ক্ষিতীশচন্দ্র রায়চৌধুরী

ক্ষিতীশচন্দ্র রায়চৌধুরী (১৮৯৩ - ২০ নভেম্বর, ১৯৭৭) একজন বাঙালি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনকারী সশস্ত্র বিপ্লবী, জননেতা ও রাজনীতিবিদ।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ক্ষিতীশচন্দ্র অধুনা বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার ফকিরতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ভগবানচন্দ্র। তাদের আদি বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার ইদিলপুর। জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন।[১]

বিপ্লবী জীবন সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা বিদেশী অস্ত্রসাহায্য নিয়ে যে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন তিনি ছিলেন তার অন্যতম কর্মী। হাতিয়া দ্বীপে জার্মান যুদ্ধজাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নামিয়ে আনার ভার ছিল নোয়াখালী বিভাগের বিপ্লবীদের ওপর। এইসমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করার ফলে তাকে বিদ্যালয় শিক্ষা পরিত্যাগ করতে হয়। নরেন ঘোষচৌধুরীর নেতৃত্বে কলকাতার আশেপাশে রাজনৈতিক ডাকাতিতে অংশ নেন। নদিয়া জেলার শিবপুর গ্রামের ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে যশোরে তিন বছর অন্তরীন থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের কাজে যুক্ত হন পাশাপাশি গোপনে বিপ্লবী ছাত্র যুব কর্মীদের সাথেও সংযুক্ত থাকেন। কংগ্রেসের গণ আন্দোলনের প্রধান কর্মী হিসেবে ১৯২১ সালে ছয় মাস কারাদন্ড ভোগ করেন। ফিরে এসে স্বরাজ্য পার্টির স্থানীয় সংগঠক হয়েছিলেন। ১৯২৮-২৭ তিনি সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে প্রধান বক্তা, কংগ্রেসের নেতা, কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সহায়ক রূপে একজন জননেতা হয়ে ওঠেন। অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে বন্যাত্রানে, প্রতিটি সামাজিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য কর্মী। আইন অমান্য আন্দোলনে তিনমাস পূনরায় কারাদন্ড ভোগ করেন। চট্টগ্রাম বিদ্রোহের পর ১৯৩২ সালে আবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত দেউলি ও বক্সা দুর্গে বন্দী থাকেন তিনি। দেশের বাণী নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা রিপোর্টে এই পত্রিকাকে কমিউনিস্ট পত্র বলে চিহ্নিত করা হয়।[১][২]

রাজনীতি সম্পাদনা

জেল থেকে মুক্তি লাভের পর কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন ও কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে সক্রিয় ছিলেন। দেশবিভাগের পরেও বাংলাদেশ পরিত্যাগ করেননি। নোয়াখালীর হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছের মানুষ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় জননেতা ছিলেন ক্ষিতীশচন্দ্র রায়চৌধুরী, ছাত্র যুব কর্মীদের কাছে ক্ষিতীশ'দা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনী তাকে হত্যা করতে এলে মুসলিম জনগণ তাকে রক্ষা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত আত্মগোপন করে থাকতে হয় এই বিপ্লবীকে।[২]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৭৭ সালে তাকে চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় আনা হয়। হুগলীর রিষড়া সেবাসদনে ভর্তি থাকেন। ২০ নভেম্বর, ১৯৭৭ সালে তার মৃত্যু ঘটে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বিপ্লবী ক্ষিতীশচন্দ্র রায়চৌধুরী স্মরনে"banglanews24.com। ৫ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ১১৭।