গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল
গবনর্মেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থাপনা একাডেমির পাশে অবস্থিত।[১]
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল | |
---|---|
ঠিকানা | |
১, নায়েম রোড, নিউ মার্কেট | |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪৪′ উত্তর ৯০°২২′ পূর্ব / ২৩.৭৩৩° উত্তর ৯০.৩৬৭° পূর্ব |
তথ্য | |
ধরন | সরকারি |
নীতিবাক্য | আলো আরো আলো (Light, more light) |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৬১ |
প্রতিষ্ঠাতা | খান মোহাম্মদ সালেক |
ইআইআইএন | ১০৭৯৬২ |
প্রধান শিক্ষক | মোঃ আলমগীর হোসেন তালুকদার |
শ্রেণি | প্রথম থেকে দ্বাদশ |
লিঙ্গ | পুরুষ |
ছাত্র ইউনিয়ন/সংঘ | Old Laboratorians Association (OLsA) |
রং | সাদা এবং নেভি ব্লু |
গান | আলো আরো আলো |
ডাকনাম | ল্যাব, গভর্নমেন্ট ল্যাব, জি. ল্যাব, ল্যাবরেটরি স্কুল |
স্বীকৃতি | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা |
বর্ষপুস্তক | অনুশীলন |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
সম্পাদনাগবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।[২] স্কুলটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থীদের প্র্যকটিস টিচিং এর সুযোগ প্রদান করা। 'ল্যাবরেটরি স্কুল' নামকরণ সেই উদ্দেশ্যেরই প্রকাশবহ। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মুহম্মদ ওসমান গণির প্রচেষ্টায় স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর প্রধান শিক্ষকসহ ১৪ জন শিক্ষককে নিয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রদের ক্লাস শুরু হয়।
আদর্শ ও মনোগ্রাম
সম্পাদনা'নুরুন আলা নুর' কুরআনের এই বাণীকে বিদ্যালয়ের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে; এর বাংলা তরজমা 'আলো আরো আলো' স্কুলের মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। চিত্রকর জয়নুল আবেদিন এই মনোগ্রামটির পরিকল্পনা করে দিয়েছিলেন।
শ্রেণি ও শাখা ব্যবস্থা
সম্পাদনাস্কুলটি প্রতিষ্ঠার পরপর এর কার্যক্রম তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু হত। পরবর্তীকালে শিক্ষাবিদ মুহম্মদ ওসমান গণি ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক খান মোহাম্মদ সালেকের যৌথ সিদ্ধান্তে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্নে স্কুলটিতে শুধু একটি শাখাতে অর্থাৎ দিনে একটি বেলাতেই কার্যক্রম পরিচালিত হত। ১৯৯২ সালে স্কুলের সময়কে দিবা ও প্রভাতী বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রভাতী শাখার পাঠদান শুরু হয় সকাল ৭টায় ও দিবা শাখার পাঠদান শুরু হয় দুপুর[৩]১২টায়। প্রতিটি শাখা পাঁচ ঘণ্টা যাবৎ অতিবাহিত হয় যেখানে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ব্যাপ্তির মোট ছয়টি ক্লাস নেয়া হয়ে থাকে এবং মাঝে বিশ মিনিটের একটি বিরতি দেয়া হয়।
প্রতিটি শ্রেণী চারটি শাখা ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’-তে বিভক্ত। একেকটি শাখায় ছাত্রসংখ্যা মোটামুটি ভাবে ৬০ জনের মধ্যে রাখবার চেষ্টা করা হয়। শাখাগুলোর মাঝে ‘ক’ ও ‘খ’ প্রভাতী এবং ‘গ’ ও ‘ঘ’ দিবা শাখার অন্তর্ভুক্ত। নবম ও দশম শ্রেণীতে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রদের জন্য পৃথক শাখা সংযোজন করা হয়ে থাকে যারা প্রভাতী শাখার অন্তর্ভুক্ত। পৃথক শাখা বাদে বাকি চারটি শাখাই বিজ্ঞান।
পোশাক
সম্পাদনাস্কুলটির ছাত্রদের জন্য বিশেষ পোশাক বা ইউনিফর্ম নির্দিষ্ট করা রয়েছে। ছাত্রদের সার্বজনীন পোশাক হিসেবে পকেটে মনোগ্রাম খচিত হাফ বা ফুল হাতা সাদা শার্ট, গাঢ় নীল ফুল প্যান্ট , সাদা মোজা ও সাদা ক্যানভাসের জুতা অর্থাৎ কেড্স নির্ধারণ করে দেয়া আছে। ছাত্ররা শীতের পোশাক হিসেবে স্কুলের নির্দেশনা অনুযায়ী শার্টের উপর গাঢ় নীল হাফ বা ফুল হাতা সোয়েটার পরিধান করে থাকে। চুল ছোট করে ছেঁটে আসাও স্কুলের ইউনিফর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি স্টুডেন্ট আইডি কার্ডও ইউনিফর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
হাউজ প্রথা ও টিফিন
সম্পাদনাস্কুলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সহ পড়াশোনার বহির্ভূত অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ছাত্রদের চারটি দলে ভাগ করে চারটি হাউজ নির্দিষ্ট করা হয়। মানব সভ্যতায় বিভিন্ন ভাবে অবদান রেখেছেন এমন চারজন স্মরণীয় ব্যক্তি- ওমর খৈয়াম, আল বিরুনি, আল মামুন ও সালাহ্উদ্দীন - এর নাম হতে চারটি হাউজের নামকরণ করা হয়েছে। হাউজগুলোর রঙ যথাক্রমে সবুজ, হলুদ, নীল ও লাল।
প্রতিষ্ঠার এক বছর পর থেকেই অর্থাৎ ১৯৬২ সাল থেকে ছাত্রদের টিফিন দেয়ার প্রথা প্রচলিত হয়, যার খরচ ছাত্ররাই মাসিক বেতনের সাথে যুগিয়ে থাকে। টিফিন হিসেবে সাধারণত সিঙ্গাড়া, সমুচা, পুরি, জিলাপি, পরটা-ডাল, বান, ডিম-ব্রেড, আলুর চপ - ব্রেড, পরটা-বুন্দিয়া,কলা, কেক ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি খাবারের সূচী হতে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করা হয়।
স্কুল দিবস ও স্কুল ম্যাগাজিন
