কুডিয়াট্টম বা কুটিয়াট্টম হল ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-নাট্য শিল্প পরিবেশনা। এটি সঙ্গম যুগের একটি প্রাচীন শিল্প পরিবেশনা কুথুর উপাদানের সাথে প্রাচীন সংস্কৃত নাট্যের সংমিশ্রণ। কুডিয়াট্টম আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনেস্কো কর্তৃক মানবতার মৌখিক এবং অধরা ঐতিহ্যের সেরা শিল্পকর্ম হিসাবে স্বীকৃত। [১] [২]

Koodiyattam Performance.
কুডিয়াট্টম

মালয়ালম ভাষায় কুডিয়াট্টম কথার অর্থ হলসম্মিলিত অভিনয়। ঐতিহ্যগত কুথুর উপাদানগুলির সাথে সংস্কৃত নাট্যের পরিবেশনাকে একত্রিত করে এর উতপত্তি হয়েছে। কুডিয়াট্টম ঐতিহ্যগতভাবে মন্দিরের নাট্যমঞ্চে পরিবেশিত হয়। কেরালায় মন্দিরের নাটমঞ্চ কুথাম্বলাম নামে পরিচিত। এটি একমাত্র প্রাচীন সংস্কৃত নাট্যশিল্প যা বর্তমানেও জীবিত আছে। এই শিল্পের মাধ্যমে কেরালায় এক হাজার বছরের ইতিহাস নথিভুক্ত করা হয়েছে। কুডিয়াট্টম এবং চাকিয়ার কুথু ছিল প্রাচীন ভারতের মন্দিরের বিশেষ করে কেরালার নাটকীয় নৃত্য পূজা সেবার অন্যতম এক পদ্ধতি। কুডিয়াট্টম এবং চাকিয়ার কুথু উভয়েরই উৎপত্তি প্রাচীন শিল্পরূপ কুথু থেকে, যা সঙ্গম সাহিত্যে এবং পরবর্তী পল্লব, পান্ডিয়ান, চেরা এবং চোল যুগের লিখিত নথিতে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

কুডিয়াট্টম অভিনয়শিল্পী কপিলা বেণু

বাদ্যযন্ত্র সম্পাদনা

 
মিজভানে রাখা মিজভানা (একটি কাঠের বাক্স বিশেষ করে মিজভানু রাখার জন্য তৈরি)

ঐতিহ্যগতভাবে, কুডিয়াট্টমে ব্যবহৃত প্রধান বাদ্যযন্ত্রগুলি হল মিঝাভু, কুঝিতালম, এডাক্কা, কুরুমকুজল এবং শঙ্খ । এর মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র হল একটি তাল যন্ত্র যা আম্বালাভাস নাম্বিয়ার বর্ণের একজন ব্যক্তি বাজান, যার সাথে নাঙ্গিয়ারম্মা কুঝিথালাম (এক ধরনের করতাল) বাজানো হয়।

নৃত্য শৈলী সম্পাদনা

 
কুডিয়াট্টম গুরু মণি মাধব চাক্যর "রাবণ" হিসাবে

ঐতিহ্যগতভাবে চকিয়াররা (কেরালার হিন্দুদের একটি উপজাতি ) এবং নাঙ্গিয়ারম্মারা ( আম্বালাবাসী নাম্বিয়ার বর্ণের মহিলা) কুডিয়াট্টম নৃত্য পরিবেশন করে। কুডিয়াট্টম কথার অর্থ হল একই সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজানো ও অভিনয় পরিবেশন করা। মঞ্চে একাধিক অভিনেতারা মিজাভু বাজনার তালে তালে অভিনয় করে। বিকল্পভাবে, এটি সংস্কৃত নাটকের একটি সাধারণ অনুশীলনের উদাহরন[৩]

এই নৃত্য নাট্য পরিবেশনার প্রধান অভিনেতা হলেন একজন চকিয়ার পুরুষ শিল্পী যিনি মন্দিরের কুথাম্বলামে (মন্দিরের নাটমঞ্চ) আচারিক কুথু এবং কুডিয়াট্টম পরিবেশন করেন। চকিয়ার নারী শিল্পীদের এতে অংশগ্রহণের অনুমতি নেই। পরিবর্তে, নাঙ্গিয়ারম্মারা কুডিয়াট্টমের নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। কুডিয়াট্টম পরিবেশনা অত্যন্ত দীর্ঘ এবং বিস্তৃত হয়, যা ১২ থেকে ১৫০ ঘন্টা অবধি বেশ কয়েকটি রাত জুড়ে উপস্থাপিত হয়। একটি সম্পূর্ণ নৃত্য নাট্য পরিবেশনা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে প্রথমটি হল পুরপ্পাদু যেখানে একজন অভিনেতা নৃত্যের সাথে একটি শ্লোক পরিবেশন করেন। এর পরের অংশ নির্বাহনম যেখানে অভিনেতা অভিনয় ব্যবহার করে নাটকের প্রধান চরিত্রের পটভূমি উপস্থাপন করেন। এরপরে প্রকৃত নাটক শুরু হয়। পরিবেশনার চূড়ান্ত অংশটি হল কুডিয়াট্টম, যা নিজেই একটি একক নাটক। প্রথম দুটি অংশ পুরপ্পাদু এবং নির্বাহনম একক শিল্পীর অভিন্যের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় কিন্তু কুডিয়াট্টম পর্বে মঞ্চে অভিনয় ও নৃত্য উপস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকজন নৃত্য-নাট্য অভিনেতা ও কলাকুশলীদের প্রয়োজন হয়। [৪]

চকিয়ার সম্প্রদায়ের প্রবীণরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের তরুণদের এই শিল্পকর্ম শেখাতেন। ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত এই শিল্পকর্ম শুধুমাত্র চকিয়ারদের দ্বারা সঞ্চালিত হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে, গুরু মণি মাধব চাক্যর প্রথমবারের মতো মন্দিরের বাইরে কুডিয়াট্টম পরিবেশন করেন, যার জন্য তিনি কট্টর চাক্যর সম্প্রদায়ের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন।

১৯৬২ সালে, শিল্প ও সংস্কৃত পণ্ডিত ভি. রাঘবনের নেতৃত্বে, মাদ্রাজের সংস্কৃত রাঙ্গা গুরু মণি মাধব চাক্যরকে চেন্নাইতে কুডিয়াট্টম পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এইভাবে ইতিহাসে প্রথমবার কেরলের এই শিল্পকলা রাজ্যের বাইরের কোনো অঞ্চলে পরিবেশিত হয়েছিল। তারা অভিষেক, সুভদ্রাধনঞ্জয়া এবং নাগন্দা নাটক সহকারে তিন রাতের বেশি সময় ধরে কুডিয়াট্টম নৃত্য-নাট্য উপস্থাপন করেছিল।

 
কুডিয়াট্টম মুখের মেকআপ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "UNESCO – Kutiyattam, Sanskrit theatre"ich.unesco.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২১ 
  2. https://ich.unesco.org/doc/src/00264-EN.pdf [অনাবৃত ইউআরএল পিডিএফ]
  3. Shulman, David। "Creating and Destroying the Universe in Twenty-Nine Nights"The New York Review of Books। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. "All at home"The Hindu। ১৩ জুলাই ২০১২।