চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
অবস্থান
মানচিত্র

বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৪°৩৪′১৭″ উত্তর ৯০°৪১′৩১″ পূর্ব / ২৪.৫৭১৩° উত্তর ৯০.৬৯২০° পূর্ব / 24.5713; 90.6920
তথ্য
প্রাক্তন নামব্রজনাথ শর্ম্মা চক্রবর্তী মধ্য ইংরেজি স্কুল (১৯০৬–১৯১৪)
চন্ডীপাশা মাধ্যমিক স্কুল (১৯১৫–১৯৪২)
চন্ডীপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২–১৯৮৩)
চন্ডীপাশা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৩–১৯৯১)
চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯ মার্চ ১৯৯১–বর্তমান)
ধরনসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠাকালব্রজনাথ শর্ম্মা চক্রবর্তী মধ্য ইংরেজি স্কুল (১৯০৬–১৯১৪)
চন্ডীপাশা মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে (১ জানুয়ারি ১৯১৫ (1915-01-01))
প্রতিষ্ঠাতাব্রজনাথ শর্ম্মা চক্রবর্তী[]
লিঙ্গবালক
ভাষাবাংলা
ক্যাম্পাসের ধরনপৌরসভা
অন্তর্ভুক্তিময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড

ইতিহাস

সম্পাদনা

নান্দাইলে শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৯০৬ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় ব্রজনাথ শর্ম্মা মধ্য ইংরেজি স্কুল (এমই স্কুল বা মিডল ইংলিশ স্কুল) নামে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে।[] সে বছর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হলেও বিভিন্ন কারণে ১৯০৯ সালে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করতে হয়।[] বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন ব্রজনাথ শর্ম্মার দূরসম্পর্কের আত্মীয় মথুরা নাথ শর্ম্মা চক্রবর্তী। ১৯১০ সাল থেকে বিদ্যালয়টি জেলা পরিষদের সাহায্য পেতে থাকে। ১৯১৪ সালের মাঝামাঝিতে বিদ্যালয়টিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা শুরু হয়।[] ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের সাময়িক অনুমতি লাভ করার মাধ্যমে গ্রামের নামে চন্ডীপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[] এই সময়ে মথুরা নাথ শর্ম্মা ও পরবর্তীতে আরসি চক্রবর্তী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উমেশ চন্দ্র অধিকারী (বাবু ইউসি অধিকারী) প্রথম স্থায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯১৯ সালের ১৬ মার্চ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চন্ডীপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে প্রথম স্থায়ী স্বীকৃতি ও আর্থিক মঞ্জুরি দান করে এবং ১৯২০ সালেই প্রথম ২০ জন ছাত্র মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।[] বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে মাল্টিলেটারাল বা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয়টিকে পাইলট প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণ করা হয়।[]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

সম্পাদনা

১৯৭০ সালের মে মাসে নির্বাচন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন চন্ডীপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বক্তৃতা দেন।[] ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত সাবেক ও তৎকালীন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।[] পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খালেক নওয়াজ খান, মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে এই বিদ্যালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।[] এছাড়া আবদুল জব্বার বীরপ্রতীক, গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া বীরপ্রতীক, মোহাম্মদ আবদুল মতিন বীরপ্রতীক প্রমুখও এই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।[] মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে নান্দাইল থানা অবরোধের পরিকল্পনা করা হয়। চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বে নরসুন্দা নদী ও পশ্চিমে নান্দাইল থানা অবস্থিত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা বিদ্যালয়ে অবস্থান করে এবং কৌশলে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। অভিযানের সফলতার ফলে ১১ ডিসেম্বর রাত দুইটায় নান্দাইল মুক্ত হয়।[]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাবুল, আজিজুর রহমান ভূঁঞা। "ব্রজনাথ শর্ম্মা চক্রবর্তী মধ্য ইংরেজি স্কুল থেকে আজকের চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন ২০১৫: চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩৯–৪১। 
  2. "রাষ্ট্রপতির বাণী"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন ২০১৫, চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩। 
  3. অখিল, অরবিন্দ পাল। "মহান মুক্তিযুদ্ধে চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবদান"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন ২০১৫, চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৫৭। 
  4. মাজহার, সোহেল। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংস্করণ)। গতিধারা। পৃষ্ঠা ১৮২–১৮৩। আইএসবিএন 978-984-8946-35-0