গোসাবা

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার গোসাবা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম

গোসবা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ক্যানিং মহকুমার গোসবা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি শহর। সুন্দরবনের গভীর বনভূমি শুরু হওয়ার আগে এটি শেষ বাসিন্দা এলাকা। এখানে একটি পুলিশ স্টেশন, একটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং একটি বিধানসভা এলাকা আছে। এলাকাটি প্রকৃতি এবং শিকারিদের বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের প্রতীক।

গোসাবা
শহর
গোসবা থানা
গোসবা থানা
গোসাবা পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
গোসাবা
গোসাবা
গোসাবা ভারত-এ অবস্থিত
গোসাবা
গোসাবা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°০৯′৫৫″ উত্তর ৮৮°৪৮′২৮″ পূর্ব / ২২.১৬৫২° উত্তর ৮৮.৮০৭৯° পূর্ব / 22.1652; 88.8079
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৫,৩৬৯
ভাষা
 • সরকারিবাংলা
সময় অঞ্চলআইটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৭৪৩৩৭০
টেলিফোন কোড+৯১ ৩২১৮
নিকটবর্তী শহরক্যানিং
লোকসভা আসনেজয়নগর
বিধানসভা আসনেগোসাবা
ওয়েবসাইটদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সরকারি ওয়েবসাইট

ইতিহাস সম্পাদনা

 
গোসবায় স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিল্টনের হাউস

স্যার ড্যানিয়েল ম্যাকিনন হ্যামিলটন স্কটল্যান্ডের একজন ব্যবসায়ী, যিনি ম্যাককিনন অ্যান্ড ম্যাককেঞ্জি সংস্থার সাথে কাজ করার জন্য কলকাতায় ভ্রমণ করেছিলেন। কোম্পানিটির সাথে তার পরিবারের সংযোগ ছিল। কোম্পানিটি পি অ্যান্ড ও শিপিং লাইনের জন্য টিকিট বিক্রি করতো, তখন এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম। হ্যামিল্টন কোম্পানির প্রধান হয়ে ওঠেন এবং ব্রিটিশ ভারতে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানির আরেকজন তার ভাগের টাকা নিয়ে চলে যায়, কিন্তু হ্যামিলটন দক্ষিণবঙ্গের বদ্বীপ গুলিতে তার চোখ রেখেছিলেন কোম্পানির ব্যবসার জন্য। ১৯০৩ সালে তিনি সরকার থেকে জোয়ারের ৪০ বর্গ কিলোমিটার (১০,০০০ একর) জমি কিনেছিলেন - এতে গোসবা, রাঙ্গেবলিয়া, এবং সাতজেলিয়া প্রভৃতি দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই স্থানগুলি উন্নয়নে তাঁর প্রচেষ্টায় অন্যান্য দ্বীপগুলির অধিবাসীদের এই দ্বীপগুলিতে আনা হয়েছিল। তারা এমন মানুষ ছিল যারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সক্ষম ছিল এবং তারা বাঘ, কুমির, হাঙ্গর এবং গিরগিটি যুক্ত পরিবেশে বসবাস করতেন। এই সব বন্য প্রাণীরা এত মানুষকে হত্যা করেছিল, যে হ্যামিল্টন তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল যারা এই সব বন্য প্রাণীদের হত্যা করেছিল।[১] ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিল্টনের বাড়ি গোসবাতে গিয়েছিলেন।[২][৩]

প্রশাসন সম্পাদনা

গোসবা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অধীনে একটি মধ্যবর্তী পঞ্চায়েত (স্থানীয় স্ব-সরকার)। এর অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হ'ল- আমতলী, বালি ১ এবং ২, বিপ্রদাসপুর, ছোট মোল্লাখালী, গোসাবা, কচুখালী, কুমিরারী, লাহিরীপুর, পাথানখালী, রাধানগর-তরণগর, রাঙ্গবাড়িয়া, সাতজেলিয়া এবং শম্ভুনগর।[৪]

ভূগোল সম্পাদনা

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

২০১১ সালে ভারতের আদমশুমারি অনুসারে গোসাবার মোট জনসংখ্যার ৫,৩৬৯ জন, যাদের মধ্যে ২,৬৮১ (৫০%) জন পুরুষ এবং ২,৬৮৮ জন(৫০%) মহিলা ছিল। ৬ বছরের নিচের জনসংখ্যা ছিল ৫০৩ জন। গোসাবাতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৩,৯৯৪ জন ৬ বছরের বেশি বয়ষ্ক। (৬ বছরের বেশি বয়সের জনসংখ্যার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮২.০৮%)।[৫]

