশেষে "ঈসা (আঃ) এর হাতে নিহত হবে। দাজ্জাল গলতে শুরু করবে যখন ঈসা (আঃ)-কে দেখতে পাবে। তারপর বর্তমান ইসরায়েলের বাবে লুদ নামক স্থানে ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে বর্শা দিয়ে হত্যা করবেন বলে অনেক বর্ণনায় এসেছে। দাজ্জালের প্রকৃতি অস্পষ্ট। যদিও তার জন্মের প্রকৃতি ইঙ্গিত করে যে প্রথম প্রজন্মের অ্যাপোক্যালিপ্টিক্স তাকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করত, তবে তাকে ইসলামিক ঐতিহ্যে মানব আকারে শয়তান (শায়তান) হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়।[১১]
সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি
সম্পাদনাসুন্নি মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল একজন মানুষ এবং যখন দাজ্জাল উপস্থিত হবে, তখন সে চল্লিশ দিন থাকবে - প্রথম দিন হবে একটি বছরের মতো, পরবর্তী দিন একটি মাসের মতো, তার পরবর্তী দিন সপ্তাহের মতো এবং তার বাকি দিনগুলি স্বাভাবিক দিনের মতো। [১২]দাজ্জালের আবির্ভাবের কিছু সময় পরে, ঈসা (আঃ) দামেস্কের পূর্ব দিকের একটি সাদা মিনারের উপর অবতরণ করবেন ,[১৩] মনে করা হয় সিরিয়ার দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে অবস্থিত। তিনি আকাশ থেকে নেমে আসবেন দুটি পোশাক পরে হালকাভাবে জাফরান দিয়ে রঙ করা এবং তার হাত দুটি ফেরেশতার কাধে থাকবে। যখন সে মাথা নিচু করবে তখন মনে হবে যেন তার চুল থেকে জল প্রবাহিত হচ্ছে, যখন সে মাথা তুলবে, তখন মনে হবে যেন তার চুলরূপালী মুক্তো দিয়ে পুঁতি করা হয়েছে। তাঁর শ্বাস যতদূর তিনি দেখতে পাবেন ততদূর পৌঁছাবে। প্রত্যেক অবিশ্বাসী এতে মারা যাবে।[১৪]
এরপর দাজ্জালকে ইসরায়েলের শহর লোদের গেটে (বাবে লুদ) ধাওয়া করা হবে যেখানে তাকে 'ইসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)' ধরে হত্যা করবেন। [১৫] তারপর তিনি ক্রুশ ভাঙবেন, শূকরকে হত্যা করবেন, জিজিয়া বিলুপ্ত করবেন এবং সমস্ত জাতির মধ্যে শান্তি স্থাপন করবেন। [১৬] ঈসা (আঃ) এর শাসন ন্যায়সঙ্গত হবে এবং সবাই তাঁর কাছে এক সত্য (ইসলাম) ধর্মের মাঝে প্রবেশ করবে।
হাদীস
সম্পাদনাআব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)... দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: আমি তোমাদেরকে তার বিষয়ে সতর্ক করছি। প্রত্যেক নবীই তাঁর জাতিকে দাজ্জালের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। .... তবে পূর্ববর্তী কোনো নবী তাঁর জাতিকে যে কথা বলেন নি আমি তোমাদেরকে সে কথা বলছি। তোমরা জেনে রাখ যে, দাজ্জাল কানা (একটি চক্ষু নষ্ট) আর আল্লাহ কানা নন।
–বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২১৪, ৬/২৬০৭; মুসলিম আস- সহীহ ৪/২২৪৫ (কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সাআ, বাবু যিকরি ইবনিস সাইয়াদ, নং ১৬৯)
(২) আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
‘‘আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের বিষয়ে একটি কথা বলব যা কোনো নবী তাঁর জাতিকে বলেন নি; তা হলো যে, দাজ্জাল কানা। আর সে তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের নমুনা নিয়ে আসবে। যাকে সে জান্নাত বলবে সেটিই জাহান্নাম।’’ – মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২২৫০ (কিতাবুল ফিতান..., যিকরিদ্দাজ্জাল)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ David Cook Studies in Muslim Apocalyptic The Darwin Press, Inc. Princeton, New Jersey আইএসবিএন ০৮৭৮৫০১৪২৮ p. 94
- ↑ Wahiduddin Khan (২০১১)। The Alarm of Doomsday। Goodword Books। পৃষ্ঠা 18।
- ↑ David Cook Studies in Muslim Apocalyptic The Darwin Press, Inc. Princeton, New Jersey আইএসবিএন ০৮৭৮৫০১৪২৮ p. 93
- ↑ A, Moulana Muhammad (২০১৮-০৫-২২)। "Description of Dajjal's eyes"। Hadith Answers (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১০।
- ↑ "Sahih Muslim 169e - The Book of Tribulations and Portents of the Last Hour - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১০।
- ↑ "Sahih Muslim 2934a - The Book of Tribulations and Portents of the Last Hour - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১০।
- ↑ Cook, David (২০০২)। Studies in Muslim apocalyptic। Princeton, N.J.: Darwin Press। আইএসবিএন 0-87850-142-8। ওসিএলসি 50143403।
- ↑ Abu-Rabi', Ibrahim (২০০৮-০৪-১৫)। The Blackwell Companion to Contemporary Islamic Thought (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 978-1-4051-7848-8।
- ↑ Cook, David (২০০২)। Studies in Muslim apocalyptic। Princeton, N.J.: Darwin Press। আইএসবিএন 0-87850-142-8। ওসিএলসি 50143403।
- ↑ Cook, David (২০০২)। Studies in Muslim apocalyptic। Princeton, N.J.: Darwin Press। আইএসবিএন 0-87850-142-8। ওসিএলসি 50143403।
- ↑ Cook, David (২০০২)। Studies in Muslim apocalyptic। Princeton, N.J.: Darwin Press। আইএসবিএন 0-87850-142-8। ওসিএলসি 50143403।
- ↑ "Sunan Abi Dawud 4321 - Battles (Kitab Al-Malahim) - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১।
- ↑ "Sunan Abi Dawud 4321 - Battles (Kitab Al-Malahim) - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১।
- ↑ "Sahih Muslim 2937a - The Book of Tribulations and Portents of the Last Hour - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১।
- ↑ "Sunan Abi Dawud 4321 - Battles (Kitab Al-Malahim) - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১।
- ↑ "Sunan Ibn Majah 4077 - Tribulations - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১১।
ইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |