জরুরি চিকিৎসা সেবা

ইমারজেন্সি মেডিকেল সার্ভিস(EMS)তথা জরুরি চিকিৎসাসেবা,যাকে অ্যাম্বুলেন্স বা ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা হিসেবেও অভিহিত করা হয়, হল ঐসব সেবা যেগুলো মূলত হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স বা অনুরূপ গাড়িতে জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক অসুস্থতা বা আঘাতের চিকিৎসায় দেয়া হয়।[১] এই ধরনের সেবাগুলোকে প্রাথমিক প্রতিবিধান স্কোয়াড তথা ফাস্ট স্কোয়াড ,[২] [৩] ইমারজেন্সি স্কোয়াড,[৪] রেস্কিউ স্কোয়ড, অ্যাম্বুলেন্স স্কোয়াড,[৫] লাইফ স্কোয়াড[৬], অ্যাম্বুলেন্স কর্পোরেশন[৭] বা EMAS কিংবা EMARS-জাতীয় সংক্ষিপ্ত নামেও অভিহিত করা হতে পারে। 

সারিবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণত সাধারণ জনগণ EMS-সেবা পেতে জরুরি ফোন নম্বরের সাহায্যে কল করে। জরুরি ফোন নম্বরের সাহায্যে কল করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করে। অ্যাম্বুলেন্সই হল ইএমএস সেবার প্রদানের প্রধান বাহন; যদিও কোথাও কোথাও গাড়ি, মোটরসাইকেল, বিমান বা নৌযানও ব্যবহার করে থাকে। ইএমএস কর্তৃপক্ষ নন-ইমারজেন্সি রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ আঞ্জাম দিতে পারে আবার কেউ কেউ কঠিন উদ্ধারঅভিযান যেমন, অ্যাক্সিডেন্টস্থলের মানুষদের উদ্ধারঅভিযান, পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির উদ্ধারঅভিযানকার্য সম্পাদন করতে পারে এমনকি হঠাৎ বিপদগ্রস্ত মানুষ বা গোষ্ঠীকে খুঁজে বের করে উদ্ধার করতেও পারে।

যেসব রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন EMS-সেবা সাক্ষাৎস্থলেই তার জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে পারে। তাই একে অনেকটা হাসপাতালের ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্ট তথা জরুরি বিভাগের সাথে তুলনা করা চলে। ঐতিহাসিকভাবে, অ্যাম্বুলেন্স কেবল রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজেই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে; উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও তাই। "জরুরি চিকিৎসাসেবা বা EMS-সেবা" মূলত জনপ্রিয়তা পায় যখন থেকে এইসব কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়ের কাজ করার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। কিছু দেশে অনেক ইএমএস-সেবা নেয়ার ক্ষেত্রেই রোগীকে আর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

EMS-সেবাকর্মীদের যোগ্যতার স্তর ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। কোন কোন স্থানে তো কর্মীদের কেবল অ্যাম্বুলেন্স চালানোর যোগ্যতা ছাড়া আর কিছুই(যেমন, মেডিকেল প্রশিক্ষণ) দেখা হয় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমপক্ষে বেসিক লাইফ সাপোর্ট(বিএলএস) দেয়ার সার্টিফিকেট আছে এমন কর্মী থাকে। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে এই ধরনের কর্মীদের ইমারজেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ান্স(EMTs) এবং প্যারামেডিকস(paramedics) বলা হয়। আর এদের মধ্যে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ থাকলে তাদের অ্যাডভান্স লাইফ সাপোর্ট(ALS)-দক্ষতার উল্লেখ থাকে। কিছু কিছু দেশে ফিজিশিয়ান বা নার্সরাও হাসপাতালপূর্ব চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

ইতিহাস সম্পাদনা

পূর্বনির্দেশক ও পথিকৃত সম্পাদনা

গ্রন্থবদ্ধ ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, ঘটনাস্থলে জরুরি সেবা প্রদানের ব্যাপারটি বিভিন্ন রূপে সংঘটিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। বাইবেলের নতুন সমাচারে বর্ণিত আছে পুণ্যবান সামেরী ধর্মের লোকের আহত বিপর্যস্ত পথিককে সাহায্যের গল্প; যেখানে উদ্ধৃত আছে যে, রাস্তায় পড়ে থাকা এক বিবস্ত্র, আহত এবং অর্ধমৃত পথিকের পাশ দিয়ে একজন পাদ্রী, একজন যাজক এবং ইহুদী গেলেও তারা তার সাহায্য করে না। একজন সামেরী ধর্মের লোক তার সাহায্য করে এবং তাৎক্ষণিক সেবা দান করে। লুক (১০:৩২)-এ বর্ণিত আছে, "সে তার কাছে গেল এবং তার ক্ষতে তেল ও ওয়াইন ঢেলে পট্টি লাগাল। তারপর লোকটাকে তার নিজের গাধার ওপর চড়িয়ে দিল, তাকে একটা সরাইখানায় নিয়ে গিয়ে তার সেবাযত্ন করল।" মধ্যযুগে নাইটস হোস্পিটলাররা(রক্ষীদের সেবাকর্মী) যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের সহায়তা প্রদানের জন্য পরিচিত ছিল।

যুদ্ধে বিশেষ বাহন হিসেবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রথম ডিজাইন করেন ডমিনিক জে ল্যারি (১৭৬৬-১৮৪২) যিনি নেপোলিয়নের প্রধান সার্জন ছিলেন। ল্যারি যখন ফ্রেঞ্চ এবং প্রুশিয়ানদের যুদ্ধে উপস্থিত হন তখন অত্যন্ত চিন্তিত হন যে, এত আহত সৈন্যকে হাতে গোণা কয়েকট অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় (তাছাড়া নেপোলিয়নের আদেশে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যুদ্ধস্থল থেকে আড়াই মাইল দূরত্বে রাখা হয়েছিল)। তাই পরে নতুন অ্যাম্বুলেন্স-ব্যবস্থা তিনি তৈরি করেন। নর্মান জাতির মত সামনে পেছনে ঘোড়া বেঁধে মাঝখানে ডুলি বা পালকিজাতীয় কিছু ব্যবহারের বদলে তিনি দুই বা চার চাকার ঘোড়ার টানাগাড়ি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে সবগুলো ঘোড়া সামনেই বাঁধা থাকবে। এগুলো ব্যবহার করা হত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈনিকদেরকে সরাতে। ল্যারির উড়ন্ত অ্যাম্বুলেন্সের প্রোজেক্টকে ১৭৯৪ সনে কমিটি অব পাবলিক সেইফটি নামক সংস্থা প্রথম স্বীকৃতি দেয়। এরপর ল্যারি ১৭৯৬ এর ইতালীয় ক্যাম্পেইনকালীন নেপোলিয়নের সেবায় নিযুক্ত হন যেখানে তার অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রথম ব্যবহৃত হয় ইউডিন, প্যাডুয়া, মিলান প্রভৃতি অঞ্চলে এবং তিনি পরিস্থিতি সাপেক্ষে তার অ্যাম্বুলেন্সুগুলো খাপ খাইয়েও নেন যেমন, মিশরে তিনি উটে টানা একটি পালকি বা ডুলিকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "What is EMS?"। NHTSA। 
  2. "Long Hill Township First Aid Squad"। ২০০৫-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১৮ 
  3. "FAST Squad | Town of Lyme NH"www.lymenh.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-০১ 
  4. "Hennepin County Emergency Squad"। ১৫ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০০৭ 
  5. "Nottingham Ambulance Squad"। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০০৭ 
  6. "Sardinia Life Squad"। ২২ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১৮ 
  7. "Valhalla Volunteer Ambulance Corps"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১৮