জিন-ব্যাপটিস্ট ল্যামার্ক
জঁ-বাতিস্ত লামার্ক (ফরাসি: Jean-Baptiste Pierre Antoine de Monet, Chevalier de Lamarck) (১লা আগস্ট, ১৭৪৪ - ১৮ই ডিসেম্বর, ১৮২৯) ছিলেন প্রখ্যাত ফরাসি সৈনিক, প্রকৃতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই বিবর্তন ঘটেছে, এই মতবাদের প্রথম প্রস্তাবকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ফ্রান্সের পিকার্দি-তে এক দরিদ্র সৈনিক পরিবারের একাদশ সন্তান হিসেবে তার জন্ম হয়। লামার্ককে একটি জেসুইট কলেজে পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর তিনি সৈনিকদলের সাথে যোগদান করেন। প্রুশিয়ার বিরুদ্ধে সংঘটিত পমেরানীয় যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ কমিশন লাভ করেন। সেনা কর্মকর্তা হিসেবে মোনাকোতে অবস্থানকালে প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ে মনোযোগী হয়ে উঠেন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া উদ্ভিদবিজ্ঞানে বিশেষ আগ্রহ ছিল তার। এ কারণেই বের্নার দ্য জুসিও (Bernard de Jussieu)-র কাছে প্রায় ১০ বছর উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষা করেছিলেন। কোষ তত্ত্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অবদানকারীদের মধ্যে তিনি একজন।
জঁ-বাতিস্ত লামার্ক | |
---|---|
জন্ম | ১লা আগস্ট, ১৭৪৪ বাজঁতাঁ, পিকার্দি |
মৃত্যু | ১৮ই ডিসেম্বর, ১৮২৯ |
জাতীয়তা | ফরাসি |
পরিচিতির কারণ | বিবর্তন |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | প্রকৃতিবিদ |
ফ্লর ফ্রঁসে (Flore Français) নামে একটি তিন খণ্ডের মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশের পর ১৭৭৯ সালে তিনি আকাদেমি দে সিয়ঁস (Académie des sciences) তথা ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্যপদ লাভ করেন। এই একাডেমির সদস্যপদ লাভে তাকে সহায়তা করেছিলেন জর্জ-লুই ল্যক্লের, কোঁত দ্য বুফোঁ। অচিরেই লামার্ক জার্দাঁ দে প্লঁত (Jardin des Plantes)-এর কাজে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৭৮৮ সালে তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ১৭৯৩ সালে মুজেয়াঁ নাসিওনাল দিস্তোয়ার নাতুরেল (Muséum national d'histoire naturelle) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি সেখানে প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৮০১ সালে লামার্ক সিস্তেম দে আনিমো সঁ ভের্তেব্র (Système des Animaux sans Vertebres) নামক একটি মূল্যবান বই প্রকাশ করেন যার বিষয়বস্তু ছিল অমেরুদণ্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস। ১৮০২ সালের একটি প্রকাশনায় তিনি জীববিজ্ঞানের জন্য "biologie" নামটি ব্যবহার করেন। আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে এই শব্দের ব্যবহার এখানেই প্রথম করা হয়েছিল। অমেরুদণ্ডী প্রাণিবিজ্ঞানের প্রভাবশালী গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে কাজ চালিয়ে যান লামার্ক। বর্তমান যুগে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত যে তত্ত্বের কারণে তার নাম "মৃদু উত্তরাধিকার" বা লামার্কবাদ। একে "অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার" তত্ত্বও বলা হয়। চার্লস ডারউইনের পূর্ব পর্যন্ত সব প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদই তার মৃদু উত্তরাধিকার তত্ত্বকে মেনে নিয়েছিলেন। তার মতবাদের মধ্যেই বিবর্তনের প্রথম সত্যিকারের আসঞ্জনশীল তত্ত্ব নিহিত ছিল। তার মতবাদে বলা হয়েছে, একটি আলকেমীয় জটিলীকরণ প্রক্রিয়া জীবকূলকে ক্রমান্বয়ে জটিলতর করেছে এবং একটি দ্বিতীয় পারিপার্শ্বিক বল তাদেরকে স্থানীয় পরিবেশের সাথে অভিযোজিত করে তুলেছে। বৈশিষ্ট্যের ব্যবহার, অব্যবহার এবং এক জীবের সাথে অন্য জীবের পার্থক্য করে দেয়ার মাধ্যমে এই পারিপার্শ্বিক বল কাজ করেছে।
প্রধান রচনাবলী
সম্পাদনালামার্কের সকল রচনা www.lamarck.cnrs.fr নামক ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে। সেখানে ওয়ার্ড এবং অন্যান্য সফ্ট মাধ্যমে এগুলো পাওয়া যায়। এছাড়া রচনাবলীর বিভিন্ন শব্দ ও তথ্য অনুসন্ধানও করা যায়।
- Philosophie zoologique, ou Exposition des considérations relatives à l’histoire naturelle des animaux... (১৮০৯)
- Système des animaux sans vertèbres, ou tableau général des classes, des ordres et des genres de ces animaux; présentant leurs caractères essentiels et leur distribution, d'après la considération de leurs... (১৮০১)
- Histoire naturelle des animaux sans vertèbres, présentant les caractères généraux et particuliers de ces animaux... (১৮১৫-২২)
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- The Imaginary Lamarck: A Look at Bogus "History" in Schoolbooks - Michael Ghiselin
- Epigenetics: Genome, Meet Your Environment
- বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে লামার্কের অনুসারীবৃন্দ
- গুটেনবের্গ প্রকল্পেA. P. Packard. Lamarck, the Founder of Evolution, His Life and Work
- Jean-Baptiste Lamarck: works and heritage, লামার্ক সম্বন্ধনীয় অনলাইন তথ্যভাণ্ডার ও সাহিত্য সংকলন