ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দির

ভারতের একটি হিন্দু মন্দির

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা ঘুশ্মেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল হিন্দু দেবতা শিবের পবিত্রতম বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম। এটি ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গাবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং দৌলতাবাদ (দেবগিরি) থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ইলোরা গুহার কাছে অবস্থিত। শিবপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতার ৩২ ও ৩৩তম অধ্যায়ে এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাআওরঙ্গাবাদ
অবস্থান
অবস্থানদৌলতাবাদ
রাজ্যমহারাষ্ট্র
দেশভারত

মন্দির

সম্পাদনা

মন্দিরের গাত্র-অলংকরণে প্রাগৈতিহাসিক মন্দির প্রথা ও প্রাগৈতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়। মন্দিরে রক্ষিত শিলালিপিটি এখানকার পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ। মন্দিরটি লাল পাথরের তৈরি। এতে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়। বর্তমান মন্দিরটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত। এর গাতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদিত আছে।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

কথিত আছে, বেরুলের শিবভক্ত উপজাতি-প্রধান ঘৃষ্ণেশ্বরের কৃপায় এখানে গুপ্তধনখুঁজে পেয়েছিলেন। এই টাকায় তিনি মন্দিরটির সংস্কার করান ও শিখরসিঙ্গনপুরে একটি হ্রদ প্রতিষ্ঠা করেন। গৌতমীবাল (বায়জাবাই) ও অহল্যাবাই হোলকারও ঘৃষ্ণেশ্বরের মন্দির সংস্কার করিয়েছিলেন।[] মন্দিরের উপরে লাল পাথরে দশাবতারের মূর্তি খোদিত হয়েছে। দরবার কক্ষটিতে ২৪টি স্তম্ভ আছে। এই স্তম্ভগুলিতেও সুন্দর চিত্র খোদাই করা আছে। দরবার হলে নন্দিকেশ্বরের মূর্তিও আছে। গর্ভগৃহের আয়তন ১৭ ফুট X ১৭ ফুট। লিঙ্গমূর্তিটি পূর্বমুখী। মন্দিরের আধ-কিলোমিটারের মধ্যেই ইলোরা গুহা। অহল্যাবাই হোলকারের সময় মন্দিরের সুন্দর প্রাচীরটিও নির্মিত হয়েছিল।

পৌরাণিক উপাখ্যান

সম্পাদনা

শিবপুরাণ অনুসারে, দক্ষিণ ভারতে দেবগিরি পর্বতে ব্রহ্মবেত্তা সুধর্ম নামে এক ব্রাহ্মণ তার পত্নী সুদেহাকে নিয়ে বাস করতেন। ব্রাহ্মণ দম্পতির সন্তান ছিল না বলে সুদেহার মনে দুঃখ ছিল। সন্তানলাভের সবরকম চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। সুদেহা তখন তার বোন ঘুশ্মার সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহের প্রস্তাব দেন। বোনের উপদেশ অনুসারে, ঘুশ্মা ১০১টি শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে পূজা করেন এবং সেগুলিকে নিকটবর্তী হ্রদে বিসর্জন দেন। শিবের আশীর্বাদে ঘুশ্মার একটি সন্তান হয়। এতে ঘুশ্মা অহংকারী হয়ে ওঠেন এবং সুদেহা তার বোনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হন। ঈর্ষার বশে সুদেহা একদিন ঘুশ্মার ছেলেটিকে খুন করে যে হ্রদে ঘুশ্মা শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিতেন, সেখানে দেহটি ফেলে দেন। পরদিন সকালে ঘুশ্মা ও সুধর্ম উঠে নিত্যকর্মে নিযুক্ত হন। সুদেহাও উঠে রোজকার কাজ শুরু করেন। ঘুশ্মার পুত্রবধূ অবশ্য তার স্বামীর বিছানায় রক্তের দাগ দেখতে পান। ভয় পেয়ে তিনি সব কথা তার শাশুড়িকে বলেন। ঘুশ্মা শিবের পূজায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পূজার আসন ছেড়ে ওঠেন না। এমনকি সুধর্মও ওঠেন না। এমনকি রক্তের দাগ দেখেও ঘুশ্মার ভাবান্তর দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘যিনি আমাকে পুত্র দিয়েছেন, তিনিই আমার পুত্রকে রক্ষা করবেন।’ এই বলে তিনি শিবের নাম জপ করতে থাকেন। তারপর শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিতে গিয়ে ঘুশ্মা দেখেন, তার পুত্র আসছে। এতে ঘুশ্মা আনন্দিত বা দুঃখিত কিছুই হন না। শিব তখন আবির্ভূত হয়ে বলেন, ‘তোমার ভক্তিতে আমি তুষ্ট হয়েছি। তোমার বোনই তোমার পুত্রকে হত্যা করেছিল।’ ঘুশ্মা তখন শিবকে অনুরোধ করেন সুদেহাকে ক্ষমা করে দিতে। শিব তাতে সম্মত হন এবং ঘুশ্মাকে আরেকটি বর চাইতে বলেন। ঘুশ্মা বলেন, ‘আপনি যদি অনন্তকাল এখানে জ্যোতির্লিঙ্গরূপে অবস্থান করেন, তাহলে আমি খুশি হব।’ ঘুশ্মার অনুরোধে শিব সেখানে জ্যোতির্লিঙ্গরূপে অবস্থান করেন এবং ঘুশ্মার নামানুসারে এই লিঙ্গের নাম হয় ঘুশ্মেশ্বর বা ঘৃষ্ণেশ্বর। যে হ্রদে ঘুশ্মা শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিতেন সেই হ্রদটির নাম হয় শিবালয়।

চিত্রকক্ষ

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. http://jyotirlingatours.tripod.com/id3.html
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৩ 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

http://www.ghushmeshwar.com