খেচারি মুদ্রা

একটি হঠযোগ অভ্যাস

খেচারি মুদ্রা (সংস্কৃত खेचरी मुद्रा)[][]হলো একটি হঠযোগ অভ্যাস যা জিহ্বার ডগাকে পিছনে মুখের ভিতরে আনার মাধ্যমে করা হয় যতক্ষণ না এটি নরম তালুর ওপারে এবং নাসা গহ্বরে পৌঁছায়। এটি করার জন্য অনেক মাস ধরে দৈনিক জিহ্বা প্রসারিত করতে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে জিহ্বার ফ্রেনুলামকে একটি ধারালো যন্ত্র দিয়ে কয়েক মাস ধরে কেটে ফেলতে হয়,[] যাতে জিহ্বা যথেষ্ট প্রসারিত হয়ে নাসা গহ্বরে পৌঁছোতে পারে।

খেচারি মুদ্রা চারটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। এই মুদ্রাটি করার জন্য, জিহ্বাকে ক্রমান্বয়ে প্রসারিত করতে হয় এবং জিহ্বার ফ্রেনুলামকে (যা চিত্রিত করা হয়নি) যথেষ্ট পরিমাণে কেটে ফেলতে হয়। এই অনুশীলনটি কয়েক মাসের চেষ্টায় করা যাবে, যতক্ষণ না জিহ্বাটি নাকের গহ্বরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। এই মুদ্রাটি করার উদ্দেশ্য হলো বিন্দু নামক শক্তির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা।

খেচারি মুদ্রার লক্ষ্য হলো শরীরে মুক্তি অর্জন করা, বিন্দুর শক্তিকে মাথার মধ্যে আটকে রাখা যাতে তা নষ্ট না হয়।

প্রসঙ্গ

সম্পাদনা

হঠযোগ হলো যোগের একটি শাখা যেটি মূলত আধ্যাত্মিক অনুশীলন নিয়ে কাজ করে, যদিও এখানে শারীরিক কৌশল ব্যবহৃত হয়। ধ্যানমূলক এবং ভক্তিমূলক যোগের অনেক পরে এটি মধ্যযুগে বিকশিত হয়। যাইহোক এর লক্ষ্যগুলো একই রকম: সিদ্ধি বা জাদুকরী ক্ষমতা এবং মুক্তি। হঠযোগে, মুক্তিকে প্রায়শই দেহে অর্জনযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং মনে করা হয় হঠযোগের অনুশীলনের মাধ্যমে দেহকে অমর করা যায়। এর কৌশলগুলোর মধ্যে আছে মুদ্রা, যা কুণ্ডলিনী এবং বিন্দুর মত শক্তিকে আটকে রাখতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। খেচারি মুদ্র এমনই একটি কৌশল।[][]

মুদ্রা

সম্পাদনা
 
খেচারি মুদ্রা হল ঐতিহ্যবাহী হঠ যোগের বেশ কয়েকটি মুদ্রার মধ্যে একটি।[][]

প্রারম্ভিক পর্যায়ে এবং বেশিরভাগ অনুশীলনকারীর জন্য, জিহ্বার ডগা যতটা সম্ভব পিছনের দিকে নিয়ে নরম তালু স্পর্শ করাতে হয়[] অথবা মুখের পিছনের অংশে আলজিভে স্থাপন করতে হয়।[] শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তি জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে যোগাসনে মুদ্রা (সংস্কৃত मुद्रा, অক্ষরিক অর্থে "সীলমোহর") ব্যবহার করা হয়।[১০]

বৌদ্ধ পালি ত্রিপিটকে তিনটি অংশ রয়েছে যেখানে বুদ্ধ ক্ষুধা বা মন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জিহ্বাকে তালুতে চেপে রাখার বর্ণনা দিয়েছেন।[১১][১২]

হঠযোগ ধর্মগ্রন্থ খেচারিবিদ্যা অনুসারে, খেচারী মুদ্রা কুণ্ডলিনী জাগরণে এবং মাথার বিভিন্ন অমৃতকুণ্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রে সক্ষমতা প্রদান করে, যা পরবর্তীতে পুরো শরীরকে সঞ্চারিত করে।[১৩] একই গ্রন্থে দেবতা শিব খেচারী মুদ্রা অনুশীলনের জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত হিসাবে জিহ্বা বন্ধনী কাটার নির্দেশ দেন।[১৪]

তাকে ফনি মনসা গাছের পাতার মতো খুব ধারালো, তেলালো এবং পরিষ্কার একখানি ছুরি নিতে হবে এবং তারপর সেটি দিয়ে লিঙ্গুয়াল ফ্রেনুলামের প্রস্থ কেটে ফেলতে হবে এক চুল পরিমানে। কাটার পরে তিনি সৈন্ধব লবণ এবং কালো হরিতকীর গুঁড়া দিয়ে কাটা জায়গাটি ঘষে দেবেন। সাত দিন পরে তিনি আবার এক চুলের প্রস্থ কেটে ফেলবেন... ছয় মাস পরে জিহ্বার গোড়ার বন্ধনকারী টেন্ডনটি ধ্বংস হয়ে যাবে... তারপর, [আরও] ছয় মাস ধরে, নিয়মিত জিহ্বা বের করার পরে, প্রিয় বন্ধু, এটি ভ্রুমধ্যে পৌঁছায়... সেখানে প্রবাহিত অমরত্বের পরম অমৃত [অমৃত] লেহন করবেন, যোগী পান করবেন... এবং হীরার মতো অক্ষয় দেহ নিয়ে, ১০০,০০০ বছর বেঁচে থাকবেন।[১৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. For romanization of the Sanskrit term as khecarī mudrā, see: White 1996, পৃ. 135
  2. Flood 1996, পৃ. 100।
  3. "Khecarī mudrā – Instructions, Procedure & Warnings"। ৩০ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২৩ 
  4. Mallinson 2011, পৃ. 770।
  5. Birch 2011, পৃ. 527–558।
  6. Mallinson ও Singleton 2017, পৃ. 228, 231–232।
  7. Singleton 2010, পৃ. 29।
  8. Janakananda 1992, পৃ. 114।
  9. Kriyananda 2002, পৃ. 450–451।
  10. Kriyananda 2002, পৃ. 450।
  11. Mallinson 2007, পৃ. 17–19।
  12. Thanissaro Bhikkhu। "The Relaxation of Thoughts Vitakkasaṇṭhāna Sutta (MN 20)"Dhamma Talks। ৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০২১ 
  13. Mallinson 2007, পৃ. 29।
  14. Mallinson 2007, পৃ. 119।
  15. Mallinson ও Singleton 2017, পৃ. 247–248।