বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হয় এবং এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।[১] ২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পরপরই আন্দোলন সফল করার জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন।[২] আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ৩রা আগস্টে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে, যার মধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন।[৩]
গঠিত | ১ জুলাই ২০২৪ |
---|---|
ধরন | ছাত্র আন্দোলন |
উদ্দেশ্য | ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান |
অবস্থান | |
আহ্বায়ক | হাসনাত আবদুল্লাহ |
সদস্যসচিব | আরিফ সোহেল |
মুখপাত্র | উমামা ফাতেমা |
সম্পৃক্ত সংগঠন | জাতীয় নাগরিক কমিটি |
প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক সমন্বয়ককে এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিস আলম, ইংরেজি বিভাগের হাসনাত আবদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের আসিফ মাহমুদ ও ভূগোল বিভাগের আবু বাকের মজুমদার,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের খান তালাত মাহমুদ রাফি,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং অন্যান্য।[৪]
ইতিহাস
২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকায় গণপরিবহন বন্ধ এবং রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চালায় এবং পরবর্তীতে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয় যা "বাংলা ব্লকেড" কর্মসূচি নামে পরিচিত। বাংলা ব্লকেড চলাকালীন রাজধানীতে শুধু মেট্রো রেল চালু ছিল।[৫] পরবর্তী দিনগুলিতেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচিত পালিত হয়। এইসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার শিকার হয়। ১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।[৬] এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন,[৭] প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়।[৮] এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন।[৯] ১৫ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি”। পরবর্তী দিনগুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চলে। ১৭ জুলাই রাতে তারা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা করে।[১০]
১৯ জুলাইতেও সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ চলে। এদিন মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। যেসময়ে নাহিদ ইসলামকে আটক করা তার কাছাকাছি সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ।[১১] ২০ জুলাই সরকারের তিনজন মন্ত্রীর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেই বৈঠক ও বৈঠকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল অভিযোগ করে বলেন, “তারা [গতকাল রাতে মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করা তিন প্রতিনিধি] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা পোর্শনও [অংশ] না। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেই নাই। তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচার করেন, তবে তারা মিথ্যাচার করছেন।” অন্য আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, “কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে।”[১২]
২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন, তিনি জানান “আমাদের চার দফার মধ্যে রয়েছে - ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস চালু, সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং কারফিউ প্রত্যাহার ... যারা নয় দফা দাবি ও শাটডাউন অব্যাহত রেখেছে তাদের সাথে আমাদের নীতিগত কোন বিরোধ নেই। নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ না থাকায় আমরা তাদের সাথে কথা বলতে পারছি না”। ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকার পর ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। ২৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার চাপ তৈরি করা।
২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান।[১৩] ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় গোয়েন্দা শাখা। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।[১৪] পরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। ২৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু পুলিশে আটক হওয়া অবস্থায় পুলিশের অফিসে বসেই বাকি সমন্বয়কারীদের সাথে যোগাযোগ না করে এমন ঘোষণা দেয়ায় এই ঘোষণাকে সরকার ও পুলিশের চাপে দেয়া হয়েছে বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাকিরা।[১৫]
৩১ জুলাই হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ৩১ জুলাই বুধবার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালন করে।[১৬] ১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে বেলা দেড়টার একটু পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।[১৭] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২ আগস্ট শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।[১৮] ২ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন যে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও বিবৃতিটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি।[১৯]
অসহযোগ কর্মসূচি
৩ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা। রূপরেখাগুলো ছিল:
- কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।
- বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।
- সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
- প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না।
- সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।
- বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।
- দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না।
- গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।
- জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।
- পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরণের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।
- দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
- বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।
- আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।
- বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এক দফা দাবি
৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেন। এক দফা ঘোষণার সময় শহীদ মিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য সমন্বয়করা। তারা হলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের।[২০]
শুরুতে ৬ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা করে। তবে এই পরিস্থিতি বিবেচনায় সমন্বয়করা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ই আগস্ট ঘোষণা করেন। আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্ট অনেক জেলায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, এতে ১০৮জন সাধারণ নাগরিক ও পুলিশ নিহত হয়।[২১]
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে সম্মিলিত ছাত্র-জনতার এক গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেন এবং দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।[২২][২৩] এরই মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটে।[২৪]
আন্দোলন পরবর্তী
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা জানান। সেইদিন রাষ্ট্রপতিও জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তার ভাষণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা জানান ও পরদিন এই লক্ষ্যে সংসদ ভেঙ্গে দেন।[২৫][২৬] ৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতির সাথে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[২৭] ৮ আগস্ট শপথগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়। নতুন এই সরকারে ১৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, যাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদও রয়েছেন।[২৮] ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত ৮টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চার সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে হাসনাত আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক, আরিফ সোহেলকে সদস্য সচিব, আবদুল হান্নান মাসউদকে মুখ্য সংগঠক এবং উমামা ফাতেমাকে মুখপাত্র করা হয়েছে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ প্রতিবেদক, বিশেষ (২০২৪-০৮-০৫)। "পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৮।
- ↑ "কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ৬৫ সদস্যের কমিটি গঠন"। প্রথম আলো। ৮ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন"। প্রথম আলো। ৩ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "কোটা আন্দোলন: নেতৃত্বের কৌশল ও ছাত্ররা সংগঠিত হলো যেভাবে"। বিবিসি বাংলা। ১২ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আজ ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, সড়কে 'বাংলা ব্লকেড'"। প্রথম আলো। ৭ জুলাই ২০২৪। ৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছেন আন্দোলনকারীরা"। প্রথম আলো। ১৪ জুলাই ২০২৪। ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন, কোটা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী"। আজকের পত্রিকা। ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাবি"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪।
- ↑ মাহমুদ, নাদিম (১৬ জুলাই ২০২৪)। "শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' রক্ষা হবে কি"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "সারা দেশে আজ 'কমপ্লিট শাটডাউন', জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধের ঘোষণা"। প্রথম আলো। ১৮ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের: 'শাটডাউন' কর্মসূচি চলবে"। দৈনিক ইনকিলাব। ২৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "কোটা আন্দোলনকারী আর মন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক নিয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতভেদ"। বিবিসি বাংলা। ২০ জুলাই ২০২৪। ২১ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "নাহিদসহ তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে"। প্রথম আলো। ২৬ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৭-২৭)। "কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৭।
- ↑ রহমান, আবদুর (২০২৪-০৭-২৮)। "'সমন্বয়কদের জিম্মি করে বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে'"। যমুনা টেলিভিশন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯।
- ↑ ডেস্ক, প্রথম আলো (৩১ জুলাই ২০২৪)। "'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-০১)। "ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিল ডিবি"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-০২)। "'প্রার্থনা ও গণমিছিল' কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০২।
- ↑ "আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি স্বেচ্ছায় দেইনি, অনশনের খবর পরিবার-মিডিয়া থেকে গোপন রাখা হয়: ৬ সমন্বয়ক"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২০২৪-০৮-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-০৩)। "সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৪।
- ↑ হাসান, আহমদুল (২০২৪-০৮-১২)। "৪-৬ আগস্ট: তিন দিনেই নিহত ৩২৬ জন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ প্রতিবেদক, বিশেষ (২০২৪-০৮-০৫)। "পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ প্রতিনিধি (২০২৪-০৮-০৫)। "ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছালেন দেশত্যাগী শেখ হাসিনা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ ডেস্ক, প্রথম আলো (২০২৪-০৮-০৫)। "বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৫।
- ↑ "জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন রাষ্ট্রপতি"। আরটিভি। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ জনকণ্ঠ, দৈনিক। "জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা"। দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬।
- ↑ "'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চূড়ান্ত রূপরেখা রাতের মধ্যেই ঘোষণা'"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "অন্তর্বর্তী সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পেয়েছেন"। বিবিসি বাংলা। ৯ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২৪।