কামরুল ইসলাম সিদ্দিক

বাংলাদেশি প্রকৌশলী

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক (২০ জানুয়ারি ১৯৪৫ - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ।[১] তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন।[২] তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামোর রূপকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।[২] প্রকৌশলে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[৩]

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক
কামরুল ইসলাম সিদ্দিক.png
জন্ম(১৯৪৫-০১-২০)২০ জানুয়ারি ১৯৪৫
মৃত্যু১ সেপ্টেম্বর ২০০৮(2008-09-01) (বয়স ৬৩)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
পুরস্কারবাংলা একাডেমি ফেলো (২০০৭)

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

কামরুল ইসলাম ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতার নাম নূরুল ইসলাম সিদ্দিক এবং মাতা বেগম হামিদা সিদ্দিক। কামরুল এই দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তিনি কুষ্টিয়াতে প্রাথমিক ও ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪][৫] ১৯৭৭ সালে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৪]

কর্মজীবনসম্পাদনা

কামরুল ইসলাম ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[২] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৩০ এপ্রিল যুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকৌশলী হিসেবে তিনি মুক্তি বাহিনীকে সহায়তা প্রদানে বিভিন্ন রাস্তা ও সেতুর নকশা প্রণয়ন করে যুদ্ধের অপারেশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।[২] ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে পল্লী কর্মসূচির উপ-প্রধান প্রকৌশলী এবং পরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের আওতায় নগর নির্মাণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন।[২] ১৯৯২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী ব্যুরোতে প্রকৌশল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত সংস্কার সাধন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি এর প্রধান ছিলেন।[৪]

১৯৯৯ থেকে ২০০০ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ২০০০ সালে যমুনা সেতু ডিভিশন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ২০০০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[৪]

তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৪ মেয়াদে গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ-দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চেয়ায়পার্সন ছিলেন।[৪]

ব্যক্তিগত জীবনসম্পাদনা

কামরুল ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে সাবেরা সিদ্দিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[২] এই দম্পতির এক ছেলে এবং তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।[২] কামরুল ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ৬৩ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন৷[২]

সম্মাননাসম্পাদনা

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাংক কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে ১৯৯৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশন’ কর্তৃক বর্ষসেরা ব্যক্তি ঘোষণা করেন।[২] তার উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে:[২]

  • ভাসানী স্বর্ণপদক (১৯৯৫)
  • কবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯৫)
  • আইইবি স্বর্ণপদক (১৯৯৮)
  • সিআর দাস স্বর্ণপদক (১৯৯৯)
  • আব্বাস উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯৯)
  • শেরেবাংলা স্বর্ণপদক (২০০০)
  • বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী স্বর্ণপদক (২০০০)
  • জাইকা মেরিট অ্যাওয়ার্ড (২০০০)
  • যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ফেলোশিপ
  • বাংলা একাডেমি ফেলো (২০০৭)

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "একজন ক্ষণজন্মা অসাধারণ মানুষ কামরুল"বাংলানিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  2. "এক নজরে প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক"স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  3. "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা"banglaacademy.org.bd। বাংলা একাডেমি। ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "ENGR. QUAMRUL ISLAM SIDDIQUE"buet.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  5. "কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ ও কর্মবীর"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০