জিয়াউল আহসান
জিয়াউল আহসান একজন সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। তিনি জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক ছিলেন। [১] এনটিএমসিতে যোগদানের আগে, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার একজন পরিচালক (অভ্যন্তরীণ বিষয়ক) ছিলেন। তিনি এর আগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জোরপূর্বক গুম ও খুন সহ বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার জন্য ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আহসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি মেজর জেনারেল এএসএম রিদওয়ানুর রহমানকে এনটিএমসি মহাপরিচালক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। [২] [৩]
মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বিএসপি, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) | |
---|---|
জন্ম | ঝালকাঠি, পূর্ব পাকিস্তান, (বর্তমান বাংলাদেশ) | ৪ ডিসেম্বর ১৯৭০
আনুগত্য | বাংলাদেশ |
সেবা/ | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯৯১ - ২০২৪ |
পদমর্যাদা | মেজর জেনারেল |
সার্ভিস নম্বর | ৪০৬০ |
ইউনিট | ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট |
নেতৃত্বসমূহ |
|
পুরস্কার | বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি) মেরুন প্যারাসুট উইং |
পুলিশ কর্মজীবন | |
ইউনিট | র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন |
আনুগত্য | বাংলাদেশ |
সময়কাল | ২০০৯-২০১৯ |
পদমর্যাদা | বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক |
পুরস্কার | বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) |
কর্মজীবন
সম্পাদনাসেনাবাহিনী
সম্পাদনাআহসান ১৯৯১ সালের ২১ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। [৪] তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির এর ২৪তম দীর্ঘ কোর্সের স্নাতক ছিলেন। [১] তিনি একজন কমান্ডো এবং স্কাইডাইভার।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
সম্পাদনাআহসান ২০০৯ সালের ৫ মার্চ র্যাব-২’র উপ-অধিনায়ক তখন তিনি মেজর ছিলেন। তিনি একই বছর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ২৭ আগস্ট, ২০১০ এ র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন [৫] [৪] কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) করা হয়। [৪] তিনিই একমাত্র সেনা কর্মকর্তা যিনি সর্বোচ্চ সময়ের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাইরে থেকেছেন।
আহসান গত সাড়ে সাত বছরে বেশ কয়েকটি অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনকে কলকাতা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল। [৬] ২৯ এপ্রিল ২০১৪ এ, আহসান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ এবং মেজর আরিফ হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে হত্যা করার নির্দেশ দেন যিনি কর্নেল তারেককে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের চুক্তি দিয়েছিলেন। [৭] যদিও আহসান জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হুজি এবং আনসারুল্লাহসহ অন্যান্য চরমপন্থী সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ স্থানীয় স্থানীয় নেতারা এবং কুখ্যাত অপরাধীরা। যেমন 'ড্রাগ লর্ড' আমিন হুদা। [৮]
গ্রেফতার
সম্পাদনাঅসহযোগ আন্দোলন (২০২৪) চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, আহসানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করা হয়, ১৬ আগস্ট শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নিউ মার্কেট থানায় হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম।[৯] এর আগে বুধবার ৭ আগস্ট ভোররাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বোর্ডিং ব্রিজে ফিরিয়ে আনার পর তাকে আটক করা হয়।[১০][১১] [১২] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে ১৬আগস্ট (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় থেকে জিয়াউল আহসানকে আদালতে নেওয়া হয়। দায়েরকৃত মামলায় মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড নিতে আবেদন করে। আদালতের কাছে, আদালত শুনানি শেষে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ১৬ আগস্ট শুক্রবার বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব এ রিমান্ড আদেশ দেন।[১৩][১৪][১৫][১৬]
বিতর্ক
সম্পাদনাসাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালীন একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন সব ব্যক্তির স্পর্শকাতর কল রেকর্ড তার নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশে বন্ধ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায় জিয়াউল আহসানের নির্দেশে। টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন। জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।[১৭][১৮][১৯][২০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "RAB's Ziaul Ahsan transferred to NSI"। New Age (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৪-২৮। ২০১৬-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ "Reshuffle in top army posts; General Zia sacked"। The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬।
- ↑ "Brigadier Ziaul Ahsan joins as NSI director"। Samakal। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ ক খ গ "RAB ADG Ziaul Ahsan promoted, made director of National Security Intelligence"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ "News Details"। Bangladesh Sangbad Sangstha। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ "Zia new NSI director"। The Daily Observer। ২০১৬-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ Hasan, Rashidul; Hossain, Emran (২০১৫-০৫-১৯)। "Maj Arif tells of Zia's role"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬।
- ↑ "র্যাবের জিয়া এখন এনএসআইয়ে"। bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১২।
- ↑ "আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আলোচিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার"। চ্যানেল আই। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "Sacked Bangladeshi intelligence chief 'arrested' at Dhaka Airport"। The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৭।
- ↑ "সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ৮ দিনের রিমান্ডে"। দৈনিক যুগান্তর। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ"। দৈনিক কালের কন্ঠ। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ৮ দিনের রিমান্ডে"। নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ৮ দিনের রিমান্ডে"। দৈনিক কক্সবাজার। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আড়ি পেতে কল রেকর্ড ফাঁস করে দিতেন জিয়াউল আহসান"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "যেসব অভিযোগ উঠে আসছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে"। দৈনিক যুগান্তর। ১৭ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আলোচিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "রিমান্ডে শাপলা চত্বরের অপারেশনসহ যেসব বিষয়ে তথ্য দিলেন মেজর জিয়াউল আহসান"। দৈনিক যুগান্তর। ২২ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৪।