চারুচন্দ্র রায় (১৮৭০ – ১৯৪৫) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।[১]

বাঙালী সশস্ত্র বিপ্লববাদী

চারুচন্দ্র রায়
জন্ম১৮৭০ সালের ২৫ আগস্ট
মৃত্যু১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণবাঙালি বিপ্লবী
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • দয়াল চন্দ্র রায় (পিতা)

জন্ম ও শিক্ষা সম্পাদনা

চারু চন্দ্র রায় ১৮৭০ সালের ২৫ আগস্ট চন্দননগরের এক বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চারু চন্দ্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গরবতী উচ্চ বিদ্যালয়ে, এরপর ১৮৮৮ সালে হুগলি কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তিনি প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ১৮৯০ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি লখনউয়ের ক্যানিং কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ১৮৯২ সালে সংস্কৃতে প্রথম বিভাগ সম্মান অর্জন করেন। পরবর্তীকালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করার সময় দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

সশস্ত্র বিপ্লবে সম্পাদনা

চারুচন্দ্র ছিলেন সংস্কৃত, ফরাসি, দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইন শাস্ত্রে পারদর্শী। সাংগঠনিক কাজে তাঁর ছাপ লখনউতে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি ইয়ং বেঙ্গল মেনস অ্যাসোসিয়েশন এবং 'বিদ্যাসাগর পুস্তকালয়' নামে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চন্দননগরে ফিরে এসে তিনি ডুপ্লেক্স কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপকের ভূমিকা গ্রহণ করেন।

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার লক্ষ্যে তরুণদের মধ্যে অমর দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করার মিশনে নেমেছিলেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা তাদের দেশকে ভালবাসতে শিখেছে এবং এর স্বাধীনতার জন্য স্বেচ্ছায় তাদের জীবন উৎসর্গ করতে শিখেছে। তাঁর শিষ্য উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট বিপ্লবী হয়ে ওঠেন, যিনি আলিপুর বোমা মামলায় অপরিসীম কষ্ট ও অপমান সহ্য করেছিলেন।[২]

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করলে চারুচন্দ্র চন্দননগরের তরুণ সম্প্রদায়কে ব্রিটিশদের বিরোধিতা করার জন্য একত্রিত করেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনকারী কয়েকজন বিপ্লবী চন্দননগরে আশ্রয় নিলে বিপ্লবী জীবন ঘোষাল পুলিশের গুলিতে নিহত হন এবং কুখ্যাত ইংরেজ পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের আক্রমণের শিকার হন। জীবন ঘোষালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মিছিলে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন চন্দননগরের মেয়র চারু চন্দ্র। পুলিশের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি তার কর্তৃত্ব দৃঢ় করেন এবং বোরাইচণ্ডীতলা শ্মশানের দিকে এগিয়ে যান।

মৃত্যু সম্পাদনা

তাঁর সম্মানে চন্দননগর পৌরসভা তাঁর নামে একটি রাস্তা এবং চন্দননগর কলেজে একটি সভাঘর উৎসর্গ করে। ১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি চারু চন্দ্র রায়ের মৃত্যু হয়।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. নারায়ন সান্যাল (১৯৭৯)। আমি রাসবিহারীকে দেখেছি। কলকাতা: করুনা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৭০। 
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৩৯। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  3. https://amritmahotsav.nic.in/district-reopsitory-detail.htm?25287