কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম (হিন্দি: क़राक़रम दर्रा; সরলীকৃত চীনা: 喀喇昆仑山口; প্রথাগত চীনা: 喀喇崑崙山口; ফিনিন: Kālǎkūnlún Shānkǒu) ভারতচীনের মধ্যে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত একটি গিরিবর্ত্ম।

কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম
উচ্চতা৫,৫৪০ মিটার[]
Traversed byরবার্ট শ (১৮৬৮)
ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড (১৮৮৯)
অবস্থান ভারত লাদাখ /  গণচীন
পর্বতশ্রেণীকারাকোরাম পর্বতশ্রেণী
স্থানাঙ্ক৩৫°৩০′৪৮″ উত্তর ৭৭°৪৯′২৩″ পূর্ব / ৩৫.৫১৩৩৩° উত্তর ৭৭.৮২৩০৬° পূর্ব / 35.51333; 77.82306
কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম জম্মু ও কাশ্মীর-এ অবস্থিত
কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম
কারাকোরাম গিরিবর্ত্মের অবস্থান

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ওই গিরিপথ ব্যবহৃত হয়ে আসছে লাদাখের লেহ্‌ থেকে তারিম উপত্যকার ইয়ারকন্দের মধ্যে যাতায়াতের জন্য। ঐতিহাসিক গিরিপথের ও পারেই ইয়ারকন্দ, কাশগড়, খোটান, শাহিদুল্লার মতো একের পর এক ঐতিহাসিক জনপদ। তারিম উপত্যকা তথা ইয়ারকন্দ এখন কমিউনিস্ট চিনের শাসনাধীন। আর লেহ্‌ তথা লাদাখ ভারতের অংশ। তাই আগের সেই অবাধ যাতায়াত বহু যুগ ধরেই বন্ধ।

ভৌগোলিক অবস্থান

সম্পাদনা

কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাদাখ-এর লেহ জেলাচীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াং প্রদেশের মধ্যে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীতে ৩৫°৩০′৪৮″ উত্তর ৭৭°৪৯′২৩″ পূর্ব / ৩৫.৫১৩৩৩° উত্তর ৭৭.৮২৩০৬° পূর্ব / 35.51333; 77.82306 স্থানাঙ্কে অবস্থিত। [] সিয়াচেনের উত্তর-পূর্ব কোনায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৫৪০ মি অথবা ১৮,১৭৬ ফু উচ্চতায় অবস্থান।

ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

সম্পাদনা

কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ও চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সীমান্তের ওপর অবস্থিত হওয়ায় এই গিরিবর্ত্মের রাজনৈটিক গুরুত্ব অপরিসীম। ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে ভারতের জন্য দুর্বল বিন্দু ছিল শুধুমাত্র কারাকোরাম পাস। আর চিনের জন্য সুবিধাজনক বিন্দুও ছিল ওটাই। কারণ কারাকোরাম পাসের ঠিক দক্ষিণে লাদাখের যে অংশ, সেই এলাকা এতই জনবিরল এবং মরুভূমি সদৃশ যে, বাহিনী মোতায়েন রাখার পক্ষে ওই এলাকা মোটেই অনুকূল ছিল না। কিন্তু কারাকোরাম পাসের উত্তরে তারিম অববাহিকা বা কারকাশ উপত্যকার ভূপ্রকৃতি এবং আবহাওয়া অনেকটাই সহনীয়। ওই অঞ্চলে বাহিনী রাখা বা ওই অঞ্চল দিয়ে দ্রুত কারাকোরাম পাস পেরিয়ে আসা অপেক্ষাকৃত ভাবে সহজ। নিজেদের জন্য এই সুবিধাজনক পরিস্থিতিটা কোনও ভাবে বদলে যাক, তা চিন চায়নি।

