জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি) [১] গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। মহাপরিচালক একাডেমীর প্রধান। বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সরকারের সচিব সুকেশ কুমার সরকার

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি
সংস্থার রূপরেখা
ধরনস্বায়ত্বশাসিত (সর্বজনীন)
যার এখতিয়ারভুক্তজাতীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
সদর দপ্তর৩/এ, নীলক্ষেত, ঢাকা-১২০৫
দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী
  • আ হ ম মোস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী
সংস্থা নির্বাহী
মূল সংস্থাপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
ওয়েবসাইটwww.napd.gov.bd
জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি)

ইতিহাস সম্পাদনা

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি, আধাসরকারী ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নভেম্বর ১৯৮০ সালে এই একাডেমি প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৪ সালে একাডেমি সরকারের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ০৬-০১-১৯৮৫ তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির বোর্ড অব গভর্নরসকে বডি কার্পোরেটে রুপান্তর করা হয়। ০৩-০২-১৯৮৫ তারিখে ‘সরকারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ -১৯৬১’ এর আওতায় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিকে একটি ইন্সটিটিউট হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এটির ক্ষেত্রে উক্ত অধ্যাদেশ কার্যকরের আদেশ জারী করা হয়।

২০০৭ সালে ১২ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত ’র্বোড অব গভর্নরস’-এর এক সভায় একাডেমির নাম ’’পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি’’ এর পরিবর্তে ‘‘জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি’’ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৩০ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে একাডেমির নতুন নামকরণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ৩ মার্চ, ২০১০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একাডেমির ‘‘রজত জয়ন্তী’’ পালিত হয়। একাডেমি ৩/এ, নীলক্ষেত, ঢাকায় ১.০০ একর জমির ওপর ৯ম তলা প্রশিক্ষণ ভবন, ৭ম তলা ডরমিটরী ভবন ও ৩য় তলা ক্যাফেটেরিয়া ভবন এবং ০৪টি আবাসিক ভবন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত।

ভিশন সম্পাদনা

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া।

মিশন সম্পাদনা

প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ে দক্ষ এবং নৈতিকভাবে শক্তিশালী পেশাদার মানবসম্পদ গড়ে তোলা।

একাডেমির অবস্থান সম্পাদনা

একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে নীলক্ষেতে নয়তলা বিশিষ্ট ভবনে অবস্থিত। ক্যাম্পাসটি সবদিক বিবেচনায় অদ্বিতীয়। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। তাছাড়া এর কাছাকাছি রয়েছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস একাডেমি, চারুকলা ইনিস্টিটিউট।

একাডেমির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পাদনা

  1. বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণ আয়োজন
  2. অনুরোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের আয়োজন
  3. উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মূল্যায়ন ও গবেষণার আয়োজন
  4. বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান
  5. কর্মশালা, সেমিনার, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিকল্পনা, উন্নয়ন অর্থনীতি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে নিত্য নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের চর্চা অব্যাহত রাখা

পরিচালনা পর্ষদ সম্পাদনা

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির নীতিনির্ধারণ, সুষ্ঠু কার্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড অব গভর্নরস গঠন করে দিয়েছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী উক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান। বোর্ডের অন্যান্য সদস্য হলেনঃ
(১) সচিব, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা -ভাইস চেয়ারম্যান।
(২) সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা - সদস্য।
(৩) সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা -সদস্য।
(৪) সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা -সদস্য।
(৫) সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা -সদস্য।
(৬) রেক্টর, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা -সদস্য।
(৭) সদস্য-সচিব, জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিল ও অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় -সদস্য।
(৮) সভাপতি, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মতিঝিল, ঢাকা -সদস্য।
(৯) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম), সোবহানবাগ, ঢাকা -সদস্য।
(১০) চেয়ারম্যান, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা -সদস্য।
(১১) পরিচালক, আই বি এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা -সদস্য।
(১২) প্রেসিডেন্ট, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ, কাওরান বাজার, ঢাকা -সদস্য।
(১৩) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আগারগাঁও, ঢাকা -সদস্য।
(১৪) মহাপরিচালক, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমী, নীলক্ষেত, ঢাকা -সদস্য- সচিব।

প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ সম্পাদনা

প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রধান কাজ। এনএপিডি ১৯৮১ সন হতে জুন, ২০১৫ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৩২৬৯১ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। একাডেমি তিন ধরনের কোর্স পরিচালনা করে থাকে। দিবাকালীন কোর্স যা সকাল ৯:০০ টা থেকে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সান্ধ্যকালীন কোর্স যা সন্ধ্যা ৬:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ পর্সন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া অনুরোধ কোর্স বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে এনএপিডি বাস্তবায়ন করে থাকে।

গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদনা

গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করাও একাডেমির অন্যতম প্রধান কাজ। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ০৮টি এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবচরে ০২টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি নিয়মিতভাবে ডেভেলপমেন্ট রিভিউ, এনএপিডি বার্তা, ট্রেনিং ক্যালেন্ডার, বার্ষিক প্রতিবেদন ইত্যাদি প্রকাশ করে আসছে। জার্নালে ছাপার জন্য মূলতঃ দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও উন্নয়ন বিষয়ে সাম্প্রতিক কালের তথ্য ভিত্তিক প্রবন্ধকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সাধারণতঃ দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের লেখা এতে ছাপা হয়। এনএপিডি প্রশিক্ষণ ও এনএপিডি গবেষণা নামে ০২টি বুকলেট প্রকাশ করা হয়েছে।

গ্রন্থাগার সম্পাদনা

জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমের সহায়ক শাখা হিসেবে গ্রন্থাগারটি ১৯৮১ সন থেকে অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রন্থাগারে সাম্প্রতিক প্রকাশিত দেশী-বিদেশী উন্নয়ন বিষয়ক বই, জার্নাল/রিপোর্ট, গবেষণা প্রতিবেদনসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। একাডেমির প্রশাসনিক ভবনের ৫ম তলার উত্তর পার্শ্বে লাইব্রেরীর অবস্থান। বর্তমানে লাইব্রেরীতে যাবতীয় বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা