গোলাপ মা

হিন্দু সন্ন্যাসিনী

গোলাপ মা ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর অতীন্দ্রি়য়বাদী ও সন্ত শ্রী রামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ গৃহী শিষ্য। এছারাও তিনি ছিলেন রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক সঙ্গিনী তথা রামকৃষ্ণ ধারার "পবিত্র মাতা" শ্রী সারদা দেবীর এক প্রধান সহচর। তার অন্য একজন সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন যোগিন মা। তার আসল নাম অন্নপূর্ণা দেবী বা গোলাপ সুন্দরী দেবী।[১] শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশাবলীতে তাঁকে "শোকাহত ব্রাহ্মণী" হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ আন্দোলনের প্রাথমিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি কলকাতার উদ্বোধন বাটী বা মায়ের বাড়িতে সারদা দেবীর সঙ্গে থাকতেন। রামকৃষ্ণ ধারার ভক্তদের মধ্যে তিনি গোলাপ মা নামে জনপ্রিয় ছিলেন।

গোলাপ মা
গোলাপ সুন্দরী দেবী
গোলাপ মা, রামকৃষ্ণ পরমহংসের একজন সাক্ষাৎশিষ্যা
জন্ম
গোলাপ সুন্দরী দেবী

১৮৪০-এর দশকে
মৃত্যু১৯ ডিসেম্বর ১৯২৪(১৯২৪-১২-১৯)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামঅন্নপূর্ণা দেবী, গোলাপ মা
সন্তানএক ছেলে ও এক মেয়ে

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

গোলাপ মায়ের প্রারম্ভিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে তিনি উত্তর কলকাতার বাগবাজার এলাকায় একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সম্ভবত ১৮৪০-এর দশকে। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার একটি পুত্র ও চন্ডী নামে একটি কন্যা ছিল। কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় ঠাকুর পরিবারের সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সঙ্গে চণ্ডীর বিয়ে হয়। তবে তিনি পরপর তার স্বামী, একমাত্র ছেলে এবং মেয়ে চন্ডিকে হারান। তার এই ক্ষতির কারণে তিনি শোকাতুর হয়ে পড়েন। তখন যোগিন মা তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে নিয়ে আসেন। যোগিন মা ছিলেন তার প্রতিবেশী ও শ্রীরামকৃষ্ণের স্ত্রী সারদা দেবীর শিষ্যা।[২]

শ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাব সম্পাদনা

১৮৮৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তার দেখা হয় শোকাবহ অবস্থায়। তিনি তার দুঃখকে প্রশমিত করেছিলেন এবং তাকে শ্রী সারদা দেবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি শীঘ্রই সারদা দেবীর অন্তরঙ্গ সঙ্গী হয়ে ওঠেন। [৩] শ্রীরামকৃষ্ণ এক সময় ১৮৮৫ সালের ২৮শে জুলাই গোলাপ মায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন, যা শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশাবলীতে লিপিবদ্ধ আছে।[৪] গোলাপ মা ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম প্রধান মহিলা শিষ্য। এজন্য তিনি তার খাবার বহন এবং তার ঘর পরিষ্কার করার পাশাপাশি তাঁকে ব্যক্তিগত সেবা করতে পারতেন।[২] শ্রীরামকৃষ্ণের অসুস্থতার সময়, তিনি প্রথমে শ্যামপুকুরে এবং পরে কাশীপুরে শ্রী সারদা দেবীর সর্বক্ষণের সহচর হিসাবে তাঁকে উৎসর্গীকৃত সেবা প্রদান করেছিলেন।

শেষ জীবন সম্পাদনা

তিনি অন্যদের প্রতি সদয় এবং দানশীল ছিলেন এবং নিজের শেষ জীবনে আধ্যাত্মিক অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন। তার আয়ের অর্ধেক ব্যয় হত দরিদ্র ও অভাবীদের দাতব্য কাজে। [৩] সারদা দেবী বলেছিলেন যে "গোলাপ জপ (ভগবানের নাম বারবার) দ্বারা আধ্যাত্মিকতায় আলোকিত হয়েছে"। তার জীবন ছিল সহজ কিন্তু কঠোর। তিনি শিক্ষিত ছিলেন এবং মহাভারত এবং ভগবদ্গীতার মত শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে পারতেন। [৫]

১৯২০ সালের ২১ শে জুলাই শ্রী সারদা দেবী মারা যাওয়ার পরে, গোলাপ মা, যোগিন মা এবং স্বামী সারদাানন্দের সাথে একত্রে তারা সারদা দেবীর ভক্তদের জন্য প্রধান আধ্যাত্মিক ভিত্তি হয়ে ওঠেন। ১৯২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. People in Gospel of Sri Ramakrishna
  2. "Women disciples"। ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২২  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Women Disciples" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  3. Women Saints of East and West, by swami Ghanananda, published by Vedanta Press, Hollywood, 1955
  4. The Gospel of Sri Ramakrishna, by M, translated by Swami Nikhilananda, published by Ramakrishna-Vivekananda Center, New York, 1942
  5. "Extract from They Lived with God"। ৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪ 

বহিঃউৎস সম্পাদনা

  • সেন্ট লুইসের বেদান্ত সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত স্বামী চেতনানন্দের লেখা, তারা ঈশ্বরের সাথে বাস করেছিল