গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী
গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী অথবা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী (জন্মঃ ৮ অক্টোবর, ১৯৪৬)[১][২] একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, লেখিকা, এবং ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।[৩] তিনি অ্যাডকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।[৪] তিনি বাংলাদেশে আধুনিক বিজ্ঞাপন শিল্প প্রসারে অগ্রণী ভুমিকা পালনকারীদের অন্যতম।[৫]
গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী | |
---|---|
উপদেষ্টা -বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার | |
কাজের মেয়াদ ১৪ জানুয়ারি, ২০০৭ – ৯ জানুয়ারি, ২০০৮ | |
প্রধানমন্ত্রী | ফখরুদ্দীন আহমদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৮ অক্টোবর, ১৯৪৬ ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত |
দাম্পত্য সঙ্গী | নাজিম কামরান চৌধুরী |
পেশা
সম্পাদনাসাংবাদিকতা
সম্পাদনাশিক্ষা জীবন থেকেই তিনি কলকাতা, করাচী ও ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা-লিখির সাথে জড়িত ছিলেন।[৫][৬] কেজি-২ শ্রেনীতে পড়ার সময় পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার শিশুদের জন্য পাতা- ইয়ং অবজারভারে তার প্রথম রচনা প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে কর্ম জীবন শুরু হয় করাচিতে[৭], চার বছর তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার শিশু, নারী ও বিনোদন পাতার সহকারী সম্পাদকের কাজ করেছেন।[৮] দুই বছর করাচীর ‘শি ম্যাগাজিন’এ জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে লিখেছেন তিনি[৬]।
বিজ্ঞাপন ব্যবসা (১৯৭২ - বর্তমান)
সম্পাদনাকরাচীর ‘শি ম্যাগাজিন’এ কাজ করার সময় তিনি বিজ্ঞাপন নিয়ে আগ্রহী হন এবং শৌখিন কপিরাইটারের কাজ করতেন। ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারস্প্যান অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিতে কপি রাইটার হিসেবে যোগদান করেন, পরবর্তীতে তিনি এই সংস্থার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।[৮] ৪ জুলাই, ১৯৭৪-এ[৯] ছয়জন কর্মী এবং ১০ হাজার টাকা মূলধন ও ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ[৬] নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডকম নামে অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি।২০০৫ সালে এশিয়ান অ্যাডভার্টাইজিং তার প্রতিষ্ঠিত অ্যাডকম-কে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে।[১০][১১]
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা (২০০৭ - ২০০৮)
সম্পাদনাতিনি ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।[১২][১৩] ২০০৭ সালে তিনি মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[১০]
অন্যান্য
সম্পাদনাইউনিসেফ তাকে চাকুরীর প্রস্তাব দিলেও, তিনি তা গ্রহণ করেননি[৬]। তার নিজস্ব বিজ্ঞাপন সংস্থার কাজ দেখভালের পাশাপাশি তিনি মহিলা ও শিশু, বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।[৯]
ব্যক্তিগত ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাতিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এ এফ এম সফীউল্লাহ ও মা জাহানারা বেগমের ছয় সন্তান- চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি ঢাকার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট জেভিয়ার্স কনভেন্ট-এর ছাত্রী ছিলেন।[৯] তিনি হলিক্রস কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষ পড়েন[৯] ও সেন্ট্রাল ওমেন'স কলেজ হতে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।[৬][১০] ২৬ এপ্রিল, ১৯৬৯ তারিখে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম কামরান চৌধুরীকে বিয়ে করেন।[১৪] নাজিম ফারহান চৌধুরী ও ফাহিমা চৌধুরী তার সন্তান।[১৫] তিনি ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর চতুর্থ ছেলে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কারক ভাষাসৈনিক আবুল জামাল মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ'র ভাতিজি।[১৬][১৭][১৮] অবসর সময়ে তার বই পড়ার শখ রয়েছে।[১৯]
স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা ক্লাবের প্রথম মহিলা সদস্য হন।[২০] জনতা ক্লাব এবং অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।[১০] তার কাজ ও পেশাগত দক্ষতার জন্য তিনি অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের তালিকা নিম্নরুপ-
বছর | পুরস্কার | মন্তব্য | তথ্যসূত্র |
---|---|---|---|
১৯৯৫ | ম্যাগাজিন অনন্যা পদক | [৫][১০] | |
১৯৯৯ | প্রিয়দর্শিনি পদক | ভারতীয় মহিলা উদ্যোক্তা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। | |
২০০০ | দ্য লিডিং ওমেন এন্টারপ্রেনার্স অব দ্য ওয়ার্ড
(The Leading Women Entrepreneurs of the World) |
ফরচুন ম্যাগাজিন, আইবিএম ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিশ্চিয়ান ডিওর নামক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। | |
২০০২ | 'আউটস্ট্যান্ডিং উইম্যান ইন বিজনেস' পদক | ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল এর সৌজন্যে দেয়া হয়। | |
২০০৫ | আজীবন সম্মাননা পুরস্কার | ঢাকা এড ক্লাব-এর পক্ষ থেকে দেয়া হয়। | [১০] |
২০০৭ | লিডিং এডভারটাইজিং প্র্যাক্টিশনার
(Leading Advertising Practitioner) |
এশিয়ান ফেডারেশন অব এডভারটাইজিংএজেন্সিস এসোশিয়েসন এই পুরস্কার দেয়। | |
২০১৮ | এশিয়া’স টপ আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন মার্কেটিয়ার অ্যাওয়ার্ড | এশিয়ার শীর্ষ বিপণন প্রতিষ্ঠান এশিয়া মার্কেটিং ফাউন্ডেশন (এএমএফ) কর্তৃক তাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।
এশিয়ার অনন্য সাধারণ বিপণনকারীর স্বীকৃতি হিসেবে এই প্রথমবারের মতো যুব, নারী ও ইন্টারনেটভিত্তিক বিপণনকারীদের মাঝে এই সম্মাননার উদ্যোগ গ্রহণ করে এএমএফ। |
[১১][২১] |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Lecture Series- 06,Mrs. Geteeara Safiya Chowdhury, Chairman, Adcomm Ltd"। Campus TV। ২০১৭-০১-৩০। ২০১৯-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরীর জন্মদিন আজ"। Bd Financial News 24.com। ২০১৭-১০-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ "পাঁচজন নতুন উপদেষ্টার শপথগ্রহন"। www.bbc.com। ২০০৮-০১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "Five Bangladeshi female mountaineers complete training"। archive.dhakatribune.com। ১৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ গ "TALE OF ASIA'S TOP OUTSTANDING WOMAN MARKETEER"। Bangladesh Brand Forum (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Geeteara Safiya Choudhury Shares Her Diversified Life Experience at Bangladesh YouthFest 2016"। Bangladesh Brand Forum (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৭-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরীর জন্মদিন আজ"। Bd Financial News 24.com। ২০১৭-১০-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ ক খ "জীবনজুড়ে সাফল্য ·"। The Prominent। ২০১৬-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২০।
- ↑ ক খ গ ঘ "British Bangladesh Chamber of Women Entrepreneurs (BBCWE) | Geeteara Safiya Choudhury" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "সফল উদ্যোক্তা- গীতি আরা সাফিয়া"। ইত্তেফাক। ২০১৫-০৭-১৩। ২০১৯-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ ক খ "এশিয়ার সেরা নারী বিপণনকারীর স্বীকৃতি পেলেন গীতিআরা | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "Time for selling, delivary of AJM structures extended"। archive.thedailystar.net। The Daily Star। ১৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Govt to expedite efforts for empowering women: CA"। thedailystar.net। The Daily Star। ১০ ডিসেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Husband gets bail, Geeteara untraced"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "আমার জীবনে মায়ের প্রভাব বেশি"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "নীরবে না ফেরার দেশে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কারক ও ভাষা সংগ্রামী তকীয়ূল্লাহ"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "না ফেরার দেশে ভাষা সৈনিক তকীয়ূল্লাহ : বিভিন্ন দলের শোক"। Premier News Syndicate Limited (PNS)। ২০১৯-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "ভাষাসংগ্রামী তকীয়ূল্লাহ 'গুরুতর অসুস্থ'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। ২০১৯-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ "এনিড ব্লাইটনের সব বই আমার প্রিয়"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।
- ↑ Amin, Aasha Mehreen। "Aging Remarkably Well"। archive.thedailystar.net। The Daily Star। ২০১৬-০৩-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১৪।
- ↑ "এশিয়ায় শীর্ষ নারী মার্কেটিয়ার হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেলেন গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮।