কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি

কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি হলো বামপন্থী রাজনৈতিক ভাবাদর্শের একটি পরিসর যেটি রাজনৈতিক কেন্দ্রপন্থার কাছাকাছি ঝুঁকে পড়ে। কেন্দ্র-বামপন্থীদের প্রধান ভাবাদর্শের মধ্যে রয়েছে সামাজিক গণতন্ত্র, সামাজিক উদারনীতিবাদ, প্রগতিশীলতাবাদ ও সবুজ রাজনীতি। সাধারণভাবে কেন্দ্র-বামপন্থীদের দ্বারা সমর্থিত ধারণাগুলোর মধ্যে রয়েছে কল্যাণ পুঁজিবাদ, সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশবাদ, উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বহুসংস্কৃতিবাদ। অর্থনৈতিকভাবে, কেন্দ্র-বামপন্থীরা একটি গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় একটি মিশ্র অর্থনীতিকে সমর্থন করে, যেখানে প্রায়ই অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ, প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অধিকার অন্তর্ভুক্ত থাকে। কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি দূর-বামপন্থী রাজনীতির বিপরীত, যেটি পুঁজিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে আর বিপ্লবকে সমর্থন করে।

১৮ ও ১৯ শতকের ফ্রান্সে অবশিষ্ট বাম–ডান রাজনৈতিক মতপরিসর থেকে কেন্দ্র-বামপন্থা বিকশিত হয়েছিল, যেখানে কেন্দ্র-বামপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাঁরা, যাঁরা রাজতন্ত্র থেকে সংসদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সমর্থন করেছিল বা মধ্যপন্থী প্রজাতন্ত্রবাদকে সমর্থন করেছিল। প্রারম্ভিক প্রগতিশীলতাবাদ ও বামপন্থী উদারনীতিবাদ পশ্চিম ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে বিকশিত হয়েছিল, যখন সামাজিক গণতন্ত্র সংস্কারবাদী সমাজতন্ত্র থেকে বিভক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সময় সামাজিক গণতন্ত্র পশ্চিম ইউরোপে প্রভাবশালী ভাবাদর্শে পরিণত হয় এবং বি-উপনিবেশায়নের পরে এটি আফ্রিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৭৩-১৯৭৫ মন্দার পরে কেন্দ্র-বাম ধারার অর্থনীতির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং নব্য উদারনীতিবাদের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়, যেখানে সবুজ রাজনীতি নতুন বামপন্থা থেকে আরেকটি কেন্দ্র-বামপন্থী আদর্শ হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৯৯০-এর দশকে তৃতীয় পন্থার রাজনীতি ইউরোপে সামাজিক গণতন্ত্রের মধ্যপন্থী রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং লাতিন আমেরিকায় গোলাপি জোয়ারের সময় কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। একবিংশ শতাব্দীতে, ডিজিটাল বিপ্লবের উন্নয়ন, উন্নত দেশগুলোতে নিম্নবিত্তকে মধ্যবিত্তে অন্তর্ভুক্ত করা এবং জনতুষ্টিবাদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ভাবাদর্শ সম্পাদনা

কেন্দ্র-বামপন্থীদের প্রধান ভাবাদর্শের মধ্যে রয়েছে সামাজিক গণতন্ত্র,[১][২] সামাজিক উদারনীতিবাদ,[১][২] প্রগতিশীলতাবাদ[১][৩] এবং সবুজ রাজনীতি।[১][২][৪] কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতিতে প্রায়শই স্বাতন্ত্র্যবাদের উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং কখনো কখনো সীমিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে সমর্থন দেয়।[১] সকল রাজনৈতিক জোটের মতো, কেন্দ্র-বাম বনাম দূর-বাম বা কেন্দ্রপন্থী রাজনীতির সঠিক সীমানা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি এবং প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।[২] স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেন্দ্র-বামপন্থী ভাবাদর্শসমূহ সাধারণ, যেখানে সাধারণত একটি আদর্শিক কেন্দ্রপন্থার সাথে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা যায়।[৫]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cronin, Shoch এবং Ross 2011, পৃ. 3।
  2. Ostrowski, Marius S. (২০২৩-০১-০২)। "The ideological morphology of left–centre–right"Journal of Political Ideologies28 (1): 1–15। আইএসএসএন 1356-9317ডিওআই:10.1080/13569317.2022.2163770 
  3. Ostrowski, Marius S. (২০২১)। "How (Not) to Form a Progressive Alliance: Lessons from the History of Left Cooperation"The Political Quarterly (ইংরেজি ভাষায়)। 92 (1): 23–31। আইএসএসএন 0032-3179এসটুসিআইডি 229437666ডিওআই:10.1111/1467-923X.12939 
  4. Carter, Neil (২০১৩)। "Greening the mainstream: party politics and the environment"Environmental Politics (ইংরেজি ভাষায়)। 22 (1): 73–94। আইএসএসএন 0964-4016ডিওআই:10.1080/09644016.2013.755391 
  5. Woshinsky 2007, পৃ. 112।