চুনাঙ্গত কুঞ্জিকাভাম্মা

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

চুনাঙ্গত কুঞ্জিকাভাম্মা (১৮৯৪ – ১৯৭৪) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৩৮ সালে, তিনি কেরল প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রথম মহিলা সভাপতি (সর্বাধিকারী) নির্বাচিত হন। এবং ই. এম. এস. নাম্বুদিরিপাদ (যিনি পরে কেরল রাজ্যের প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী হন) সচিব ছিলেন।[১]

চুনাঙ্গত কুঞ্জিকাভাম্মা
জন্ম১৮৯৪
মৃত্যু১৯৭৪(1974-00-00) (বয়স ৭৯–৮০)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশারাজনীতিবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীমাথিলাকাঠ ভেল্লিথোদিয়িল মাধব মেনন

উনিশ-ত্রিশের দশকের শেষের দিকে তিনি কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সামনের সারির আঞ্চলিক নেতা হিসাবে এক চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে লড়াই করেছিলেন।[২][৩]

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

চুনাঙ্গত কুঞ্জিকাভাম্মা পালঘাট জেলার ওট্টপালমের চুনাঙ্গদে একটি বিশিষ্ট নায়ার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৪]

শিক্ষা এবং কর্মজীবন সম্পাদনা

তিনি চুনাঙ্গদ ইউপি স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণী পাস করেন। ১৯১১ সালে, তিনি মাথিলাকাঠ ভেল্লিথোদিয়িল মাধব মেননকে বিয়ে করেন, যিনি একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ছিলেন এবং পরে মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী হয়েছিলেন। তাঁদের একটি কন্যা এবং দুই পুত্র ছিল। তিনি পড়তে ভালোবাসতেন এবং জাতীয় আন্দোলনের মহান নেতাদের লেখার মাধ্যমে বিদেশীর কাছে ভারতের পরাধীনতা সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পেরেছিলেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিমজ্জিত হওয়ার জন্য তিনি নিজের পরিবারের সমস্ত বৈষয়িক আরাম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

১৯২১ সালে মালাবার অঞ্চলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম রাজনৈতিক সভা ওট্টপালমে অনুষ্ঠিত হলে, তিনি কংগ্রেসের মহিলা শাখাকে একত্রিত করে তার সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্যও সভায় উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি কংগ্রেসের একজন সর্বক্ষণের কর্মী হয়েছিলেন এবং কংগ্রেসের আদর্শে মানুষকে জাগ্রত করার জন্য বহু সভার আয়োজন করেছিলেন। তিনি রাজ্য সম্মেলনের পাশাপাশি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং তার অঞ্চলের মহিলাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের জন্য ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেন।[৫]

তিনি ১৯৩০ এবং ১৯৩২ সালে কারাবরণ করেন।[১] ১৯৩২ সালে, তিনি বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাকে একটি বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৬] তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিন বছরের জন্য কণ্ণুর জেলে রাখা হয়। মুক্তির পর তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং আবার গ্রেফতার হন এবং পরের দুই বছর শ্রীমাথি কুট্টিমালু আম্মা, সামুভাল অ্যারন এবং আশের মত আন্দোলনের অন্যান্য মহান নারী নেত্রীদের সাথে ভেলোর জেলে কাটান।[৫]

১৯৪০ সালে, তাঁর স্বামী শ্রী মাধব মেনন মারা যান। এই ঘটনা কুঞ্জিকাভাম্মাকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে দেয় এবং তিনি ধীরে ধীরে কংগ্রেসে তাঁর তখনও পর্যন্ত অত্যন্ত সক্রিয় কর্মজীবন থেকে সরে আসতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি ১৯৪৭ সালের আগস্টে স্বাধীনতা পর্যন্ত স্বল্পভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি হরিজনদের কল্যাণে এবং খাদির প্রসারে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেন। কুঞ্জিকাভাম্মা তাঁর নিজ গ্রাম চুনাঙ্গদে হাই স্কুল এবং কস্তুরবা মেমোরিয়াল কেন্দ্র নির্মাণে সাহায্য করেছিলেন। তিনি নিজের ৮ একর জমি আচার্য বিনোবা ভাবের নেতৃত্বে ভুদান আন্দোলনে দান করেছিলেন।[৫]

স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে তাম্রপত্র পুরস্কারে ভূষিত করেছিল। জাতীয় আন্দোলনে তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ বয়নাড় জেলায় কেরালা সরকার তাঁকে একটি জমি দিতে চাইলে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি জীবনের শেষ বছরগুলো কাটিয়েছিলেন নিজের মেয়ের কাছে। ১৯৭৪ সালের ২১শে আগস্ট ৮০ বছর বয়সে তিনি মারা যান।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Chunangat Kunjikavamma"www.keralaculture.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২১ 
  2. "ಕಾಂಗ್ರೆಸ್‌ ನಾಯಕಿಯಾಗಿ ಬ್ರಿಟಿಷರಿಗೆ ಸೆಡ್ಡು ಹೊಡೆದ ಚುನಾಂಘಾಟ್ ಕುಂಞಕಾವಮ್ಮ"। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  3. "List of top 2o women freedom fighters of India"। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  4. sunita.iyer। "India@75: Chunangat Kunjikkavamma, the only woman president of Kerala Pradesh Congress Committee"Asianet News Network Pvt Ltd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২১ 
  5. "India@75: Chunangat Kunjikkavamma, the only woman president of Kerala Pradesh Congress Committee"। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  6. "Chunangat Kunjikavamma"। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