ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর বাংলাদেশের রংপুর শহরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এবং রংপুর নগরের শহীদ মুখতার এলাহী চত্ত্বরের পশ্চিম পাশে রংপুর সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত।[১] বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এবং বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে সাধারণত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। বর্তমানে এই কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়া, প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরও চালু আছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, এখানে মোট ৭৭৪৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
![]() | |
ধরন | বেসরকারি স্কুল ও কলেজ |
---|---|
স্থাপিত | ১৯৭৮ |
অধিভুক্তি | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর |
ইআইআইএন | ১২৭৫০০ |
অধ্যক্ষ | আহসানুল কবির |
উপাধ্যক্ষ | নুসরাত তারেফা (কলেজ) রিফাহ তামান্না দিপ্তি (স্কুল) |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ২১৯ |
শিক্ষার্থী | ৭৭৪৯ |
ঠিকানা | , , ৫৪০০ , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে, ২০.৩ একর (৮.২ হেক্টর) |
ভাষা | বাংলা |
সংক্ষিপ্ত নাম | CPSCR |
ওয়েবসাইট | cpscr |
![]() |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৭৭ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠানের নার্সারি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয় । ১৯৮০ সালে এটি দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদান শুরু করে এবং ১৯৮২ সালে শিক্ষার্থীরা এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শুরু করে। ১৯৯৫ সালে ডিগ্রি পর্যায়ে শিক্ষাদান শুরু করা হয়। আধুনিক শিক্ষার চাহিদা মেটানোর জন্য ১৯৯৩ সালে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৯৬ সালে ইংরেজি মাধ্যমের কার্যক্রম "দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল" নামে আলাদাভাবে পরিচালিত হয়।[২] ১৯৯৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাশ) কোর্সের অনুমতি পেলেও বর্তমানে শিক্ষাদান হয়না। ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক স্তর, ১৯৮১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এবং ১৯৯৭ সালে স্নাতক (পাশ) স্তর এমপিওভুক্তিকরণ করা হয়।
তিস্তাতরঙ্গ এই বিদ্যালয়ের একটি বার্ষিক প্রকাশনা সাময়িকী। এটি বঙ্গাব্দের হিসেবে প্রকাশিত হয়।
অবস্থান
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠানটি দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হতে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে, রংপুর নগরের ধাপ এলাকায় রংপুর সেনানিবাস সংলগ্নরূপে অবস্থিত। এর দুই দিকে রয়েছে রংপুর গলফ ক্লাব। এর পূর্ব দিকে রয়েছে শহীদ মুখতার ইলাহী চত্তর তথা মেডিকেল মোড় এবং উত্তরাংশে রয়েছে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার। এর দক্ষিণে রয়েছে দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রংপুর আর্মি মেডিকেল কলেজ।
ক্যাম্পাস
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম মূলত দুইটি ভবন-কমপ্লেক্সে বিভক্ত। আয়তাকৃতির বিস্তীর্ণ মূল কমপ্লেক্সটিতে দুইটি পরস্পর সংযুক্ত ভবন রয়েছে। পশ্চিমভাগে বহুতল কলেজ ভবন ও পূর্বভাগে দ্বিতল স্কুল ভবনদ্বয় মুখোমুখি এমনভাবে সংযুক্ত যেন পুরো কমপ্লেক্সটিকেই আয়তাকৃতির দেখা যায়। এর মাঝে একটি খোলা মাঠ রয়েছে যা বিদ্যালয়ের মূল প্রাঙ্গণ ও এই মাঠের পশ্চিমাংশে থাকা উন্মুক্ত মঞ্চের দর্শক ধারনের কাজ করে থাকে। পুরো কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে শিক্ষকদের চেম্বার ও শ্রেণীকক্ষ। এছাড়া স্কুল ভবনে বিদ্যালয়ের জরুরী অফিস সেকশন, অধ্যক্ষের কার্যালয় এবং স্কুল অংশের ল্যাবরেটরি রয়েছে। আর কলেজ ভবনে গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাবসমূহ, কলেজ সেকশনের বৈজ্ঞানিক ল্যাবসমূহ, শিক্ষকদের লাউঞ্জ, উপাধ্যক্ষ্যের কার্যালয় ও কয়েকটি বৃহৎ মিলনায়তন রয়েছে। ক্যাম্পাসের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে রয়েছে কেজি সেকশনের ভবন যেখানে মূলত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলে। এর পাশে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রতিষ্ঠান "প্রয়াস"। প্রাঙ্গণের একাংশে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মিলনায়তন যা অভ্যন্তরে সুদৃশ্য ম্যুরালদ্বারা অলংকৃত। যদিও সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ২য় প্রবেশ মুখের কাছে একটি নতুন, আধুনিক ও দর্শনীয় মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাবর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাশ) কোর্সের অনুমতি থাকলেও শিক্ষাদান হয়না।
উপলব্ধ কোর্স
সম্পাদনা- প্রথমিক
- নিম্ন মাধ্যমিক
- মাধ্যমিক
- বিজ্ঞান
- ব্যবসায় শিক্ষা
- উচ্চ মাধ্যমিক
- বিজ্ঞান
- মানবিক
- ব্যবসায় শিক্ষা
- স্নাতক পাস কোর্স (পাঠদান বন্ধ আছে)
শিক্ষার্থী ও আসন
সম্পাদনাশিক্ষার্থী
সম্পাদনা২০২৪ সালের তথ্যানুসারে প্রাথমিক স্তরে ৩০১৪ জন, নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে ১৭৮২ জন, মাধ্যমিক স্তরে ১১০৫ জন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১৮৪৮ জন মিলে মোট ৭৭৪৯ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাশ) কোর্সের অনুমতি থাকলে শিক্ষাদান বন্ধ আছে।
আসন
সম্পাদনাউচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান বিভাগে ৭০০, মানবিক বিভাগে ১৬০ ও বাণিজ্য বিভাগে ১৬০ টি করে মোট ১০২০ টি আসন রয়েছে।[৩]
সুবিধা
সম্পাদনাবিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের যুগপোযোগী শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি, শারীরিক, মানষিক এবং চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের পাশাপাশি দুইটি কম্পিউটার ল্যাব, এবং বিজ্ঞান বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত অন্যান্য ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে একটি মসজিদ, দুইটি পার্ক, ব্যাংক, ক্যান্টিন, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ, শহীদ মিনার, অভিভাবক শেডস ইত্যাদি। এর উত্তরাংশের সীমানা জুড়ে রয়েছে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, তবে প্রতিষ্ঠানটি অনাবাসিক।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনা- সিপিএসসিআর ডিবেটিং ক্লাব
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর
- রোভার স্কাউট, বয়জ স্কাউট ও গার্ল গাইডিং
ফলাফল ও র্যাংকিং
সম্পাদনা- এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল
২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১২,১৯৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ১২,১২৫ জন এবং ফেল করেছে ৭৪ জন। ৭,৮০৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ (এ+) অর্জন করেছে। এই সময়ে গড় পাসের হার ছিল ৯৯.৩৯%, এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ছিল ৬৩.৯৯%।
- এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল
২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৫,৬৬৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ৫,৬৬৩ জন এবং ফেল করেছে ৬ জন। ৪,৬৯৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ (এ+) অর্জন করেছে। এই সময়ে গড় পাসের হার ছিল ৯৯.৮৯%, এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ছিল ৮২.৭৮%।
- জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল
২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৩,৫১৭ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ৩,৫১৭ জন এবং কেউ ফেল করেনি। ২,৭৩৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ (এ+) অর্জন করেছে। এই সময়ে গড় পাসের হার ছিল ১০০% এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ছিল ৭৭.৭৭%।
- ২০২৪ সালের কলেজ র্যাংকিং
২০২৪ সহপাঠী কলেজ র্যাংকিং অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে ১৭ তম, দিনাজপুর বোর্ডে ১ম, রংপুর বিভাগে ১ম এবং রংপুর জেলার মধ্যে ১ম স্থানে অবস্থান করেছে।
- ২০২৪ সালের স্কুল র্যাংকিং
২০২৪ সহপাঠী স্কুল র্যাংকিং অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে ১০ম, দিনাজপুর বোর্ডে ১ম, রংপুর বিভাগে ১ম এবং রংপুর জেলার মধ্যে ১ম স্থানে অবস্থান করেছে।
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Cantonment Public School And College, Rangpur - Sohopathi | সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৮।
- ↑ "Cantonment Public School & College, Rangpur. – School Code: 5350| College Code: 5375 | EIIN : 127500" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১১।
- ↑ dhaka (২০২৪-০৫-২৪)। "একাদশে শ্রেণীতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি – Cantonment Public School & College, Rangpur." (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-২৮।
- ↑ ক খ Analysis of Public Results। "Cantonment Public School And College, Rangpur"। সহপাঠী। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২৪।