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে গোসাবা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনসংখ্যা ছিল ২,২২,৭৬৪ জন, যার মধ্যে ১,১৩,৮২৭ জন পুরুষ এবং ১,০৮, ৯৩৭ নারী ছিল। সমগ্র জনসংখ্যা গ্রামীণ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[৫]

অর্থনীতি সম্পাদনা

পর্যটন শিল্প সম্পাদনা

শক্তি সম্পাদনা

মধু সংগ্রহ সম্পাদনা

শিক্ষা সম্পাদনা

গোসাবাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -

  • সুন্দরবনের হাজী দেশারত কলেজ (পাঠানখালী)
  • গোসাবা গ্রামীণ পুনর্গঠন (সরকারী পৃষ্ঠপোষক) ইনস্টিটিউশন
  • রাঙগাবেলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  • শম্ভুনগর হাইস্কুল
  • বিপ্রাদাসপুর উচ্চ বিদ্যালয় (মনমথনগর)
  • পাঠানখালী আদর্শ বিদ্যাপীঠ(উঃমাঃ)
  • মঙ্গোল চন্দ্র বিদ্যাপীঠ (ছোটোমোল্লাখালী)

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সম্পাদনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ভূগর্ভস্থ জল আর্সেনিক দূষণ দ্বারা প্রভাবিত হলেও, গোসাবাতে বিশ্লেষণ করা সমস্ত টিউবয়েলে আর্সেনিক নিরাপদ সীমার মধ্যে ছিল (১০ μg / লিটার এর নিচে)। সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে উপকূলীয় অঞ্চল হচ্ছে অধিকাংশ কম দূষিত গভীর জলস্তর থেকে টিউবয়েলগুলি জল উত্তোলন করে।[৬]

বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল গোসবা ব্লকের সাপেকামরে রোগিদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ওঝা এবং গুনিনদের স্থানীয় রোগীদের উপস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কর্মশালার আয়োজন করেছে।[৭]

ফরাসি লেখক ডমিনিক ল্যাপিয়েরের প্রদত্ত ওষুধ, পরিশীলিত পোর্টেবল এক্স-রে এবং ইকো কার্ডিওগ্রাফ মেশিনগুলি চারটি লঞ্চে করে সরবরাহকারী ডাক্তারদের সাথে সুন্দরবনের জলপথ বরাবর দুর্গম এলাকায় পৌচ্ছে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে যখন তিনি এসেছিলেন, তখন সেসবেশালি, বসন্তী, গোসাবা ও কুলতলী এলাকার অধিবাসীরা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ghosh, Amitav, The Hungry Tide, 2004, pp. 49-53, Harper Collins/Indiaoday group, আইএসবিএন ৮১-৭২২৩-৬১৩-১.
  2. Rabindranath Tagore। "Selected Letters of Rabindranath Tagore"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. "Digitising Endangered Village Archives"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪। আইএসএসএন 2349-8846। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. "Details of West Bengal till Village Panchayat Tier"। Ministry of Panchayati Raj, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৪ [অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Census of India 2001"Provisional population totals, West Bengal, Table 4। Census Commission of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ][অকার্যকর সংযোগ]
  6. "Groundwater arsenic contamination status of South 24-Parganas district, one of the nine arsenic affected districts of West Bengal-India"। SOES। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২৬ 
  7. "Awareness and Skill Transfer Programme for the Treatment of Snakebite Victims"। World Wildlife Fund India। ২০০৭-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২৬ 
  8. "Sundarbans gratitude to Lapierre"The Telegraph, 30 November 2004। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২২ 
গ্রন্থ-পঁজী
  • সৌমেন দত্ত, স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন ও গোসবার আখান [স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন এবং গোসবা ইতিহাস] মিত্র ও ঘোষের প্রকাশিত একটি বাংলা বই।
  • সৌমেন দত্ত, গোসাবার ডাক্তারবাবু [গোসবার ডাক্তার] ডিপ পি প্রকাশিত বাংলা ভাষায় একটি বই।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা