গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি বিদ্যালয়৷

গরিফা উচ্চ বিদ্যালয় নৈহাটি তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন উচ্চবিদ্যালয়৷ এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের ১০২ বছর পূর্বে৷ এই বিদ্যালয়ে শিশুবিভাগে প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ আছে।[২]

গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়
র্প্রাথনার দৃশ্য
ঠিকানা
মানচিত্র
৪৪৯,ঋষি বঙ্কিন চন্দ্র রোড, গরিফা, নৈহাটি, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ৭৪৩১৬৬

২২°৫৪′০৫″ উত্তর ৮৮°২৫′০৬″ পূর্ব / ২২.৯০১৪° উত্তর ৮৮.৪১৮২° পূর্ব / 22.9014; 88.4182

৭৪৩১৬৫

তথ্য
বিদ্যালয়ের ধরনসরকারি প্রাথমিক,মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৪৫
প্রতিষ্ঠাতাদ্বাকানাথ সেন
অবস্থাসক্রিয়
বিদ্যালয় বোর্ডমাধ্যমিকউচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড পশ্চিমবঙ্গ
বিদ্যালয় জেলাউত্তর ২৪ পরগনা জেলা
অধ্যক্ষসঞ্জয় মন্ডল
কর্মকর্তা১২ জন
অনুষদমানবিক, বিজ্ঞান, বাণিজ্য
শিক্ষকমণ্ডলী৩৬ জন
শ্রেণীশিশু থেকে দ্বাদশ
লিঙ্গসকল
শিক্ষার্থী সংখ্যা৮৫০ জন
ভাষাবাংলা
বিদ্যালয়ের কার্যসময়৫ ঘণ্টা
শ্রেণীকক্ষ৫০ টি
রংহলুদ
ক্রীড়াকুইজ[১], ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি

বিদ্যালয় সূচনার ইতিহাস সম্পাদনা

শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা শুরুর পূর্বেকার যুগে গরিফা এম.ই.স্কুলের সূচনা৷ এর সূচনালগ্নের ইতিহাস অনধিগম্য কারণ বেশির ভাগ প্রাচীন নথিপত্র আজ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে মনে করা হয় যে, ঐ সময় এই অঞ্চলের সেন, রায়দের মত বিদ্যোৎসাহী ও কিছু পরিমানে সংস্কার মুক্ত পরিবারেরযে সকল সন্তান কেউ ঘটনাচক্রে কলকাতায় ইংরাজী শিক্ষা গ্রহণ করেন তারাই পরবর্তীকালে গ্রামে ফিরে এসে জীবনের নানা ক্ষেত্রে ইংরেজি জানার ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং স্থানীয় ছেলেদের ইংরেজি শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্ভবত সেই উদ্যোগেরই বাস্তব ফসল গরিফা এম.ই.স্কুল যা বর্তমানে গরিফা উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত৷[৩]

 
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ

বিদ্যালয় স্থাপনের ইতিহাস সম্পাদনা

১৮৪৫ সালে গরিফা এম.ই.স্কুলটির পত্তন হয়েছিল গৌরীভা (যা বর্তমানে গরিফা) গ্রামের এক বিদ্যোৎসাহী মানুষ দ্বারকানাথ সেনের প্রচেষ্টায়৷ এ ব্যাপারে তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা৷ সেন পাড়ায় তার বাড়ীর একতলার দুটি ঘর ও সংলগ্ন বারান্দায় তিনি কয়েক জন উৎসাহী গ্রামবাসীদের নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন৷ যতদূর জানা গেছে তখন গ্রামের শিক্ষিত যুবকরাই ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন৷ প্রাথমিক স্থরে ইংরেজি পড়ানো হত৷ তার সঙ্গে বাংলা ও অন্যান্য বিষয়৷ উনিশ শতকের ছয় দশক পর্যন্ত বিদ্যালয়টি এভাবেই শিক্ষা বিস্তারের কাজ করে আসছিল যদিও তার তেমন স্থায়িত্ব লাভ হয়নি৷ উনিশ শতকের ছয় দশক পর্যন্ত বিদ্যালয়টি এভাবে নিরবে শিক্ষা বিস্তারের কাজ করে আসছিল যদিও তখনও তার তেমন স্থায়িত্ব লাভ হয়নি৷ নানা বাধা বিঘ্নের মধ্যেও দ্বারকানাথ সেনের বাসভবন থেকে প্রথমে নীলকন্ঠ পুরহিতের বাড়ী এবং পড়ে সেখান থেকে আনন্দ মজুমদারের গৃহে স্থানান্তরিত হয়ে স্কুল চলেছিল৷ শেষে ত্রৈলোক্য স্যাকরা নামে এক ব্যক্তির বাড়ীর দক্ষিণের একটি একতলা ঘরে ও তৎসংলগ্ন চালাঘরে স্কুলটি বেশ কিছু দিন চলে৷ এই ভাবে চলতে চলতে সম্ভবত ১৮৬০-৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যালয়ের নিজেস্ব ভবন নির্মত হয়৷ এ সময় সরকারী অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়৷ গৌরীপুর চটকল (১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত)ও অন্যান্য স্থানীয় ইউরোপীয় মিল মালিকদের আর্থিক সাহায্যে গ্রামের জমিদার নন্দলাল সেনের প্রদত্ত জমির উপর Ferry Fund Road (বর্তমানে R.B.C Road) -এর পশ্চিম ধারেগরিফা এম.ই.স্কুলর নিজেস্ব একতলা পাকা বাড়ী নির্মিত হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমগ্র বঙ্গের অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো গরিফা এম.ই স্কুল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে এবং এটি সাময়িক ভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, কারণ বিদ্যালয় ভবন যুদ্ধের প্রয়োজনে ARP অধিকৃত হয়েছিল৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সেদিন এগিয়ে এসেছিল তৎকালীন গ্রামের কল্যাণ কারিনী সমাজ সেবিকা নগেন্দ্র বালা রায়৷ তার চেষ্টায় ঐ সঙ্কটময় এম.ই স্কুলটি সেন পাড়ায়তার পিতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু স্থানীয় সাবজজ কুমার সেনের পৈতৃক গৃহে স্থানান্তরিত হয়৷ যুদ্ধের সময় এই বাড়ীতেই বিদ্যালয় স্থানান্তরিত হয় এবং যুদ্ধ শেষে মিলিটারি দখল উঠে গেলে বিদ্যালয় অাবার নিজ ভবনে স্থিত হয়৷ এ ভাবেই নদীর স্রোতধারার মতো বয়ে চলতে থাকে বিদ্যালয়ের স্থাপনের ইতিহাস৷[৪]

