গৌতম বুদ্ধের অলৌকিক ক্ষমতা ও ক্রিয়াকলাপ

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে গৌতম বুদ্ধের অলৌকিক ক্ষমতা ও ক্রিয়াকলাপগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ মতে, কোনও দৈব উপায়ে নয়, বরং ধ্যানের মাধ্যমে লব্ধ অতিলৌকিক ক্ষমতাবলে বুদ্ধ এই কার্যগুলি সম্পাদনা করেন।[১] ইতিহাসের বুদ্ধ যে সকল অতিলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এবং যে সব অলৌকিক কার্য সম্পাদনা করেছিলেন বলে কথিত আছে, সেগুলির অন্যতম হল ছয়টি উচ্চতর জ্ঞান (অভিজ্ঞা): আধিদৈবিক ক্ষমতা (ইদ্ধি-বিধা), অলোকদৃষ্টি (দিব্ব-সোতা), টেলিপ্যাথি (চেতো-পারিয়া), নিজের পূর্বজন্মের স্মৃতিকথন (পুব্বে-নিবাসনুস্‌সতি), অন্যের পূর্বজন্ম ও জন্মান্তর দর্শনের ক্ষমতা (দিব্ব-চক্‌খু) এবং মানসিক উন্মাদনাহীনতা (আসবক্‌খয়)।[২][৩] মহাযান সূত্রগুলিতে উল্লিখিত অলৌকিক ঘটনাগুলি সাধারণত কিছু কিছু মতবাদ ব্যাখ্যায় পালি ত্রিপিটকে উল্লিখিত ঘটনাগুলির তুলনায় অধিকতর প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।[৪]

ধ্যানরত বুদ্ধ, টোকিও জাতীয় সংগ্রহালয়, জাপান

অলৌকিক উপায়ে রোগারোগ্য, টেলিপোর্টেশন, নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করা, জড় পদার্থ নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন অতিলৌকিক ঘটনা নিয়ে গৌতম বুদ্ধের অতিলৌকিক ক্ষমতার কাহিনিগুলি প্রচলিত। ধ্যানমগ্নতার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হয়ে বুদ্ধের অনেক শিষ্য, এমনকি কয়েকজন অ-বৌদ্ধ ঋষি ও যোগীও একই ধরনের অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন বলে কথিত আছে।[১][২] বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে উল্লিখিত হয়েছে যে, বুদ্ধ প্রায়শই এই ক্ষমতাগুলি প্রয়োগ করতেন অথবা এগুলির কথা আলোচনা করতেন। তবে তিনি এই ক্ষমতাগুলির প্রতি আসক্তির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিতেন এবং মানুষকে ধর্মপথে চালিত করার ক্ষেত্রে "শিক্ষাদানের অলৌকিক ক্ষমতা"র উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করতেন।[১][২]

বোধিলাভের পূর্বে সম্পাদনা

অলৌকিক জন্ম সম্পাদনা

 
শৈশবে বুদ্ধ সাত পা অগ্রসর হচ্ছেন, গ্রিকো-বৌদ্ধ শিল্পকলা, গান্ধার

কথিত আছে, জন্মের অব্যবহিত পরেই গৌতম উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং উত্তর দিকে সাত পা অগ্রসর হয়ে বলে উঠেছিলেন:

"আমি জগতের অধিনায়ক,

আমি জগতে প্রবীণতম। এই শেষ জন্ম।

[ভবিষ্যতে আমি] আর দেহধারণ করব না।"[৫]

তাছাড়া বাল্যকালে গৌতম যেখানেই পা রাখতেন, সেখানেই একটি পদ্ম ফুটে উঠত।[৬]

স্থির ছায়া সম্পাদনা

একদিন রাজা শুদ্ধোধন রাজকুমার সিদ্ধার্থকে একটি গ্রামে হলকর্ষণ উৎসবে নিয়ে যান। সেখানে সিদ্ধার্থ একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে সূর্যের গতিপথ পরিবর্তিত হলেও অলৌকিকভাবে গাছের ছায়াটি এমনভাবে স্থির থাকে যাতে তরুণ রাজকুমারের চোখে আলো লেগে তার ঘুমের ব্যাঘাত না হয়।[৭][৮]

শূন্যে ভাসমান বেণী সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Keown, Damien (২০১৩-১২-১৬)। Encyclopedia of Buddhism। Routledge। পৃষ্ঠা 96। আইএসবিএন 9781136985881 
  2. Nyanaponika; Hecker, Hellmuth (২০১২-০১-৩০)। Great Disciples of the Buddha: Their Lives, Their Works, Their Legacy। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 89। আইএসবিএন 9780861718641 
  3. "Maha-sihanada Sutta: The Great Discourse on the Lion's Roar"www.accesstoinsight.org। ২০১৯-০৬-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২২ 
  4. Fiordalis, David (২০০৮)। "Miracles and Superhuman Powers in South Asian Buddhist Literature"."। University of Michigan: 162–163। সাইট সিয়ারX 10.1.1.604.4958  
  5. Strong, John, 1948- (২০০৯)। The Buddha : a beginner's guide। Oxford: Oneworld Publications। পৃষ্ঠা 54। আইএসবিএন 9781441634320ওসিএলসি 527853452 
  6. Huntington, John C.; Bangdel, Dina (২০০৩)। The Circle of Bliss: Buddhist Meditational Art (ইংরেজি ভাষায়)। Serindia Publications, Inc.। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 9781932476019 
  7. Swearer, Donald K. (২০০৪-০২-১৫)। Becoming the Buddha: The Ritual of Image Consecration in Thailand (ইংরেজি ভাষায়)। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 139। আইএসবিএন 9780691114354 
  8. Kawasaki, Ken and Visakha (২০১৮-০২-১৫)। Jataka Tales of the Buddha: An Anthology Volume III (ইংরেজি ভাষায়)। Pariyatti Publishing। পৃষ্ঠা 422। আইএসবিএন 9781681721118 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা