খড়দহ
খড়দহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা।
খড়দহ | |
---|---|
শহর | |
![]() ২৬ শিব মন্দির | |
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৩′ উত্তর ৮৮°২৩′ পূর্ব / ২২.৭২° উত্তর ৮৮.৩৮° পূর্ব | |
দেশ | ![]() |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | উত্তর ২৪ পরগণা |
জনসংখ্যা (2001) | |
• মোট | ১,১৬,২৫২ |
ভাষা | |
• অফিসিয়াল | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
নামকরণ
সম্পাদনাকথিত আছে, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু নৌকাযোগে গঙ্গা নদীতে যাওয়ার সময় স্থানীয় ভূস্বামীর কাছে সামান্য ব্রহ্মত্তোর ভূখণ্ড প্রার্থনা করেন। ভূস্বামী তাকে আপন ক্ষমতাবলে গঙ্গাবক্ষে ভদ্রাসন বানিয়ে নিতে বলেন ব্যাঙ্গচ্ছলে। ভূস্বামীর নিক্ষিপ্ত জলন্ত খড়ের আঁটি গঙ্গায় যেখানে গিয়ে পড়ে, প্রভু নিত্যানন্দের অলৌকিক ক্ষমতায় সেখানেই জেগে উঠল চর। এই থেকেই নাম হয় 'খড়দহ'[১]।
সাংস্কৃতিক ইতিহাস
সম্পাদনাবহু কাল আগের খড়দহ এখন লোকমুখে খড়দা। নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদর জন্মভূমি এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য স্থান। বিপ্রদাস পিপলাইর ‘মনসা বিজয়’ কাব্য এবং রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনায় পাওয়া যায় খড়দহের উল্লেখ। তবে শ্রীপাট খড়দার খ্যাতি প্রধানত শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দর জীউয়ের মন্দিরের জন্যই। এই ঐতিহাসিক রাধা-শ্যামসুন্দর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল সেই ধর্মবিপ্লব :
"শুধু ধর্মীয় বিভেদই নয়, শ্রীশ্যামসুন্দর মন্দির মুছে দিয়েছে হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিভেদরেখাও। এই মন্দির বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত ধর্মের মিলনক্ষেত্র। এখানে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পূজিত হন দশমহাবিদ্যার তৃতীয় মহাবিদ্যা ত্রিপুরাসুন্দরী এবং নীলকণ্ঠ শিব। নিত্যানন্দ কুঞ্জবাটীতে দুর্গাপুজোরও প্রচলন করেছিলেন। আবার শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধিকাকে কলঙ্ক থেকে বাঁচাতে বৃন্দাবনে কালী রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই দীপান্বিতা অমাবস্যায় শ্যামকে ‘শ্যামা’রূপে আরাধনা করা হয়। দোল এবং রাস উৎসবে খড়দা যেন গুপ্ত বৃন্দাবন। এই দু’দিন বিগ্রহকে চতুর্দোলায় চাপিয়ে দোলমঞ্চ ও রাসমঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। রাসের শেষ দিনে মন্দিরে ‘খিচুড়ি লুট’ উৎসবের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমোদ। শ্রীরাধা-শ্যামকে নিবেদিত খিচুড়ি ভক্তেরা লুট করে নিয়ে যান। মন্দির সংলগ্ন পথের ধারে দাঁড়িয়ে অগণিত নর-নারী লুণ্ঠিত খিচুড়ির কণা আস্বাদ করে আনন্দে মেতে ওঠেন। মন্দির চত্বর ও সংলগ্ন পথ-প্রান্তরের প্রতিটি ধূলিকণাও তখন শ্যামময়।"
শ্রীরাধা-শ্যামসুন্দর জীউয়ের মন্দির স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে হয়ে গিয়েছে ‘শ্যামের বাড়ি’। শ্রীশ্যামসুন্দরের মন্দিরের নিকটে কুঞ্জবাটী। চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছ থেকে সমগ্র বাংলায় হরিনাম প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সূর্যদাস সরখেলের দুই কন্যার পাণিগ্রহণ করেন নিত্যানন্দ। তার পর কুঞ্জবাটীতেই সংসার। এখানেই বীরভদ্র গোস্বামীর জন্ম। এই বীরভদ্র প্রভুর হাত ধরেই শ্যামসুন্দর প্রতিষ্ঠিত হন :
"বলা হয়, চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ অপ্রকট হওয়ার পর বীরভদ্র দৈবাদেশ পান, মালদহের নবাবের রাজপ্রাসাদের তোরণে রয়েছে একটি কালো পাথর। কিংবদন্তি অনুসারে, ওই পাথরটিকে রাজা পরীক্ষিৎ ওই তোরণে স্থাপন করেন। তার পর যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়ে শ্রীকৃষ্ণ ওই পাথরটির উপর দাঁড়িয়ে যজ্ঞে আগত ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দেন। বীরভদ্রের প্রতি দৈবাদেশ, সেই পাথর থেকে কৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরি করিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এই উদ্দেশ্যে বীরভদ্র সপার্ষদ নামসঙ্কীর্তন করতে করতে হাজির হলেন তখনকার মালদহে। অনেকের মতে, তখন গৌড়ের নবাব সোলেমান খাঁ। মালদহের নবাব সংবাদ পেয়ে বীরভদ্রকে বন্দি করলেন এবং ষড়যন্ত্র করলেন, গোমাংস খাইয়ে বীরভদ্রের জাত নষ্ট করা হবে। বীরভদ্রের এই অভিযানে আছে অলৌকিক দৈব মহিমার অনুষঙ্গ। রাজসভায় বীরভদ্রের সামনে ঢাকা দেওয়া একটি খাবারের থালা আনা হয়। ঢাকনা সরানো হলে দেখা গেল, গোমাংসের বদলে থালায় রয়েছে পুষ্পমাল্য। নবাব দমলেন না। সুরার পাত্র আনিয়ে বীরভদ্রকে পান করতে বললেন। এ বারেও দেখা যায়, সুরার বদলে পাত্রে রয়েছে দুধ। কাণ্ড দেখে নবাব ভয় পেলেন। তিনি বীরভদ্রের কাছে ক্ষমা চাইলেন। অনুরোধ করলেন, বীরভদ্র যদি তাঁর দৈব ক্ষমতার সাহায্যে নবাবের রুগ্ণ জামাইকে সুস্থ করে তোলেন। বীরভদ্র শর্ত দেন, জামাইয়ের সুস্থ শরীরের বিনিময়ে তিনি নিয়ে যাবেন রাজপ্রাসাদের তোরণে রক্ষিত বিশেষ কষ্টিপাথরটি। নবাব সম্মতি দিলেন। কিন্তু বুঝতে পারলেন না, বীরভদ্র কী উপায়ে পাথরটি খুলে নেবেন? বীরভদ্রের নির্দেশে সুরার পাত্রের দুধটি জামাইকে পান করানো হয়। বীরভদ্রের অলৌকিক শক্তির জোরেই হোক বা ভাগ্যবলে হোক, নবাবের জামাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। অপর দিকে আচমকাই আকাশ জুড়ে খেলে যায় তীব্র বিদ্যুতের ঝলক। সঙ্গে প্রচণ্ড বজ্রপাত। সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, বজ্রের আঘাতে তোরণ থেকে খুলে পড়েছে বিরাট এক কষ্টিপাথরের খণ্ড।
তোরণের কষ্টিপাথরটি কেমন করে মালদহ থেকে খড়দহে এল, সে সম্পর্কেও প্রচলিত অলৌকিক কাহিনি। জনশ্রুতি, বীরভদ্র কষ্টিপাথরটি ভাল করে খড়ে জড়িয়ে মালদহের গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রভু, তুমি খড়দহে যাও!’ আবার কারও মতে, বীরভদ্র গোস্বামী বাঁশের মাচায় খড়ের আবরণ দিয়ে পাথরটি জলপথে ভাসিয়ে খড়দহে পাঠিয়েছিলেন। বলা হয়, পাথরটি জলে ভাসতে ভাসতে গঙ্গাতীরবর্তী আকনার একটি স্নানের ঘাটে এসে আটকে যায়। ঘাটে স্নানরত বালকের দল পাথরটিকে খেলার ছলে ঠেলে দিতেই পাথর আবার ভাসতে ভাসতে এসে পৌঁছয় খড়দার ঘাটে। এখন এই ঘাটের নামই শ্যামসুন্দর ঘাট। বীরভদ্র খড়দহে পৌঁছে পাথরটিকে উদ্ধার করেন এবং ভাস্করকে ধ্যানে দেখতে পাওয়া কৃষ্ণ বিগ্রহের বিবরণ দিয়ে মূর্তি গড়তে বলেন। ওই কষ্টিপাথর থেকে তিনটি কৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরি হয়। এই তিন বিগ্রহের মধ্যে বীরভদ্র ধ্যানে দেখা সত্য, শিব ও সুন্দরের প্রকাশ দেখেন শ্যামসুন্দর বিগ্রহে। অন্য দুই বিগ্রহের একটি পাঠানো হয় আকনায় রুদ্র পণ্ডিতের কাছে। পণ্ডিত বিগ্রহকে বল্লভ জীউ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। দেবতার নামে আকনার নতুন নাম হয় বল্লভপুর। বীরভদ্র তৃতীয় বিগ্রহের নাম রাখেন ‘নন্দদুলাল’। নন্দদুলালকে বীরভদ্র পাঠান স্বামীবনে (সাঁইবোনা) লক্ষণ পণ্ডিতের কাছে।"
৯৭৭ বঙ্গাব্দের মাঘী পূর্ণিমায় অদ্বৈত আচার্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র অচ্যুতানন্দ গোস্বামী শ্যামসুন্দরকে কুঞ্জবাটীতে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নিত্যানন্দের সহধর্মিণী জাহ্নবা দেবীর ইচ্ছেয় শ্রীশ্যামসুন্দরের বামে অষ্টধাতুর রাধিকা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এখানে নিত্যানন্দর আগমনের সময় (১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ) ছিল। [৪]
চৈতন্যভাগবতে উল্লেখ আছে,
তবে আইলেন প্রভু খড়দহ গ্রামে।
পুরন্দর পণ্ডিতের দেবালয় স্থানে।।
খড়দহ গ্রামে প্রভু নিত্যানন্দ রায়।
যত নৃত্য করিলেন – কথন না যায়।।
খড়দহের বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস তার পিতার প্রতিষ্ঠিত ১২টি মন্দিরের সঙ্গে নিজে এখানে আরও ১৪টি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। তিনি আশি হাজার শালগ্রাম শিলা ও কুড়ি হাজার বাণলিঙ্গ শিবের একটি 'রত্নবেদী' প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার অকাল প্রয়াণের পর থেকে এখনো জরাজীর্ণ অট্টালিকার অন্ধকার কক্ষে এই হাজার-হাজার শিলামূর্তি ছোট জৈন মূর্তির সাথে পূজিত হয়। তিনি জীবদ্দশায় প্রাণতোষিণীতন্ত্র, বৈষ্ণবামৃত, বিষ্ণুকৌমুদী, শব্দকৌমুদী, ক্রিয়াম্বুধি প্রভৃতি গ্রন্থ সংকলন করে বিনামূল্যে জনসাধারণের কাছে বিতরণ করেছিলেন।[৫]
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনাভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুসারে খড়দহ শহরের জনসংখ্যা হল ১১৬,২৫২ জন;[৬] এর মধ্যে পুরুষ ৫৩% এবং নারী ৪৭%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৮১%; পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭৯%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%; তার চাইতে খড়দহ এর সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ৮% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনাশ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দর জীউয়ের মন্দির
সম্পাদনামন্দির বিগ্রহ নির্মিত হয় মালদহের নবাব প্রাসাদ তোরণের কষ্টিপাথরে, যা উদ্ধার করেন নিত্যানন্দ পুত্র বীরভদ্র গোস্বামী।
তোরণের কষ্টিপাথরটি কেমন করে মালদহ থেকে খড়দহে এল, সে সম্পর্কেও প্রচলিত অলৌকিক কাহিনি। জনশ্রুতি, বীরভদ্র কষ্টিপাথরটি ভাল করে খড়ে জড়িয়ে মালদহের গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রভু, তুমি খড়দহে যাও!’ আবার কারও মতে, বীরভদ্র গোস্বামী বাঁশের মাচায় খড়ের আবরণ দিয়ে পাথরটি জলপথে ভাসিয়ে খড়দহে পাঠিয়েছিলেন। বলা হয়, পাথরটি জলে ভাসতে ভাসতে গঙ্গাতীরবর্তী আকনার (বর্তমান শ্রীরামপুর ) একটি স্নানের ঘাটে এসে আটকে যায়। ঘাটে স্নানরত বালকের দল পাথরটিকে খেলার ছলে ঠেলে দিতেই পাথর আবার ভাসতে ভাসতে এসে পৌঁছয় খড়দার ঘাটে। এখন এই ঘাটের নামই শ্যামসুন্দর ঘাট। বীরভদ্র খড়দহে পৌঁছে পাথরটিকে উদ্ধার করেন এবং ভাস্করকে ধ্যানে দেখতে পাওয়া কৃষ্ণ বিগ্রহের বিবরণ দিয়ে মূর্তি গড়তে বলেন। ওই কষ্টিপাথর থেকে তিনটি কৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরি হয়। এই তিন বিগ্রহের মধ্যে বীরভদ্র ধ্যানে দেখা সত্য, শিব ও সুন্দরের প্রকাশ দেখেন শ্যামসুন্দর বিগ্রহে। অন্য দুই বিগ্রহের একটি পাঠানো হয় আকনায় রুদ্র পণ্ডিতের কাছে। পণ্ডিত বিগ্রহকে বল্লভ জীউ (রাধাবল্লভ মন্দির) নামে প্রতিষ্ঠা করেন। দেবতার নামে আকনার নতুন নাম হয় বল্লভপুর। বীরভদ্র তৃতীয় বিগ্রহের নাম রাখেন ‘নন্দদুলাল’। নন্দদুলালকে বীরভদ্র পাঠান খড়দার অদূরে স্বামীবনে (সাঁইবোনা) লক্ষণ পণ্ডিতের কাছে।
১৫৭১ খ্রিস্টাব্দের (৯৭৭ বঙ্গাব্দ) মাঘী পূর্ণিমায় অদ্বৈত আচার্য-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র অচ্যুতানন্দ গোস্বামী শ্যামসুন্দরকে কুঞ্জবাটীতে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নিত্যানন্দের সহধর্মিণী জাহ্নবা দেবীর ইচ্ছেয় শ্রীশ্যামসুন্দরের বামে অষ্টধাতুর রাধিকা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরে কুঞ্জবাটীতে বিগ্রহসেবার যথেষ্ট জায়গার অভাব দেখা দিলে চারশো বছরেরও বেশি আগে নির্মিত হয় বর্তমান শ্যামসুন্দর মন্দির। বর্তমানে কুঞ্জবাটীতে নিতাই-গৌর এবং বীরভদ্র গোস্বামীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত।
শ্যামসুন্দর মন্দিরের গঠনশৈলী অভিনব। নাটমন্দিরের শেষ প্রান্ত থেকে মন্দিরটি দেখতে পালকির মতো। গর্ভগৃহে রুপোর সিংহাসনে অষ্টধাতুর শ্রীমতী ও শিলাময় অনন্তদেবের সঙ্গে রয়েছেন শ্রীশ্যামসুন্দর। হাতে মুরলী। প্রসন্ন গম্ভীর শান্ত মুখ। আয়ত চোখ। কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত-র সঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংস খড়দহে এসে শ্যামসুন্দর দর্শন করেছেন। এসেছেন শ্রীমা সারদা দেবীও। শ্রীশ্রীমা পরবর্তী কালে ভক্তদেরও বলেছেন, ‘‘ঠাকুর বলতেন, ‘দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী, কালীঘাটের কালী আর খড়দার শ্যামসুন্দর— এঁরা জীবন্ত, হেঁটে চলে বেড়ান, কথা কন, ভক্তের কাছে খেতে চান।’ ’’
এই মন্দির বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত ধর্মের মিলনক্ষেত্র। এখানে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পূজিত হন দশমহাবিদ্যা-র তৃতীয় মহাবিদ্যা ত্রিপুরসুন্দরী এবং নীলকণ্ঠ শিব। নিত্যানন্দ কুঞ্জবাটীতে দুর্গাপুজোরও প্রচলন করেছিলেন। আবার শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধিকাকে কলঙ্ক থেকে বাঁচাতে বৃন্দাবনে কালী রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই দীপান্বিতা অমাবস্যায় শ্যামকে ‘শ্যামা’রূপে আরাধনা করা হয়। দোল এবং রাস উৎসবে খড়দা যেন গুপ্ত বৃন্দাবন। এই দু’দিন বিগ্রহকে চতুর্দোলায় চাপিয়ে দোলমঞ্চ ও রাসমঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। রাসের শেষ দিনে মন্দিরে ‘খিচুড়ি লুট’ উৎসবের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমোদ। শ্রীরাধা-শ্যামকে নিবেদিত খিচুড়ি ভক্তেরা লুট করে নিয়ে যান। মন্দির সংলগ্ন পথের ধারে দাঁড়িয়ে অগণিত নর-নারী লুণ্ঠিত খিচুড়ির কণা আস্বাদ করে আনন্দে মেতে ওঠেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ প্রথম খন্ড, নারায়ন সান্যাল (২৯৯০)। রূপমঞ্জরি। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৩৪৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "নবাব প্রাসাদের পাথর থেকে শ্রীশ্যামসুন্দর"।
- ↑ "নবাব প্রাসাদের পাথর থেকে শ্রীশ্যামসুন্দর"।
- ↑ "নবাব প্রাসাদের পাথর থেকে শ্রীশ্যামসুন্দর"।
- ↑ ক খ ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন।
- ↑ "ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি"। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬।