কাসাসুল কুরআন
কাসাসুল কুরআন (উর্দু: قصص القرآن) ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত হিফজুর রহমান সিওহারভির উর্দু ভাষায় রচিত একটি বই। এটি তার সবচেয়ে জনপ্রিয় রচনা। কাসাসুল কুরআন শব্দের অর্থ কুরআনের গল্প। কুরআনে বর্ণিত গল্পসমগ্র এই গ্রন্থের মূল ভিত্তি। এটি ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত মোট ৪ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে এর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
![]() মূল সংস্করণের প্রচ্ছদ | |
লেখক | হিফজুর রহমান সিওহারভি |
---|---|
মূল শিরোনাম | উর্দু: قصص القرآن |
অনুবাদক | ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | উর্দু |
বিষয় | নবীগণের জীবন কাহিনী |
প্রকাশিত | ১৯৪১ – ১৯৪৫ |
প্রকাশক | নাদওয়াতুল মুসান্নিফীন |
মিডিয়া ধরন | শক্তমলাট |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১৭৮৪ |
আইএসবিএন | ৯৮৪০৬০৭৪৪৮ বাংলা সংস্করণ |
ওসিএলসি | ৮১০৯১৮৭৫৯ |
এলসি শ্রেণী | বিপি১৩০.৫৮.এইচ৫ |
প্রেক্ষাপট সম্পাদনা
কুরআনে বর্ণিত গল্পসমগ্র পূর্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তাদের সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে গল্পগুলো বিকৃত করেছিল। তারা চিরকুমারী মরিয়মকে অপমান, দাউদকে দোষারোপ ও ঈসাকে খোদার আসনে আসীন করেছিল। কুরআনের বর্ণনায় এসব অস্বীকার করা হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে প্রাচ্যবাদীরা কুরআনে প্রকাশিত গল্প নিয়ে আবার সন্দেহ প্রকাশ করে। এই পটভূমিতে লেখক এই অভিযোগগুলো খণ্ডন করা এবং পাঠকদের মন শুদ্ধ করাকে নিজের উপর অপরিহার্য দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তার মূল লক্ষ্য হল গল্পের নৈতিকতার দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে মুসলমানরা উভয় জগতে সাফল্যের জন্য একটি সঠিক পথ (ইসলামি জীবন পদ্ধতি) গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।[১]
বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা
গ্রন্থের শুরুতে লেখক গ্রন্থটির কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। যথা:[২]
- এতে কুরআনকেই সমস্ত ঘটনার ভিত্তি বানানো হয়েছে। বিশুদ্ধ হাদিস ও ইতিহাসের ঘটনাবলির আলোকে সেগুলো ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
- ইতিহাস ও বাইবেলের পুস্তকসমূহ এবং কুরআনের মধ্যে যদি বিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে হয়তো দলিল ও প্রমাণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে নয়তো কুরআনের সত্যতাকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত করা হয়েছে।
- ইসরাইলি কল্পকাহিনি এবং বিরুদ্ধবাদীদের অভিযোগসমূহের অসারতাকে সত্যের আলোকে প্রকাশ করা হয়েছে।
- বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাফসিরমূলক, হাদিসমূলক ও ঐতিহাসিক সন্দেহ ও জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর পূর্ববর্তী উলামাদের মতাদর্শ অনুসারে তার সমাধান পেশ করা হয়েছে।
- প্রত্যেক নবীর অবস্থা কুরআনের কোন কোন সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোকে একটি নকশার আকারে এক জায়গায় দেখানো হয়েছে।
- এসব ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে "উপদেশ ও শিক্ষা" শিরোনামে ঘটনাটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য ও আসল লক্ষ্য, অর্থাৎ শিক্ষা ও উপদেশের বিষয়টিকে বিশেষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
গঠন সম্পাদনা
গ্রন্থটি চার খণ্ডে বিভক্ত। ১ম খণ্ডে ১৩ জন নবীর আলোচনা এসেছে। তারা হলেন: আদম, নূহ, ইদ্রিস, হাউদ, সালেহ, ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, লুত, ইয়াকুব, ইউসুফ, শোয়েব এবং মুসা। ২য় খণ্ডে আছে ১২ জন নবীর আলোচনা। যথা: ইউশা, হিজকিয়েল, ইলিয়াস, আল ইয়াসা, শামভেল, দাউদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইউনুস, যুল কিফল, ওজাইর এবং জাকারিয়া। ৩য় খণ্ডে কুরআনের ১২টি ভিন্ন ভিন্ন গল্প এসেছে। যেমন: আসহাবে কাহাফ, আসহাবে ফিল, আসহাবে সবত, আসহাবে রাস, আসহাবে উখদুদ, ইরামের বন্যা, হাকিম লুকমান, যুল কারনাইন এবং আল কুদস। ৪র্থ খণ্ডটি ইসা এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য নিবেদিত।[১]
অনুবাদ সম্পাদনা
শাকির রিজওয়ানি এবং খালিদ মাহমুদ দুই খণ্ডে গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেন, যা ২০০৬ সালে পাকিস্তানের ইদারা ইসলামিয়াত লাহোর প্রকাশিত হয়।[১] গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।[২]
মূল্যায়ন সম্পাদনা
বইটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় বহু বছর ধরে সক্রিয় মাওলানা হিফজুর রহমান একাডেমির সচিব বাহজাত নাজমি বলেছেন,[১]
“ | ইসলামের নবীদের নিয়ে লিখিত কাসাসুল কুরআনই হল একমাত্র প্রামাণিক কাজ যা এশিয়া উপমহাদেশে হয়েছে। এমনকি যারা মাওলানার মতাদর্শের সাথে ভিন্ন হতে পারে, তারাও একমত যে তার এই কাজটি সত্যিই পড়ার যোগ্য। | ” |
আরও দেখুন সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ হিজাজি, আবু তারিক (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Maulana Hifzur Rahman and his Qasas-ul-Qur'an" [মাওলানা হিফজুর রহমান ও তার কাসাসুল কুরআন]। আরব নিউজ।
- ↑ ক খ সিওহারভি, হিফজুর রহমান (২০০৩)। কাসাসুল কুরআন (পিডিএফ)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ০৫। আইএসবিএন 9840607448।
- Usmani, Taqi (২০০৫)। Tabsre (উর্দু ভাষায়)। Pakistan: Maktaba Ma'ariful Quran। পৃষ্ঠা 374।
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- গুগল বইয়ে কাসাসুল কুরআন
- কাসাসুল কুরআন–এর বাংলা সংস্করণ
- কাসাসুল কুরআন–এর উর্দু সংস্করণ
- কাসাসুল কুরআন–এর ইংরেজি সংস্করণ