সম্পাদনাস্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর তারিখটিকে স্কুল ডে নামাঙ্কিত করে বিশেষ ভাবে উদ্যাপন করা হয়। এই দিনে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত রেখে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে ছাত্র, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সপরিবারে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ঘটে। ক্ষেত্রবিশেষে এই দিনে স্কুলের পক্ষ থেকে বা ছাত্রদের পক্ষ থেকে স্মারকপত্র হিসেবে বিশেষ পত্রিকা বা অন্যান্য প্রকাশনা প্রকাশিত হয়ে থাকে।
স্কুলের নিয়মিত প্রকাশনা হচ্ছে একটি বাৎসরিক ম্যাগাজিন যা অনুশীলন নামে প্রকাশিত হয়। অনুশীলন প্রথমবারের মত প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। তার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর এই ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর প্রকাশিত অনুশীলনের ১৯৭২ সালের সংখ্যাটি গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতির মর্মগাঁথা।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ
সম্পাদনাপ্রবেশ পথ
সম্পাদনাবিদ্যালের প্রধান প্রবেশ পথ এর উত্তর প্রান্তে, নায়েম রোডে, ঢাকা কলেজের উত্তর দিকে অবস্থিত। এছাড়া এর দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে কলেজ স্ট্রিট থেকে প্রবেশের জন্য আরেকটি রাস্তা আছে।
বিদ্যালয়ের ভবনসমূহ
সম্পাদনাবিদ্যালয়ের প্রধান একাডেমিক ভবন মাঠের দক্ষিন পাশে অবস্থিত। মাঠের উত্তর পাশে দুটি ভবন রয়েছে এর একটি কৃষি ভবন, বিদ্যালয়ের সীমানার উত্তর-পূর্ব পাশে প্রধান শিক্ষকের আবাসিক ভবন,প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি ছিল ইংরেজি "L" (এল) আকৃতির একটি দ্বিতল ভবন। পরবর্তীকালে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ছাত্রদের স্থান সংকুলানের জন্য এর দোতালার কিছু অংশ বর্ধিত করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের অফিসসমূহ, পরীক্ষাগারগুলো এবং কিছু শ্রেণীকক্ষ এই ভবনে অবস্থিত।
পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে একটি অডিটোরিয়াম এবং নতুন আরেকটি ৫-তলা একাদশ ও দ্বাদশ শেণীর জন্য কলেজ ভবন নির্মিত হয়েছে।
মাঠ
সম্পাদনাগবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ এর কেন্দ্রীয় মাঠ। আয়তকার এই মাঠটির ক্ষেত্রফল প্রায় দেড় লক্ষ বর্গফুট যা বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে প্রধান ভবনের সামনে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বাৎসরিক অনুষ্ঠান এই মাঠে আয়োজন করা হয়। মাঠের পশ্চিম প্রান্তে বিদ্যালয় মিলনায়তন এবং পূর্ব প্রান্তে অপর একাডেমিক ভবনটি অবস্থিত। মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ফুটবল খেলার জন্য গোলপোস্ট, কেন্দ্রে একটি ক্রিকেট পীচ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে একটি ভলিবল কোর্ট ও নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের জন্য একটি প্র্যাকটিস ক্রিকেট পীচ রয়েছে।
পরীক্ষাগার, লাইব্রেরি এবং মসজিদ
সম্পাদনাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের জন্য একটি করে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান পরীক্ষাগার রয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা উভয় বিভাগের জন্য রয়েছে একটি কম্পিউটার পরীক্ষাগার। বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি যার বইয়ের সংখ্যা প্রায় নয় হাজার[৪]। এছাড়া বিদ্যালয়ে চার শতাধিক মানুষের ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নামাজ ঘর রয়েছে।
শহীদ মিনার
সম্পাদনাবিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটির নকশা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে, যা ২০০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোঃ শাহাবুদ্দিন উদ্বোধন করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ পথ দুইটির মাঝে শহীদ মিনারটি অবস্থিত। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের (একুশে ফেব্রুয়ারি) প্রথম প্রহরে এখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা হয় এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সারাদিনব্যাপী আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী
সম্পাদনা- আবদুল্লাহিল আমান আযমী- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
- সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন - ভোকালিস্ট, অর্থহীন
- তানযীর তুহিন - ভোকালিস্ট, আভাস
- নাজমুল হাসান পাপন - প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
- মাকসুদুল আলম - জিনতত্ত্ববিদ
- জিয়াউল হক পলাশ - অভিনেতা
- আন্দালিব রহমান পার্থ - রাজনীতিবিদ
- অনিক আর. হক - অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Government Laboratory High School, Dhaka, New-Market/Dhanmondi, Dhaka (2021)"। www.govserv.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১১।
- ↑ "ড. নজরুল ইসলাম: ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ষাট বছর"। আমাদের সময়.কম - AmaderShomoy.com। ২০২১-০৯-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১১।
- ↑ "অনুশীলন ২০২২"। অনুশীলন। বিদ্যালয়ের ইতিহাস।
- ↑ "অনুশীলন ২০২২"। অনুশীলন। বিদ্যালয়ের ইতিহাস।