কেপলার-৫বি
কেপলার-৫বি হল নাসা'র কেপলার মহাকাশযান মিশন দ্বারা প্রথম আবিষ্কৃত ৫টি গ্রহের মধ্যে একটি। গ্রহটি হলো একটি উত্তপ্ত বৃহস্পতি গ্রহ যা একটি উপদানবাকৃতির নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে, যে নক্ষত্রটি সূর্য থেকে অধিক ভরবিশিষ্ট, বড় এবং বিকীর্ণ। কেপলার-৫-এর পরিভ্রমণরত স্থানে একটি গ্রহ আছে বলে ধারণা করা হত এবং তাই এই গ্রহ কেপলার অবজেক্ট অব ইন্টারেস্টের একটি হিসেবে নথিবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কেপলার-৫-কে একটি গ্রহ হিসেবে নিশ্চিত করা হয় এবং একই সাথে এর নানা বৈশিষ্ট্যও উদ্ঘাটিত হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারির ১০ তারিখে একটি সভায় আমেরিকান এস্ট্রোনোমিক্যাল সোসাইটি গ্রহটির আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। গ্রহটির ভর বৃহস্পতি গ্রহ থেকে ২ গুণ বেশি এবং এটি বৃহস্পতি অপেক্ষা ১.৫ গুণ বড়। এছাড়াও এটি বৃহস্পতি গ্রহ অপেক্ষা ১৫ গুণ বেশি উত্তপ্ত।[৪] কেপলার-৫বি গ্রহ কেপলার-৫ নক্ষত্রকে ৩.৫ দিনে প্রায় ০.০৫১ জ্যোতির্বিদ্যা-একক (৭.৬ গিগামিটার)-এ প্রদক্ষিণ করে। কেপলার ৫বি আমাদের সৌরজগৎ থেকে সিগনাস নক্ষত্রমণ্ডল বা বকমন্ডল নক্ষত্রমন্ডলীতে অবস্থিত।[৪]
আবিষ্কার[১] | |
---|---|
আবিষ্কারের তারিখ | ২০১০-০১-০৪ |
আবিষ্কারের পদ্ধতি | ট্রানজিট (কেপলার মিশন) |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | ০.০৫০৬৪ ± ০.০০০৭ AU (৭৫,৭৬,০০০ ± ১,০৫,০০০ কিমি)[২] |
উৎকেন্দ্রিকতা | ০ |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ৩.৫৪৮৪৬ ± ০.০০০০৩২[২] দি |
নতি | ৮৬.৩ ± ০.৬[২] |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
গড় ব্যাসার্ধ | ১.৪৩১ ± ০.০৪৮[২] আরজে ১৫.৫৪৫৭ আর🜨 |
ভর | ২.১১৪ ± ০.০৬৪[২] এমজে |
প্রতিফলন অনুপাত | ০.১২±০.০৪ |
তাপমাত্রা | ২১৬৯+81| −113 কে.[৩] |
পর্যবেক্ষণের ইতিহাস
সম্পাদনাকেপলার মহাকাশযান তাদের অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি আবর্তনের ঘটনাসমূহের ধারাবাহিক প্রকাশ করেছিল, যার মধ্য দিয়ে গ্রহের মতো কোনো বস্তু যেতে পারত এবং পরবর্তীতে অনুজ্জ্বল হয়ে যেত। এরকম বস্তুগুলোকে কেপলার ইনপুট ক্যাটালগ থেকে নিয়ে কেপলার অবজেক্ট অব ইন্টারেস্টে বিন্যস্ত করা হয়।[১] কেপলার-৫ ছিল এদের মধ্যে অন্যতম একটি কৌতূহলের বস্তু এবং একে কোল-১৮ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।[৪]
