খুশল খান খাট্টাক
খুশল খান খাট্টাক (জন্ম: ১৬১৩ – মৃত্যু: ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ১৬৮৯; ইংরেজি: Khushāl Khan Khattak, পশতু: خوشحال خان خټک), Khushāl Bābā (পশতু: خوشحال بابا নামেও পরিচিত) ছিল একজন পশতুন কবি, যোদ্ধা এবং পণ্ডিত, এবং খাট্টাক পশতুন আদিবাসীর প্রধান।[২] খাট্টাক সমস্ত পশতুনের ইউনিয়ন পরিচালনা করতেন এবং তিনি তার কবিতার মাধ্যমে পশতুন জাতীয়তাবাদে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত করেন। খুশল প্রথম আফগান পরামর্শদাতা যিনি বিদেশি দখলদার থেকে মুক্ত করে, একটি জাতি-রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য আফগান উপজাতিদের একতা জন্য তার তত্ত্ব উপস্থাপনা করেন। খুশলের পুশতু ভাষায় অনেক রচনা রয়েছে, তবে ফার্সিতেও তার কিছু কিছু রচনা পাওয়া যায়। খুশলকে "পুশতু সাহিত্যের পিতা" বা ‘বাবাই পশতু’ বা পশতু সাহিত্যের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়ত এবং তিনি আফগানিস্তানের জাতীয় কবি।[১][৩]
খুশল খান খাট্টাক | |
---|---|
জন্ম | ১৬১৩ |
মৃত্যু | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৮৯ দাম্বারা, তিরাহ, কাবুল প্রদেশ, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমানে Federally Administered Tribal Areas, পাকিস্তান) | (aged 75–76)
সমাধি | আকোরা খাট্টাক, নওশেরা জেলা, খ্যবের পাখতুনখুয়া, পাকিস্তান |
পরিচিতির কারণ | পুশতু কবিতা, আফগান জাতীয়তাবাদ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | Bāznāma, Swātnāma, Fazlnāma, Tibbnāma, Firāqnāma |
উপাধি | আফগানিস্তানের জাতীয় কবি[১] |
পিতা-মাতা | মালিক শাহবাজ খান খাট্টাক |
তার জীবনের সময় অতিবাহিত হয়েছে অত্যাচারী মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। আফগানিস্তানে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে আফগানদের হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে খোশহাল খান মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব নিয়োজিত গভর্নরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি ‘আফগান যোদ্ধা-কবি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন।[২] চিরঅদ্যম আফগানদের স্বাধীনতা স্পৃহা ধারণ করে খোশহাল খান প্রতিরোধ যুদ্ধের ডাক দেন। কবিতায় তিনি ফুটিয়ে তোলেন স্বাধীনতাহারা আফগানদের ব্যথা ও বেদনার কথা। তার কবিতা ও গদ্য আফগানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। খোশহাল খান শুধু যে যোদ্ধা কবি ছিলেন এমনই নয়, বরং তিনি রচনা করেছেন বহু প্রেমের কবিতা, গান এবং ফার্সি ও আরবি থেকে পশতু ভাষায় অনুবাদও করেছেন এই কবি।[৪] সীরাত বিষয়ক তার কবিতাগুলোও অসাধারণ।
বাল্যকাল
সম্পাদনাখুশল সম্ভবত ১৬১৩ সালে আফগানিস্তানের খাট্টাক গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের আকোরার (বর্তমানে নওশেরা জেলা) মালিক শাহবাজ খান খাট্টাকের পুত্র ছিলেন। তার দাদার মালিক আকুরাই ছিলেন প্রথম খাট্টাক, যিনি মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের রাজত্বকাল থেকে সেখানে বসবাস করতেন। আকুরাই তেরি (কারাক জেলার একটি গ্রাম) থেকে সারাই আকোরাতে চলে আসেন, যেখানে তিনি একটি শহর প্রতিষ্ঠিত এবং নির্মিত করে। বাবাই পশতু খুশল খাট্টাক আফগানদের জাতীয় কবি। জাতীয় বীরও বটে। খুশলের কবিতা আফগানদের চির স্বাধীনস্পৃহার যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। মোঘল দখলদারের বিরুদ্ধে সারাটি জীবন ছিলেন উচ্চকণ্ঠ এমনকি নিজের কবরে মোঘাল ঘোড়সওয়ারের ছায়াটিও পড়–ক তা চান নি খুশল। কবরফলকে উৎকীর্ণ কবিতা থেকে তার আভাস মেলে,
“ |
আফগান জাতির সম্ভ্রম ও |
” |
মোঘলরা কবরের অমর্যাদা করতে পারে ভেবে প্রথমে গোপনেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। কাবুলের এক পাথুরে পাহাড়ের চূড়ায় দৃঢ়তার অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে যেন খুশল খান খাট্টাক। স্বাধীনতা পিয়াসী মানুষের মনে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে আছেন এই কবি। পশতুনদের মুখে মুখে এখনও উচ্চারিত হয় ‘বাবাই পশতু’।
মৃত্যু ও সমাধি
সম্পাদনাতিনি ২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৬৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Morgenstierne, Georg (১৯৬০)। "Khushhal Khan—the national poet of the Afghans"। Journal of The Royal Central Asian Society (ইংরেজি ভাষায়)। 47 (1): 49–57। আইএসএসএন 0035-8789। ডিওআই:10.1080/03068376008731684।
- ↑ ক খ "Khushal Khan Khattak – The Warrior and the poet"। ২৪ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৩।
- ↑ Banting, Erinn (২০০৩)। Afghanistan: The Culture Lands, Peoples, & Cultures। Crabtree Publishing Company। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 0778793370। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৩।
- ↑ Sperl, Stefan (১৯৯৬)। Classical Traditions and Modern Meanings (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-10295-8।