চূড়া (বা চূরা) হল বিশেষ ধরনের একগোছা চুড়ি, যেগুলি ঐতিহ্যগতভাবে, বিশেষ করে পাঞ্জাবি বিয়েতে, কনে তার বিয়ের দিন এবং পরে বেশ কিছু সময়ের জন্য হাতে পরে।

বিবাহের সময় চুড়া (চূরা) পরিহিত এশা দেওল

উপকরণ এবং চেহারা সম্পাদনা

চূড়া সাধারণত লাল এবং সাদা রংয়ের হয়; কখনও কখনও লাল চুড়ির বদলে অন্য রংয়ের চুড়ি ব্যবহার হয়, কিন্তু এটি সাধারণত শুধুমাত্র দুটি রংয়ের হয়। এগুলি ঐতিহ্যগতভাবে হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি হয়,[১] তাতে রত্নখচিত কাজ থাকে, যদিও এখন এগুলি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়।[২] প্রথাগতভাবে আগে ২১টি চুড়ি পরা হত,[৩] যদিও বর্তমানে কনেরা প্রায়ই ৭, ৯ বা ১১টি চুড়ি পরে।[৪] অগ্রবাহুর উপরের অংশ থেকে কব্জির প্রান্তের পরিধি অনুসারে চুড়িগুলির আকার বড় থেকে ছোট হয়, যাতে সেগুলি হাতে সুন্দরভাবে মানানসই হয়।

প্রথাগত ব্যবহার সম্পাদনা

চূড়া পরা মূলত একটি পাঞ্জাবি ঐতিহ্য, যেটি পাঞ্জাবি হিন্দু, শিখ এবং পাঞ্জাবি জৈন বা ভাবরা সম্প্রদায়ের মানুষ মেনে চলেন। সিঁদুর এবং মঙ্গলসূত্র — হল বিবাহিত মহিলাদের ব্যবহৃত অন্যান্য অলঙ্করণ। প্রথাটি গুজরাত, রাজস্থান[৫]এবং উত্তরপ্রদেশেও পালন করা হয়।[৬][৩] চূড়া অনুষ্ঠানটি (দহি-চূড়া)[৬] বিয়ের দিন সকালে বা তার আগের দিন অনুষ্ঠিত হয়।[১] কনের মামা ও মামী তাকে চূড়ার একটি গোছা দেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, নববধূ পুরো একটি বছর চূড়া পরে থাকে,[৭] যদিও একজন নববধূ তার প্রথম বার্ষিকীর আগে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়লে, চূড়া খুলে ফেলা হয়। যখন চূড়ার রঙ বিবর্ণ হতে শুরু করে, তখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এগুলিকে আবার রঙ করায়, যাতে সবাই জানতে পারে যে তার বিয়ে হয়েছে এক বছরেরও কম সময় আগে।[৮] প্রথম বার্ষিকীর পরে কোন একটি শুভ পাঞ্জাবি ছুটির দিনে, সাধারণত সংক্রান্তিতে, বধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একটি ছোট অন্তরঙ্গ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে চূড়া খুলে নিয়ে দুই হাতে কাঁচের চুড়ি পরানো হয়। এটি সাধারণত মিঠাই (ভারতীয় মিষ্টি) খেয়ে উদযাপিত হয় এবং শগুন (শুভ মুহূর্ত) হিসাবে অর্থ উপহার দেওয়া হয়। এরপর চূড়া একটি নদীতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রার্থনা করে এটি জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বধূ যতদিন খুশি ততদিন যে কোনও রঙের অন্য চূড়া পরতে পারে।

এখন নববধূ এক মাস এবং আর এক মাসের এক চতুর্থাংশ (৪০ দিন) চূড়া পরলেই চলে। যেহেতু চূড়া ভঙ্গুর উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়, পাঞ্জাবি রীতি আছে যে বধূ তার বৈবাহিক বাড়িতে ৪০ দিন ধরে চূড়া অক্ষত রাখার জন্য ভারী গৃহস্থালি কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে, এটি এক ধরনের মধুচন্দ্রিমা বলা যায়। তারপরে, প্রথাগত ভাবে, বধূ তার শাশুড়ির কাছ থেকে গৃহকর্মের সিংহভাগ দায়িত্বই নিয়ে নেয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Veena Talwar Oldenburg (২০০২)। Dowry Murder: The Imperial Origins of a Cultural Crime। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 91। আইএসবিএন 978-0-19-515072-8 
  2. Amiteshwar Ratra; Praveen Kaur; Sudha Chhikara (১ জানুয়ারি ২০০৬)। Marriage And Family : In Diverse And Changing Scenario। Deep & Deep Publications। পৃষ্ঠা 500–। আইএসবিএন 978-81-7629-758-5 
  3. Mathew Mathews (২০১৭)। Singapore Ethnic Mosaic, The: Many Cultures, One People। World Scientific Publishing Company। পৃষ্ঠা 317। আইএসবিএন 978-981-323-475-8 
  4. Mina Singh (২০০৫)। Ceremony of the Sikh wedding। Rupa & Co.। পৃষ্ঠা 38। 
  5. Pravina Shukla (২০১৫)। The Grace of Four Moons: Dress, Adornment, and the Art of the Body in Modern India। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 431। আইএসবিএন 978-0-253-02121-2 
  6. Kumar Suresh Singh; Anthropological Survey of India (২০০৫)। People of India। Anthropological Survey of India। পৃষ্ঠা 1127। আইএসবিএন 978-81-7304-114-3 
  7. Pravina Shukla (২০১৫)। The Grace of Four Moons: Dress, Adornment, and the Art of the Body in Modern India। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 257। আইএসবিএন 978-0-253-02121-2 
  8. Prakash Tandon (১৯৬৮)। Punjabi Century, 1857-1947 । University of California Press। পৃষ্ঠা 132আইএসবিএন 978-0-520-01253-0 
  9. Surinder Singh bakhshi (২০০৯)। Sikhs in the Diaspora। Dr Surinder Bakhshi। পৃষ্ঠা 233। আইএসবিএন 978-0-9560728-0-1