গিরিবর্ত্মের ঠিক পশ্চিম দিকে অবস্থিত সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলের অধিকারের ওপর ভারতপাকিস্তানের দ্বন্দ্ব এর গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে চীনপাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত চুক্তিতে কারাকোরাম গিরিবর্ত্মকে ভারত, পাকিস্তানচীনের সীমান্তের সংযোগবিন্দু বলে উল্লেখ করা হলেও ভারত এই চুক্তিতে অংশগ্রহণ করেনি।[] বর্তমানে এই সংযোগবিন্দু কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম থেকে ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমে সিয়াচেন মুজতাঘ পর্বতশ্রেণীর পশ্চিম ইন্দিরা টোলের নিকটে যে স্থানে প্রকৃত ভূমি অবস্থান রেখা ভারত-চীন সীমান্তের সাথে মিলিত হয়, সেই স্থানে অবস্থিত।

পরিকাঠামো উন্নয়ন

সম্পাদনা

কারাকোরাম পাসের উত্তরে অর্থাৎ চিনা এলাকায় রাস্তাঘাট এবং পরিকাঠামো অনেক দিন আগেই উন্নত করে নিয়েছে চিন। কিন্তু পাসের দক্ষিণে ভারতের পরিকাঠামো এত দিন অনুন্নতই ছিল। ফলে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারত চাইলেই কারাকোরামের গিরিপথ দিয়ে হানা দিতে পারবে না, কিন্তু চিন চাইলেই ওই গিরিপথ দিয়ে দক্ষিণ চলে আসতে পারবে— এই ভাবনা স্বস্তি দিত বেজিংকে। ভারতের নতুন রাস্তা বেজিঙের সেই স্বস্তি গায়েব করে দিচ্ছে ।

ভারতে দারবুক থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি পর্যন্ত ২৫৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ । ওই রাস্তায় একাধিক সেতু বানাতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় যে সেতু, সেটা তৈরি হয়েছে শিয়ক নদীর উপরে। ২০১৯-এর অক্টোবরে সেই সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এই রাস্তা পৌঁছে গিয়েছে কারাকোরাম পাসের খুব কাছে। চিনের অস্বস্তি সেখানেই। এ বার ওল্ডি থেকে কারাকোরাম পাস পর্যন্ত ১৭-১৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে ফেললেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। অনেক রকম ভাবেই এই কাজকে আটকানোর চেষ্টা করছিল চীন ।

দৌলত বেগ ওল্ডি

সম্পাদনা

এটি একটি সামরিক ঘাঁটি। সুপ্রাচীন কাল থেকে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন চাগতাই খানাত পরবর্তী মোগলিস্তান-এর উত্তরসূরি কাশগর এর ইয়ারখন্ট খানাত এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুলতান সাঈদ খান। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর-এর সমসাময়িক। তিনি ১৫৩৩ সালে দুঘলাত শাসক মির্জা আবু বকর দুঘলাতকে পরাজিত করে ইয়ারখন্ট ফেরার পথে এখানে মৃত্যু বরণ করেন।

দৌলত বেগ ওল্ডিতে ভারত বিমানঘাঁটিও বানিছে । এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ এয়ারস্ট্রিপ। ১৯৬২ সালে জুলাই মাসে এয়ার মার্শাল চন্দ্র কান্ত শান্তারাম রাজে মার্কিন সংস্থা ফায়ারচাইল্ড নির্মিত সামরিক পরিবহন বিমান সি -৮২ প্যাকেট এই ঘাঁটিতে প্রথমবার সফল অবতরণ করেন।[]

২০০৮ সাল থেকে বর্তমানে দুই টারবাইন ইঞ্জিন চালিত আন্তোনোভ এন-৩২ বিমান এই ঘাঁটিতে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। ২০১৩ সালে চার টারবাইন ইঞ্জিন চালিত সি-১৩০জে হারকিউলিস অবতরণ করে , যা এন-৩২ এর ২.৫ গুন বেশি ক্ষমতার বিমান।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Karakoram Pass Height" 
  2. "Pass to better relations with China"। India: The Hindu। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৩ 
  3. Anderson, Ewan W. (২০০৩)। International Boundaries: A Geopolitical AtlasRoutledge। পৃষ্ঠা 180। আইএসবিএন 978-1-57958-375-0 
  4. "Raje's Brilliancy" 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা
  • Schmidt, Jeremy. Himalayan Passage: Seven Months in the High country of Tibet, Nepal, China, India & Pakistan. 1991. The Mountaineers Books, Seattle.