নাক্ষত্রিক পরিমিতি প্রতিষ্ঠিত হবার পরে, নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে কেপলার-৫ এর ট্রানসিট ইভেন্ট গ্রসন বাইনারি এর মত ভুল নয়। কেপলার-৫বি এর গ্রহবিষয়ক স্বভাব পরিলক্ষিত করার পর কেপলার টিম নক্ষত্রের পিছে এর গুপ্তভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল এবং আশা করেছিল এর দিনের অংশে তাপমাত্রা বের করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা অবশেষে দু'টি জিনিসই বের করতে পেয়েছে এবং গ্রহের সুস্থিতি তাপমাত্রাও বের করতে সামর্থ্য হয়েছে।[১] অভিযোজিত তন্তু ব্যবহারকৃত ক্ষুদ্র দাগ ইমেজিং করার মাধ্যমে আরিজোনার উইন মানমন্দির এবং ক্যালিফোর্নিয়া প্যালোমার মানমন্দিরে ব্যাকগ্রাউন্ড তারকা থেকে কেপলার-৫ পর্যবেক্ষণ করা হয়।[১]
২০০৯ সালের ৪ জুন ফাইবের-ফেড ইচেল স্পেক্টোগ্রাফ ব্যবহার করে ক্যানার আইল্যান্ডের নরডিক অপটিক্যাল টেলিস্কোপ দ্বারা নাক্ষত্রিক শ্রেণীর বস্তু শনাক্ত করার জন্য তথ্য প্রদান করেছিল। ডব্লিউ. এম কেক মানমদিরে উচ্চ রেজ্যুলেশনের ইচেল স্পেক্টোগ্রাফ ব্যবহার করে রেডিয়েল বেগ মাপা হয় যা নাক্ষত্রিক পরিমিতিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে। যন্ত্রটি ২০০৯ সালের ৩-৬ জুন এবং ২০০৯ সালের ২-৪ জুলাই ব্যবহার করা হয়েছিল।[১]
কেপলার-৫ কেপলার টিম দ্বারা বিবেচনা করা হয়েছিল গ্রহের চরম পর্যায়ের গবেষণা করার জন্য; এর উচ্চ তাপমাত্রা, বৃহৎ আকৃতি এবং অল্প কক্ষীয় পর্যায়কাল উপরের অবস্থাগুলো গবেষণার ক্ষেত্রে অবদান রাখত। কেপলার টিম ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞান সোসাইটির ২১৫তম সভায় কেপলার-৪বি, কেপলার-৬বি, কেপলার-৭বি, কেপলার-৮বি গ্রহ সহ কেপলার-৫বি আবিষ্কারেরও ঘোষণা দেয়।[৫]
মাতৃ নক্ষত্র
সম্পাদনাকেপলার-৫ হলো সিগনাস তারকামন্ডলের একটি উপদানব এর কেন্দ্রের সকল হাইড্রোজেন অনেক তাড়াতাড়ি সময়ে শেষ করে ফেলেছে এবং বর্তমানে কোরের চারপাশের এলাকার শেলে হাইড্রোজেন পোড়ানো শুরু করেছে।[১] তারকাটি সূর্যের ভরের ১.৩৭৪গুণ (অন্য একটি মডেল অনুযায়ী এটির ভর সূর্যের ১.২১ গুণ),[১] যদিও এর ব্যাসার্ধ সূর্য থেকে ১.৭৯৩ গুণ বেশি। তারকাটির ধাতবতা বা [Fe/H] = ০.০৪, অর্থাৎ, কেপলার-৫ এর লোহার স্তর সূর্য থেকে ১.১০ গুণ বেশি।[৬]
তারকাটির আপাত মান ১৩.৪, অর্থাৎ এটি খালি চোখে দেখা যাবেনা।[৬]
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাকেপলার-৫বি হলো একটি উত্তপ্ত বৃহস্পতিগ্রহ যার ভর বৃহস্পতি থেকে ২.১১৪ গুণ বেশি এবং ব্যাসার্ধ বৃহস্পতির থেকে ১.৪৩১ গুণ বেশি। এর মানে কেপলার-৫বি'র ঘনত্বও বেশি নয়। গ্রহটির পরিমাপকৃত ঘনত্ব হলো ০.৮৯৪ গ্রাম/সে.মি.^৩ যা বিশুদ্ধ পানির থেকে কম এবং এটি শনি গ্রহ'র ঘনত্বের সাথে তুলনাযোগ্য। শনি'র ঘনত্ব হলো প্রায় ০.৬৯গ্রাম/সে.মি.^৩। গ্রহটির তাপমাত্রা ১৮৬৮ কেলভিন, তাই এটি বৃহস্পতি গ্রহ থেকে ১৫ গুণ বেশি উত্তপ্ত।[৪]
কেপলার-৫বি এর হোস্ট তারকাকে প্রতি ৩.৫৪৮৫ দিনে এর পরাক্ষে ০.০৫০৬৪ জ্যোতির্বিদ্যা-এককে প্রদক্ষিণ করে। এর নতি ৮৬.৩ ডিগ্রি, কেপলার-৫বি এবং কেপলার-৫ এর কিনারা প্রায় পৃথিবীর মতোই। বুধ গ্রহ সূর্যকে ০.৩৮৭ জ্যোতির্বিদ্যা এককে প্রতি ৮৭.৯৭ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে।[৭]
গ্রহটি জোয়ার-ভাটারভাবে অভিভাবক নক্ষত্রের কাছে আটকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫ সালে, গ্রহের রাতের তাপমাত্রা 2169+81
−113 K-এর সমান অনুমান করা হয়েছিল।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ কোচ, ডেভিড জি.; ও অন্যান্য (২০১০)। "Discovery of the Transiting Planet Kepler-5b"। দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স। ৭১৩ (২): L131–L135। arXiv:1001.0913 । ডিওআই:10.1088/2041-8205/713/2/L131 । বিবকোড:2010ApJ...713L.131K ।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ বোরুকি, উইলিয়াম জে.; ও অন্যান্য (২০১০-০১-০৭)। "Kepler Planet-Detection Mission: Introduction and First Results" [কেপলার প্ল্যানেট-ডিটেকশন মিশন: ভূমিকা এবং প্রথম ফলাফল]। সায়েন্স। sciencemag.org। ৩২৭ (5968): ৯৭৭–৯৮০। এসটুসিআইডি 22858074। ডিওআই:10.1126/science.1185402 । পিএমআইডি 20056856। বিবকোড:2010Sci...327..977B।
- ↑ ক খ "A Comprehensive Study of Kepler Phase Curves and Secondary Eclipses:Temperatures and Albedos of Confirmed Kepler Giant Planets" [কেপলার ফেজ কার্ভস এবং সেকেন্ডারি ইক্লিপস এর একটি ব্যাপক অধ্যয়ন: নিশ্চিত কেপলার জায়ান্ট গ্রহের তাপমাত্রা এবং অ্যালবেডোস]। ২০ জুন ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "Summary Table of Kepler Discoveries" [কেপলার আবিষ্কারের সংক্ষিপ্ত সারণী]। নাসা। ২০১০-০৩-১৫। ২০১০-০৫-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-১৮।
- ↑ "NASA's Kepler Space Telescope Discovers its FIrst Five Exoplanets" [নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ তার প্রথম পাঁচটি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছে]। নাসা। ৪ জানুয়ারি ২০১০। ৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১১।
- ↑ ক খ জিন স্নাইডার (২০১০)। "Notes for Planet Kepler-5 b"। এক্সট্রাসোলার প্ল্যানেট এনসাইক্লোপিডিয়া। ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১১।
- ↑ ডেভিড উইলিয়ামস (১৭ নভেম্বর ২০১০)। "মার্কারি ফ্যাক্ট শিট"। গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার। নাসা। ৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১১।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা