মধ্যপন্থা
রাজনীতিতে, মধ্যপন্থী বা মধ্যপন্থা হলো একটি দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান যেটি সামাজিক সাম্যের ভারসাম্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি নির্দিষ্ট মাত্রাকে গ্রহণযোগ্যতা বা সমর্থন দেয় এবং এমন রাজনৈতিক পরিবর্তন, যার ফলে সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য ডানপন্থী বা বামপন্থী অভিমুখী শক্তিশালী রাজনৈতিক স্থানান্তর হবে, তার বিরোধিতা করে।[১]
মধ্য-বামপন্থা ও মধ্য-ডানপন্থা উভয় রাজনৈতিক মতবাদই কেন্দ্রপন্থার সাথে একটি সাধারণ সম্পর্ক রয়েছে, কেবল এগুলোর ক্ষেত্রে নিজ নিজ দিকে কিছুটা বাম–ডান রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে । বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ, যেমন খ্রিস্টান গণতন্ত্র,[২] পঞ্চশীল[৩][৪][৫] এবং সামাজিক উদারনীতির[৬] মতো উদারনীতির কিছু রূপকে মধ্যপন্থী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে, এছাড়াও তৃতীয় পন্থাকেও[৭] মধ্যপন্থী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তৃতীয় পন্থা একটি আধুনিক রাজনৈতিক আন্দোলন যেখানে মধ্য-বাম সামাজিক নীতির সাথে মধ্য-ডান অর্থনৈতিক অবস্থানের সংশ্লেষণের পক্ষে সমর্থন করে ডানপন্থী এবং বামপন্থী রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়,[৮][৯] যা ছিল ১৯৯০ সালে বিল ক্লিনটন, টনি ব্লেয়ার এবং পল কিটিং কর্তৃক জনপ্রিয় হওয়া ভারসাম্যমুখী কট্টরপন্থাবিরোধী নীতিবিশিষ্ট একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
বিভিন্ন দেশে
সম্পাদনাপাকিস্তান
সম্পাদনাইমরান খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নিজেদের পাকিস্তানের একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল বলে দাবি করে।[১০] ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর, পিটিআই ভোটের সংখ্যায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১১] জুলাই ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে দলটি জয়লাভ করে এবং এর চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।[১২]
বাংলাদেশ
সম্পাদনাপ্রথাগতভাবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে "মধ্যপন্থী" (সেইসাথে মধ্য-বামপন্থী) শব্দটিকে প্রায়ই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়, বিপরীতে ডানপন্থীদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিদ্যমান মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল।[১৩][১৪] এটি মূলত মধ্য-বামপন্থী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে মধ্যপন্থী রাজনীতির দিকে সরে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদ চর্চা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে দলটিকে উগ্রডানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যান্য মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মাঝেও মধ্যপন্থী প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও মধ্যপন্থী হওয়ার কথা রয়েছে, যা শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভারত
সম্পাদনাভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,[১৫][১৬] আম আদমী পার্টি[১৭] এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি[১৮] হলো ভারতের মধ্যপন্থী জাতীয় দল। দুটি রাজ্য দল – ভারত রাষ্ট্র সমিতি[১৯] ও তেলুগু দেশম পার্টি,[২০] পাশাপাশি অভিনেতা কমল হাসানের মাক্কাল নিধি মায়াম,[২১] অর্থ গণ-ন্যায়বিচার কেন্দ্র – মধ্যপন্থী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Woshinsky, Oliver H.. (২০০৮)। Explaining Politics: Culture, Institutions, and Political Behavior। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 141, 161। আইএসবিএন 978-0-203-93318-3। ওসিএলসি 1251767064।
- ↑ Boswell, Jonathan (২০১৩)। Community and the Economy: The Theory of Public Co-operation। Routledge। পৃষ্ঠা 160। আইএসবিএন 978-1136159015।
- ↑ Tehusijarana, Karina M.; Arbi, Ivany Atina (২৪ আগস্ট ২০১৯)। "Weaponizing Pancasila"। The Jakarta Post (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Aspinall, Edward; Fossati, Diego; Muhtadi, Burhanuddin; Warburton, Eve (২৪ এপ্রিল ২০১৮)। "Mapping the Indonesian political spectrum"। New Mandala (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Arif, Syaiful (১৭ অক্টোবর ২০২০)। "Soekarno and the Social Centrism of Pancasila"। Kompas (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Slomp, Hans (২০০০)। European Politics Into the Twenty-First Century: Integration and Division । Westport: Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 35। আইএসবিএন 0275968146।
- ↑ Forrester, Katrina (১৮ নভেম্বর ২০১৯)। "The crisis of liberalism: why centrist politics can no longer explain the world"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২২।
- ↑ Bobbio, Norberto (১৯৯৬)। Cameron, Allan, সম্পাদক। Left and Right: The Significance of a Political Distinction। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-06245-7। ওসিএলসি 35001802।
- ↑ "UK Politics — What is the Third Way?"। BBC News। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৯।
- ↑ Hassan, Mirza (২৮ জুন ২০১২)। "Survey: Imran Khan most popular leader of Pakistan"। TheNewsTribe.com। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ "elections.com.pk"। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ Saifi, Sophia; Raja, Adeel; Dewan, Angela (২৮ জুলাই ২০১৮)। "Imran Khan's party wins Pakistan election but falls short of majority"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ Nazneen, Sohela (মার্চ ২০০৯)। "Bangladeshr Political Party Discourses and Women's Empowerment"। South Asian Journal (24): 44–52। আইএসএসএন 1729-6242।
- ↑ "Bangladesh: Political Trends and Key Players" (পিডিএফ)। Observer Research Foundation।
- ↑ "Political Parties" (পিডিএফ)। National Council of Educational Research and Training। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০২১।
- ↑ Cabestan, Jean-Pierre; deLisle, Jacques, সম্পাদকগণ (২০১৩)। Inside India Today (Routledge Revivals)। Routledge। আইএসবিএন 978-1-135-04823-5।
... were either guarded in their criticism of the ruling party — the centrist Indian National Congress — or attacked it almost invariably from a rightist position. This was so for political and commercial reasons, which are explained, ...
- ↑ Lakshmi, Rama (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "No soft Hindutva, no Left Revolution, Kejriwal establishing a new centre in Indian politics"। ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Maharashtra: The political crisis brewing in India's richest state"। BBC News। ২৩ জুন ২০২২। ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Centrist Polity, Decentred Politics"। Economic and Political Weekly: 7–8। ৫ জুন ২০১৫।
- ↑ Nageshwar, Prof K (২৭ মে ২০১৭)। "Tumultuous transition"। The Hans India। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Makkal Needhi Maiam declares 70 candidates"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ মার্চ ২০২১। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।