স্বাধীনতার পরবর্তী সময় সম্পাদনা

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে অনেক অান্দোলন ও রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবষেশে ভারত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে এর সাথে সাথেই গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়ও নতুন ভাবে এক পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করেছিল৷ প্রথমে,১৯৪৮ সালে গরিফা Middle English(ME) দশ ক্লাসের Higher English(HE) স্কুল-এ উন্নীত হওয়ার অনুমোদন পায় এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় -এর অন্তভূক্ত বিদ্যালয় রূপে পরিগণিত হয়৷ এই প্রচেষ্টা সে সময় যে সকল উৎসাহী গ্রামবাসীর দ্বারা সফল হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাশীপতি মজুমদার, কবি বিজয়কৃষ্ঞ ঘোষ, প্রধান শিক্ষক বলাইচাঁদ মল্লিকঅনাদিনাথ মিত্র এদের ঐকান্তিক চেষ্টায় নানা উপায় অর্থ সংগ্রহ করে একতলা বিদ্যাভবনের উপর দ্বিতল নির্মিত হয়৷ ১৯৪৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যালয়টি ছিল Middle English স্কুল, তার পরবর্তী কালে এর নাম পরিবর্তন করা হয় গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই সময় থেকে বিদ্যালয়টি প্রাথমিক স্তর থেকেই ছাত্রদের ইংরাজী শিক্ষা ও সমসাময়িক সিলেবাস অনুযায়ী অন্যান্য পাঠ্য বিষয়ে শিক্ষিত করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য নির্ধারিত বিদ্যালয় গুলিতে ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত করার দায়িত্ব এই বিদ্যালয়টি কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করে এসেছে৷ সে সময় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ৪ টাকা করে জলপানি পেত এবং তখন একই স্কুলে সকালে ক্লাস চলতো মেয়েদের এবং ১১ টার পর থেকে শুরু হত ছেলেদের ক্লাস৷

 
বিদ্যালয়ের মাঠ

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কার্যকাল সম্পাদনা

 
সঞ্জয় মন্ডল(বর্তমান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক)
ক্রম নাম সময় কাল(ইংরেজি সাল)
১তম শ্রী উপেন দাস অজানা-১৯৪২
২য় শ্রী বলাই চাঁদ মল্লিক ১৯৪২-১৯৭৩ ফেব্রুয়ারি
৩য় অজিত কুমার ভট্টাচার্য ১৯৭৩-১৯৭৯
৪থ তীর্থঙ্কর ব্যানার্জী ২০০০-২০০৩
৫ম অনিরুদ্ধ গাঙ্গুলি ২০০৩-২০১৬
বর্তমান সঞ্জয় মন্ডল(ভারপ্রাপ্ত) ২০১৬-বর্তমান

শিক্ষা সুবিধাসমূহ সম্পাদনা

দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসহ একটি গ্রন্থাগার,আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি বিজ্ঞানাগার,কম্পিউটার ল্যাব,জিওগ্রাফি ল্যাব,খেলার মাঠ সহ খেলার সরঞ্জাম রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কার্য্যক্রম যেমন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,রবীন্দ্র জয়ন্তি,মাতৃভাষা দিবস,হিরোসিমা ও নাগাসাকি দিবস,শিক্ষক দিবস,বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "GARIFA HIGH SCHOOL এর কুইজে অংশগ্রহন"www.dailyhunt.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১৭ 
  2. "GARIFA HIGH SCHOOL, NAIHATI MUNICIPALITY"www.schoolsworld.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২২ 
  3. targetstudy.com। "Garifa High School - North 24 Parganas, West Bengal 743166 - contacts, profile and courses"targetstudy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২২ 
  4. "Garifa High School-Youtube.com"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৬ 
  5. "A Complete List of CBSE Affiliated Schools in India & Abroad"iCBSE (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২২