জগদীশ গুপ্ত

ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার

জগদীশ গুপ্ত বা জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত (জন্ম: ৫ জুলাই, ১৮৮৬ (২২শে আষাঢ়, ১২৯২ বঙ্গাব্দ) - মৃত্যু: ১৫ এপ্রিল, ১৯৫৭)[] ভারত উপমহাদেশের অন্যতম বাঙালি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার ছিলেন।[] তিনি মূলত কথাসাহিত্যিক হলেও সাহিত্যিক জীবনের শুরুতে কবিতা লিখেছেন ও একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন।

জগদীশ গুপ্ত
জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
জন্মজগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
৫ জুলাই, ১৮৮৬
আমলাপাড়া, কুষ্টিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৫ এপ্রিল, ১৯৫৭
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনউপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঅসাধু সিদ্ধার্থ, বিনোদিনী, উদয়লেখা, মেঘাবৃত অশনি, দুলালের দোলা, নিষেধের পটভূমিকায়, লঘুগুরু
দাম্পত্যসঙ্গীচারুবালা সেনগুপ্ত

শৈশবকাল

সম্পাদনা

তার পৈতৃকনিবাস ফরিদপুর জেলার খোর্দ মেঘচারমি গ্রামে। পিতা কৈলাশচন্দ্র গুপ্ত কুষ্টিয়া আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। পিতার কর্মসূত্রে জগদীশ গুপ্ত কুষ্টিয়া জেলার আমলাপাড়ায় ১২৯২ বঙ্গাব্দের ২২ আষাঢ় ( ৫ জুলাই, ১৮৮৬) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে কলকাতা সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। অতঃপর কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৭ সালে এফ. এ পরীক্ষা দিয়ে কলেজের পাঠ ত্যাগ করেন।[] পরবর্তীতে কলকাতা কমার্শিয়াল ইন্সটিটিউট থেকে শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটিং শিক্ষা গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

বীরভূম জেলার সিউড়ি জজকোর্টে টাইপিস্টের চাকরি লাভ করেন ১৯০৮ সালে। সেখানে ৪/৫ বছর চাকরি করার পর উড়িষ্যার সম্বলপুরে একজিকিউটিভ এঞ্জিনিয়ারের অফিসে পুনরায় টাইপিস্টের চাকরি গ্রহণ করেন ১৯১৩ সালে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। অতঃপর কলকাতার "জাগো'স ইঙ্ক" নামের ফাউন্টেনপেনের কালি তৈরির একটি কারখানা খোলেন। এ ব্যবসায় উন্নতি করতে না পেরে ১৯২৭ সালে বোলপুরের চৌকি আদালতে আবারো টাইপিস্টের চাকরিতে যোগদান করেন। সেখানে একটানা ১৭ বছর চাকরি করার পর ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুষ্টিয়ায় বাস করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর কুষ্টিয়া ত্যাগ করে কলকাতায় গমন করেন ও সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।[]

রচনাকর্ম

সম্পাদনা

কবি হিসেবে তিনি প্রথমে আত্মপ্রকাশ করলেও ছোট গল্পকার-রূপে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেন। 'বিজলী', 'কালিকলম', 'কল্লোল' প্রভৃতি সেকালের নতুন ধরনের সকল পত্রিকাতেই গল্প প্রকাশ করেছেন। গল্প ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রকাশভঙ্গির স্বাতন্ত্র্যের জন্য সাহিত্যিক মহলে বিশিষ্ট স্থান পেয়েছিলেন।[]

ছোটগল্পের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন জগদীশ গুপ্ত। গভীর জীবনবোধ, সুঠাম কাহিনিবিন্যাস ও চরিত্রচিত্রণের নৈপুণ্যে তার ছোটগল্প সমৃদ্ধ হয়েছে। মনোবৈকল্য ও মনোবিশ্লেষণ এবং দুঃখময়তার নিপুণ বর্ণনায় তার শিল্পকর্ম এক অসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সামাজিক অন্যায়-অবিচারের চেয়ে অদৃষ্টলিপিই দুঃখময়তার কারণ বলে তার গল্পে বিশ্লেষিত।

  • গল্পগ্রন্থ: বিনোদিনী (১৩৩৪); রূপের বাহিরে (১৩৩৬); শ্রীমতি (১৩৩৭); উদয়লেখা (১৩৩৯); শশাঙ্ক কবিরাজের স্ত্রী (১৩৪১); মেঘাবৃত অশনি (১৩৫৪); স্বনির্বাচিত গল্প (১৩৫৭)
  • উপন্যাস: অসাধু সিদ্ধার্থ (১৩৩৬); লঘুগুরু; দুলালের দোলা (১৩৩৮); নিষেধের পটভূমিকায় (১৩৫৯); কলঙ্কিত তীর্থ (১৩৬৭); রোমন্থন
  • কবিতা-সঙ্কলন: অক্ষরা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Akademi Vidyarthi Bangla Abhidhan [Akademi Student's Bengali Dictionary] (Bengali ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Kolkata: Paschimbanga Bangla Akademi। ২০০০ [1999]। পৃষ্ঠা 857। 
  2. Das, Sisir Kumar, সম্পাদক (২০০৩)। Samsad Bangla Sahityasangi [The Samsad Companion to Bengali Literature] (Bengali ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Kolkata: Sahitya Samsad। পৃষ্ঠা 81। আইএসবিএন 81-7955-007-9 
  3. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, ২য় সংস্করণ, ২০০৩, ঢাকা, পৃ. ১৬৩
  4. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদক: অঞ্জলি বসু, ৪র্থ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ২০০২, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ১৬৫